মালয়েশিয়ার দশম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিলেন বর্ষীয়ান নেতা আনোয়ার ইব্রাহিম। তবে এর জন্য তাকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হয়েছে।
১৯৯০ এর দশকে তার নাম প্রধানমন্ত্রী হওয়ার তালিকায় শুরুতে থাকলেও তাকে বরখাস্ত করে জেলে পাঠানো হয়।
৭৫ বছর বয়সী এই রাজনীতিবিদ স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার দিকে কুয়ালালামপুরে রাজা সুলতান আবদুল্লাহ আহমাদ শাহর সামনে শপথ নেন
আনোয়ারের পাকাতান হারাপান জোটের জয়ের পর নতুন সরকার গঠনের নিয়ন্ত্রণ নেন রাজা সুলতান আবদুল্লাহ। সম্প্রতি শেষ হওয়া নির্বাচনে জোট সবচেয়ে বেশি আসন জিতলেও সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ১১২টি আসন জিততে পারেনি।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী মুহিদ্দিন ইয়াসিনের বিরোধী সংরক্ষণশীল জোট মালয়-মুসলিম পেরিকাতান ন্যাসিওনাল (পিএন) দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আসন পেয়েছে। দুই পক্ষই সরকার গঠনের আলোচনা শুরু করে। কয়েকটি ছোট জোটও এতে অংশ নেয়।
তবে কোনো সমাধান না আসায় দেশটির রাজা আনোয়ার ও মুহিদ্দিনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। একইসঙ্গে তিনি নবনির্বাচিত সংসদ সদস্যদের সঙ্গেও সাক্ষাৎ করে জানতে চান কারা নতুন সরকারকে নেতৃত্ব দিতে চান।
বৃহস্পতিবার রাজপ্রাসাদে সাক্ষাতের পর রাজা আনোয়ারের নাম ঘোষণা করেন। ২২২ জন সংসদ সদস্যের মত নিয়ে রাজা এই ঘোষণা দেন।
রাজা সুলতান আবদুল্লাহ এক বিবৃতিতে বলেন, কেউই প্রকৃতপক্ষে জয়ী বা পরাজিত হননি। বিবৃতিতে তিনি রাজনীতিবিদদের একসঙ্গে হয়ে দেশের কল্যাণে কাজ করার আহ্বান জানান।
আনোয়ার ইব্রাহিম তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ার শুরু করেন ছাত্র আন্দোলনকারী হিসেবে। তিনি ১৯৭১ সালে মুসলিম ইয়্যুথ মুভমেন্ট অব মালয়েশিয়া প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রামের দারিদ্র্য এবং আর্থসামাজিক বিভিন্ন ইস্যুতে আন্দোলনে অংশ নেন তিনি।
তার কর্মকাণ্ড তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের চোখে পড়লে তাকে ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অরগানাইজেশনে (ইউএনএমও) যোগ দিতে বলেন।
দ্রুতই আনোয়ারের উত্থান ঘটে। তিনি অর্থমন্ত্রী এবং উপ-প্রধানমন্ত্রী হন। ক্যারিশম্যাটিক, উচ্চাকাঙ্ক্ষী এবং সংস্কারমনা হওয়ায় তিনি বেশ খ্যাতি অর্জন করেন।
এশিয়ার অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়ে এলে মাহাথির তাকে নিজের উত্তরসূরি হিসেবে বেছে নেন।
১৯৯৮ সালে আনোয়ারের ওপর দুর্নীতি ও সমকামিতার অভিযোগ আনা হয় এবং বরখাস্ত করা হয়। হাজার হাজার মানুষ কুয়ালামপুরের সড়কে নেমে আসেন। পরে আনোয়ার গ্রেপ্তার হন। পরে ২০০৪ সালে তিনি মুক্ত হলেও সমকামিতার অভিযোগের পুরোনো আন্দোলন পুনরায় গতি পায়।
২০১৮ সালে একেবারে ক্ষমা পাওয়া এবং মুক্ত হওয়ার আগে তাকে ১০ বছরের মতো জেল খাটতে হয়।
এরপর পাকাতান হারাপান জোটের ব্যানারে তিনি আবারও মাহাথিরের সঙ্গে যোগ দেন। মাহাথির তার আশ্বাসে নড়বড় হয়ে ক্ষমতা হস্তান্তর করলে মালয়-মুসলিম কনজারভেশনের চাপ এবং অন্তর্দ্বন্দ্বে পাকাতান হারাপান সরকার ভেঙে পড়ে। এতে আনোয়ারের শীর্ষে যাওয়ার পথ আবারও বন্ধ হয়ে যায়।
এএ