ফেসবুকে সময় নষ্ট না করে সরকারের নানা উদ্যোগে শামিল হয়ে কর্মসংস্থান তৈরি ও উপার্জনে তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) সকালে রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘বেগম রোকেয়া পদক’ বিতরণ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সরকার সারাদেশে ডিজিটাল সেন্টার ও ফ্রিল্যান্সারদের স্বীকৃতি দিয়েছে এবং ‘লার্নিং অ্যান্ড আর্নিং’ প্রজেক্টের মাধ্যমে নারীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। যেখানে উদ্যোক্তা একজন নারী এবং একজন পুরুষ, সেখানে সবচেয়ে বেশি লাভবান হচ্ছে নারী সমাজ। আর এর মাধ্যমে স্বল্পশিক্ষিত একজন নারীও ঘরে বসে অর্থ উপার্জন করতে পারেন। কাজেই সারাদিন ফেসবুক আর এসব না দেখে তারা যদি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেয়, ফ্রিলান্সিং করে তাহলে কিন্তু কিছু অর্থ উপার্জন করতে পারে।

সরকার কম্পিউটার শিক্ষা জেলা এবং উপজেলাভিত্তিক করে দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, গ্রামে গ্রামে সুবিধার জন্য ‘তথ্য এপিএ’ সার্ভিস চালু করেছে এবং এর মধ্য দিয়ে বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন পূরণ প্রায় হয়েছে। কারণ, দেশের সংসদে স্পিকার, সংসদ নেতা, বিরোধীদলীয় নেতা এবং সংসদ উপনেতা এই চারজনই নারী। দুর্ভাগ্যের বিষয় আপনারা জানেন আমাদের সংসদ উপনেতা বেগম সাজেদা চৌধুরী কিছুদিন আগে মৃত্যুবরণ করেছেন। তবে এই শূন্যস্থান পূরণ আমরা একজন নারীকে দিয়েই করবো।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নারী জাগরণের মধ্যেই সবার সম্মিলিত অংশগ্রহণে বাংলাদেশকে একটি উন্নত জাতি হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। বাংলাদেশ আজ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছে। নারী জাগরণের মধ্য দিয়েই ২০৪১ সাল নাগাদ সেই বাংলাদেশকে আমরা উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। এ জন্য ডেল্টা প্ল্যান করে দিয়েছি, যাকে ভিত্তি করে প্রজন্মের পর প্রজন্ম যেন এই অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে পারে।

নারীদের জাগরণ ও অর্জনের পেছনে বেগম রোকেয়ার অবদান রয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, বলেন, ৯ ডিসেম্বর বেগম রোকেয়ার জন্মদিন। তিনি যদি সেই অচলায়তন ভেঙে নিজে শিক্ষা গ্রহণ করে মেয়েদের শিক্ষার ব্যবস্থা না করতেন, তাহলে আমরা আজকে যে যেখানে আছি, কেউ থাকতে পারতাম না। বেগম রোকেয়ার স্বপ্ন ছিল মেয়েরা জজ-ম্যাজিস্ট্রেট হবে। নারীরা সব দায়িত্ব নেবে। তিনি যে আকাঙ্ক্ষা করেছিলেন আমরা কিন্তু ধীরে ধীরে তা অর্জনের পথে।

নারী অগ্রযাত্রায় আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিমান, নৌ, সেনাবাহিনী ও বর্ডার গার্ডে আগে কোনো মেয়ে ছিল না। সব জায়গায় মেয়েদের সুযোগ করে দিয়েছি। জাতির পিতা পুলিশে কিছু মেয়ে নিয়োগ দিয়ে গিয়েছিলেন। আমি দেখলাম কোনো ডিসি, এসপি পদে মেয়েদের স্থান নেই। বলা হতো, মেয়েরা পারবে না। সচিব নেই। মেয়েদের স্থান অনেক নিচে। সিনিয়রিটির ক্ষেত্রে এক সঙ্গে তালিকা করা হতো। আমি বলেছি, মেয়েদের আলাদা লিস্ট চাই। সব জায়গায় ফাইট করে আনতে হয়েছে। তারপরও তারা সচিব পর্যায়ে উঠতে পারে না। প্রশাসনে একটি ব্যবস্থা আছে, রাষ্ট্রপতির কোটায় ১০ শতাংশ অফিসার নিয়োগ দেওয়া যায়। আমি সেই কোটা ধরে প্রথম মেয়ে নিয়োগ দিলাম। আমার অফিসে সচিব হিসেবে প্রধানমন্ত্রী দপ্তরে প্রথম নিয়োগ দিলাম। এভাবে দরজা খুলে দিয়েছি। প্রথম এসপি যখন করতে গেছি, প্রচণ্ড বাধা। মেয়েরা এসপি হবে! আমি বলেছি, হ্যাঁ, মেয়েরাই এসপি হবে।

তৃতীয় লিঙ্গ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা তো কোনো অপরাধ করেনি! এরা তো বাবা-মায়েরই সন্তান। বাবা-মাকে ফেলে দিয়ে তাদের রাস্তায় চলে যেতে হবে কেন? তাদের কোনো জীবন-জীবিকার কিছু থাকবে না, এটা তো হতে পারে না। শুধু নারী অধিকার, নারী অধিকার বলে অনেকে আন্দোলন সংগ্রাম করেছেন। কখনো এই শ্রেণির কথা কেউ চিন্তা করেননি। আমরা সংবিধানে তাদের স্বীকৃতি দিয়েছি। তারা বাবা-মায়ের সঙ্গে থাকবে, লেখাপড়া শিখবে, চাকরি পাবে, কাজ-প্রশিক্ষণ পাবে, একটা সুস্থ জীবন তারা পাবে। প্রতিটি ফরমে নারী-পুরুষের সঙ্গে থার্ড জেন্ডার আমরা লাগিয়ে দিয়েছি।

সরকার প্রধান আরও বলেন, করোনা মহামারির পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এবং নিষেধাজ্ঞা প্রত্যেকটা মানুষের জীবনকে দুর্বিষহ করে তুলেছে। শুধু আমাদের দেশ নয়, উন্নত দেশগুলো আরও খারাপ অবস্থায় আছে। সে জন্য আমি সবাইকে আহবান জানাচ্ছি, যার যেখানে যতটুকু জায়গা আছে সেখানে যে যা পারেন উৎপাদন করেন। বিদ্যুৎ,পানি, তেল ব্যবহারে সবাই সাশ্রয়ী হোন। সবাই সঞ্চয়ী হোন যেন এই আন্তর্জাতিক বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দার ধাক্কা এসেছে সেই ধাক্কা যেন আমাদের দেশে আসতে না পারে।

তিনি বলেন, মাঝে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে মানুষের কিছু কষ্ট হচ্ছে তবে, এটা আন্তর্জাতিক একটা অবস্থার কারণে, আমরা যদি আমাদের উৎপাদন ঠিক রাখি, নিজেদেরটা নিজেরা করবো। কারো কাছে হাত পেতে চলবো না, ভিক্ষা করে চলবো না।

সবাইকে মিতব্যয়ী হওয়ার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সবাই যদি একটু মিতব্যয়ী হই, সাশ্রয়ী হই ইনশাল্লাহ মন্দা আমাদের গ্রাস করতে পারবে না। আন্তর্জাতিকভাবে অনেক উন্নত দেশ এখন নিজেদের অর্থনৈতিক মন্দার দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। বাংলাদেশ আল্লাহর রহমতে এখনো দেয়নি, দেওয়া লাগবে না বলে আমি বিশ্বাস করি। কারণ, আমরা নিজেরাই নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে চলবো, এগিয়ে যাবো

অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসাধারণ অবদানের জন্য পাঁচ নারীকে ‘বেগম রোকেয়া পদক-২০২২’ প্রদান করেন। পদকপ্রাপ্তরা হলেন- রহিমা খাতুন, অধ্যাপক কামরুন নাহার বেগম, অ্যাডভোকেট ফরিদা ইয়াসমীন, ড. আফরোজা পারভিন এবং নাসিমা বেগম। পদক প্রাপ্তদের প্রত্যেককে একটি করে স্বর্ণ পদক, চার লাখ টাকার চেক ও সনদপত্র প্রদান করা হয়।

এএ