মাস্টারকার্ড এবং দেশের গার্মেন্টস প্রস্তুতকারকদের সংগঠন ‘বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারস অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন’ (বিজিএমইএ) প্রথমবারের মতো গত বুধবার (১৬ নভেম্বর) বিজিএমইএ- এর এক্সিকিউটিভদের জন্য কো-ব্র্যান্ডেড ক্রেডিট কার্ড এবং তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মীদের (আরএমজি) জন্য প্রিপেইড কার্ড চালু করেছে।
এ উদ্যোগের ফলে তৈরি পোশাকশিল্পের কর্মীদের বেতন প্রিপেইড কার্ড-এর মাধ্যমে প্রদান করা যাবে, যার মাধ্যমে প্রায় ৪৫ লাখ পোশাক কর্মীকে বৃহৎ পরিসরে আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় নিয়ে আসার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। প্রিপেইড কার্ড-এর জন্য ইস্যুকারী ব্যাংক হচ্ছে, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড (এসইবিএল) এবং ক্রেডিট কার্ড-এর জন্য ইস্যুকারী ব্যাংক মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (এমটিবি)।
বিজিএমইএ-এর তালিকাভুক্ত পোশাককর্মীরা পাবেন ‘এসইবিএল মাস্টারকার্ড প্রিপেইড কার্ড’, যেটির মাধ্যমে নগদ অর্থের তুলনায় আরও সহজে, নিরাপদ এবং স্মার্টভাবে তারা অর্থ লেনদেন করতে পারবেন। এসইবিএল-এ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খোলার কোনো ঝামেলা ছাড়াই এই কার্ডটি নিয়ে খুব সহজেই ডিজিটাল পেমেন্ট সল্যুশন পাবেন পোশাক কর্মীরা।
বিজিএমইএ-এর এক্সিকিউটিভ’দের জন্য চালু হওয়া ‘এমটিবি মাস্টারকার্ড ওয়ার্ল্ড ক্রেডিট কার্ড’ এ রয়েছে বিশেষ সুবিধা সমূহ ও ফিচার; যার মাধ্যমে কার্ডহোল্ডাররা সহজেই দেশের ও দেশের বাইরে লেনদেন করতে পারবেন। কার্ডটি কার্ডহোল্ডারদের আরও দিচ্ছে, এটির ‘ডুয়েল ইন্টারফেস ফিচার’-এর মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে ‘কন্টাক্ট’ ও ‘কন্টাক্টলেস’ লেনদেনের সুযোগ, যেটিতে রয়েছে প্রথম বছরের জন্য বার্ষিক ‘ফি’ মওকুফ সহ, ‘এটিএম’, ‘পিওএস’, ‘কিউআর’ সাপোর্ট এবং ই-কমার্স পেমেন্ট সুযোগ। এছাড়া, ‘এমটিবি মাস্টারকার্ড ওয়ার্ল্ড ক্রেডিট কার্ড’ ‘লাউঞ্জকি’-এর আওতায় বিশ্বের প্রিয় ১১০০ এরও বেশি এয়ারপোর্ট লাউঞ্জ এবং বাংলাদেশের সকল প্রধান বিমানবন্দরে কার্ডহোল্ডারদের দিচ্ছে ‘এমটিবি এয়ার লাউঞ্জে’-এ কমপ্লিমেন্টারি প্রবেশ সুবিধা; যেসব সুযোগ ও সুবিধাগুলো মাস্টারকার্ড এর ওয়ার্ল্ড ও প্লাটিনাম ক্রেডিট কার্ড এর কার্ডহোল্ডাররা ১১০০+ এয়ারপোর্ট লাউঞ্জে পেয়ে থাকেন।
আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কো-ব্র্যান্ডেড কার্ড দুটি উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন- বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, বিজিএমইএ’র প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান, মাস্টারকার্ড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (এমটিবি)-এর এমডি অ্যান্ড সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান, সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড(এসইবিএল)-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম. কামাল হোসেন, এবং বিজিএমইএ- এর সাবেক সব প্রেসিডেন্টসহ প্রতিষ্ঠান সমূহের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সবচেয়ে বেশি অবদান তৈরি পোশাক-খাতের, প্রবৃদ্ধি ও বৈদেশিক রপ্তানি আয়ের বিবেচনায় ২০২২ অর্থবছরে জিডিপি-এর প্রায় ৯ শতাংশ এবং মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮২ শতাংশ এসেছে এই খাতে। এছাড়া, ৯০ শতাংশের বেশি পোশাককর্মীরা হচ্ছেন নারী, যেটি দক্ষিণ এশিয়ার সর্বোচ্চ অনুপাত। সুবিধাবঞ্চিতদের আর্থিকভাবে স্বনির্ভর করার সুযোগ প্রদানের মাধ্যমে নারী ক্ষমতায়নে এই খাতটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বিশেষ এই কার্ডটি চালুর জন্য মাস্টারকার্ড ও বিজিএমইএ-এর এই উদ্যোগ পোশাক শিল্পখাতে গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক হিসেবে বিবেচিত হবার পাশাপাশি পোশাককর্মীদের মাঝে ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতি বিস্তারে ভূমিকা রাখবে।
বিজিএমইএ-এর প্রেসিডেন্ট ফারুক হাসান বলেন, তৈরি পোশাক শিল্প প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। রপ্তানিতে বড় প্রবৃদ্ধি, বৈদেশিক মুদ্রা আয় ও দেশের অর্থনীতি গতিশীল রাখতে পোশাককর্মীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছেন। এই উদ্যোগের জন্য মাস্টারকার্ডের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি এবং পোশাককর্মীদের ডিজিটাল ফিনান্সিয়াল সিস্টেমে অন্তর্ভুক্তির লক্ষ্যে এগিয়ে আসার জন্য ধন্যবাদ জানাই এমটিবি এবং এসইবিএল ব্যাংককেও।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক লিমিটেড (এমটিবি)-এর এমডি অ্যান্ড সিইও সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, মাস্টারকার্ডকে সাথে নিয়ে কো-ব্র্যান্ডেড বিজিএমইএ এমটিবি মাস্টারকার্ড ওয়ার্ল্ড ক্রেডিট কার্ড-এর ঘোষণা দিতে পেরে এমটিবি গর্বিত। আমরা বিশ্বাস করি, এই যৌথ উদ্যোগের মাধ্যমে বিজিএমইএ-এর এক্সিকিউটিভ’রা বিশ্বজুড়ে বিশেষ অফার পাবেন। ভবিষ্যতেও মাস্টারকার্ড-এর সাথে এ ধরনের আর্থিক সেবা চালু করতে আমরা আগ্রহী।
সাউথইস্ট ব্যাংক লিমিটেড (এসইবিএল)-এর ম্যানেজিং ডিরেক্টর এম. কামাল হোসেন বলেন, মাস্টারকার্ড এবং বিজিএমইএ এর সাথে এই কো-ব্র্যান্ড উদ্যোগ বাস্তবায়িত করতে পেরে সাউথইস্ট ব্যাংক আনন্দিত। আমি বিশ্বাস করি ‘এসইবিএল মাস্টারকার্ড প্রিপেইড কার্ড’ সফলভাবে বিজিএমইএ কর্মীদের নির্বিঘ্ন ও ঝামেলাহীন পেমেন্ট সল্যুশন প্রদানের মাধ্যমে তাদের আর্থিক অন্তর্ভুক্তিতে যুক্ত করবে।
মাস্টারকার্ড বাংলাদেশ-এর কান্ট্রি ম্যানেজার সৈয়দ মোহাম্মদ কামাল বলেন, মাস্টারকার্ড বিশ্বাস করে নতুন এই কার্ডগুলো পোশাক শিল্পখাতে ডিজিটাল পেমেন্ট পদ্ধতির ব্যবহার ত্বরান্বিত করবে। এই উদ্যোগের উদ্দেশ্য যেসব কর্মীদের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট নেই তাদেরও আর্থিক অন্তর্ভুক্তির আওতায় আনা। সুবিধাবঞ্চিত পোশাক শিল্পখাতের কর্মীদের জন্য আরও কার্যকর পেমেন্ট অপশন নিশ্চিত করতে বিজিএমইএ-এর সঙ্গে এই যৌথ উদ্যোগ নিতে পেরে মাস্টারকার্ড গর্বিত; এই পদক্ষেপ বিজিএমইএ-এর অফিসিয়ালদের অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা দেবার পাশাপাশি পিছিয়ে পড়া পোশাক কর্মীদের এই কার্ড ব্যবহারের মাধ্যমে ক্যাশলেস লেনদেনের সক্ষমতাও প্রদান করবে।
এএ