গত ৬ নভেম্বর মিসরের শারম আল শাইখে শুরু হয়েছে জাতিসংঘের জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলন কপের ২৭তম আসর। আজ শুক্রবার সম্মেলন শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা এক দিন বাড়ানো হয়েছে। অর্থাৎ সম্মেলন আগামীকাল শনিবার শেষ হবে।
শুক্রবার (১৮ নভেম্বর) দরিদ্র দেশগুলোর জন্য ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল দিতে সম্মত হয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের সম্মেলনে উন্নয়শীল দেশগুলোর অন্যতম দাবি ছিল ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল। অবশেষে সে বিষয়ে সম্মত হয়েছে ইইউ। আজ অধিবেশন শুরুর দিকেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষে ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলের প্রস্তাব তুলে ধরেন ইউরোপীয় কমিশনের ভাইস প্রেসিডেন্ট ফ্রান্স টিমারম্যানস।
ধনী দেশগুলো ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিলের বিপক্ষে যুক্তি দিয়ে আসছিল। তাদের যুক্তি ছিল, এটি অনেক সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এটি আদৌ প্রয়োজন কি না এবং এটি কীভাবে বাস্তবায়ন হবে তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তাঁরা।
আজ সকালে ফ্রান্স টিমারম্যানস বলেন, ‘এবারের সম্মেলনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর অন্যতম দাবি ছিল ‘‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল। ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাঁদের দাবি শুনেছে। আমরা এই তহবিলের বিষয়ে অনিচ্ছুক ছিলাম। অনিচ্ছুক থাকার কারণ আমরা আমাদের অভিজ্ঞতা থেকে জানি একটি তহবিল প্রতিষ্ঠা সময়সাপেক্ষ বিষয় এবং এটি বাস্তবায়ন করা আরও সময়সাপেক্ষ বিষয়। আর বর্তমান তহবিল দিয়েই অগ্রসর হওয়া সম্ভব। কিন্তু “লস অ্যান্ড ড্যামেজ” তহবিলের সঙ্গে যেহেতু উন্নয়নশীল দেশগুলো (জি-৭৭) রয়েছে এবং তাঁদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে আমরা সম্মত হয়েছি। তবে যেকোনো তহবিলের বিষয়ে ‘‘স্পষ্ট শর্ত’’ যুক্ত করা হবে।’
উল্লেখ্য, ‘লস অ্যান্ড ড্যামেজ’ তহবিল হলো জলবায়ুর চরম বিপর্যয়ের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত ভৌত ও সামাজিক অবকাঠামো বিনির্মাণ ও জলবায়ু সম্পর্কিত দুর্যোগের পর উদ্ধারে প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিপদগ্রস্ত দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে কপের এবারের আসরের স্লোগান ঠিক করা হয়েছে ‘বাস্তবায়নে সবার অংশগ্রহণ’। উন্নয়নশীল দেশগুলো এখন উন্নত দেশগুলোর কাছ থেকে নিশ্চিত ক্ষতিপূরণ চায়। কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য ঐতিহাসিকভাবে মূলত উন্নত দেশগুলোই দায়ী।
বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুসারে, গত বছর গ্লাসগোতে অনুষ্ঠিত কপ-২৬ সম্মেলনে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দরিদ্র দেশগুলোকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া সম্পর্কিত আলোচনার পথ বন্ধ করে দিয়েছিল ধনী দেশগুলো। এদিকে গত এক বছরে উন্নয়নশীল দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনসংক্রান্ত নানা দুর্যোগের মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে পাকিস্তানের ভয়াবহ বন্যা এবং পূর্ব আফ্রিকায় তীব্র খরা উল্লেখযোগ্য ও ভীতিকর ঘটনা। বাংলাদেশের সিলেটেও চলতি বছর দুই দফা বন্যা এবং সর্বশেষ উপকূলীয় এলাকায় ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের আঘাতে ত্রিশের বেশি প্রাণহানি, প্রচুর ঘরবাড়ি বিধ্বস্ত এবং ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
এএ