দক্ষিণ কোরিয়ার আইনপ্রণেতারা নাগরিকদের জন্য দেশটির বয়স গণনা পদ্ধতি সংশোধনের জন্য একটি বিল অনুমোদন করেছেন। ফলে দেশে জন্মের পর ৩৫ বছরের বয়সসীমা শেষ হবে। এতে দেশের অধিকাংশ নাগরিকের বয়সও এক বছর কমবে। গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) দক্ষিণ কোরিয়ার পার্লামেন্টে পাস হওয়া বিলটি দেশটির দীর্ঘদিনের ব্যবহৃত 'কোরিয়ান এজ ক্যালকুলেশন' পদ্ধতি বাতিল করবে।
'কোরিয়ান এজ ক্যালকুলেশন' পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত সিস্টেমের চেয়ে এক বা দুই বছরের বেশি বয়সী ছিল। আন্তর্জাতিকভাবে একটি নবজাতক শিশুর বয়স শূন্য থেকে শুরু হয়, শিশুর পরবর্তী জন্মদিন এক বছর, পরবর্তী জন্মদিন দুই বছর ইত্যাদি।
ইউন সুক ইওল এ বছর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারণার সময় বয়স গণনা পদ্ধতি সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক বয়স গণনার এই পদক্ষেপ আগামী জুন থেকে দেশে কার্যকর হতে যাচ্ছে।
ইয়ুনের সরকার জানিয়েছে, কোরিয়ান বয়স গণনা পদ্ধতি বাতিল করলে প্রশাসনিক ও চিকিৎসা সেবায় বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে।
প্রেসিডেন্টের কার্যালয় জানিয়েছে, সংশোধনী পাস হওয়ায় আগামী জুন থেকে দেশের সব নাগরিকের বয়স ১ বা ২ বছর কমবে। নতুন পদক্ষেপ বয়স সংক্রান্ত বিভিন্ন আইনি জটিলতা দূর করবে। দেশে এক বয়স বলে বিদেশে আরেক বয়স বলা দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকদেরও স্বস্তি দেবে।
'কোরিয়ান বয়স গণনা' পদ্ধতি কোরিয়ার জন্য অনন্য নয়। চীন, জাপানসহ এ অঞ্চলের অনেক দেশে এক সময় বয়স গণনার এই পদ্ধতি চালু ছিল। এতে যে কোনো বছরের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত জন্মগ্রহণকারী সমস্ত শিশুকে এক বছর বয়সী হিসাবে বিবেচনা করা হয়। ক্যালেন্ডারের পাতা উল্টাতেই নতুন বছরের জানুয়ারির বয়স হয়ে যেত দুই বছর।
এই প্রক্রিয়ায় ৩১ ডিসেম্বর একটি শিশুর জন্ম হলে সেই দিনে তার বয়স এক বছর হিসেবে বিবেচিত হয়। পরের দিনটি নববর্ষ হওয়ায় আরেকটি বছর যোগ করা হয়। ফলস্বরূপ কোরিয়ান বয়স গণনায়, জন্মের মাত্র দুই দিন পর শিশুটির বয়স দুই বছর বলে মনে করা হয়।
যদিও উত্তর কোরিয়া ১৯৮০ এর দশকে এই পুরানো সিস্টেম থেকে আন্তর্জাতিক বয়স গণনা পদ্ধতিতে পরিবর্তন করেছিল। দক্ষিণ কোরিয়া এখনও পুরানো সিস্টেম বজায় রেখেছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার নাগরিকরাও আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বয়স গণনা পদ্ধতি চালু করতে সম্মত হয়েছে। সেপ্টেম্বরে দেশের একটি সরকারি সমীক্ষায় ৮০ শতাংশ অংশগ্রহণকারী 'কোরিয়ান এজ ক্যালকুলেশন' পদ্ধতি বাতিলের পক্ষে ভোট দিয়েছেন।
সরকারি আইন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র লি গি-জাং জানান, এই জাতীয় অনুশীলনের উত্সগুলো সনাক্ত করা কঠিন। কিন্তু শুধুমাত্র দক্ষিণ কোরিয়া তার শ্রেণীভিত্তিক সমাজের কারণে এতোদিন এই ব্যবস্থা ধরে রেখেছে।
এএ