তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, মার্কিন রাষ্ট্রদূত ৭ তারিখের ঘটনা নিয়ে তদন্তের কথা বলেছেন। অবশ্যই তদন্ত হবে। পুলিশ তো বিএনপি অফিসে বোমা পেয়েছে। কারা বোমা রেখেছিল, কারা বোমা বানিয়েছিল, বানানোর টাকা কারা দিয়েছিল, পুলিশের ওপর কীভাবে হামলা করেছিল—এগুলো তদন্তে বেরিয়ে আসবে। বিএনপি ঢাকায় যাতে শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে পারে সেজন্য সরকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়াও বিকল্প চারটি প্রস্তাব দিয়েছিল। কিন্তু পার্টি অফিসে বোমা রাখা, পুলিশের ওপর ইট-পাটকেল মারা, হামলা করা, বেআইনিভাবে রাস্তা বন্ধ করে সমাবেশ করা এগুলো শান্তিপূর্ণ সমাবেশের লক্ষণ নয়।
যুক্তরাষ্ট্রের উদাহরণ দিয়ে এই সংসদ সদস্য বলেন, সেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের সমর্থকরা ক্যাপিটল হিলে হামলা করেছিল। সেটি যেমন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়, সেটার সঙ্গে যারা যুক্ত ছিল, তাদের বিরুদ্ধে যেমন তারা ব্যবস্থাগ্রহণ করেছে এবং করছে, মামলাও পরিচালিত হচ্ছে, এমনকি ডোনাল্ড ট্রাম্পকেও অভিযুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। এখানেও ৭ তারিখের ঘটনা তার সাথে তুলনীয় যে, এটাও শান্তিপূর্ণ সমাবেশ নয়, সন্ত্রাসী কার্যকলাপ।
শুক্রবার (৯ ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে সরকারি বাসভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
এসময় বুধবার (৭ ডিসেম্বর) নয়াপল্টনে বিএনপি নেতাকর্মী ও পুলিশের সংঘর্ষের পর দলটির কার্যালয় থেকে ১৫টি তাজা বোমা, দুই লাখ পানির বোতল, ১৬০ বস্তা চাল, রান্না করা খিচুড়ি, হাড়ি-পাতিল এবং দুই লাখ নগদ টাকা উদ্ধারের কথা উল্লেখ করেন তিনি।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে মানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি না হয় সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা সরকারের সাংবিধানিক দায়িত্ব। বিশেষ করে পুলিশের ওপর যখন হামলা হয়, রাস্তাঘাট বন্ধ করে বেআইনিভাবে যখন সমাবেশ করা হয়, তখন ব্যবস্থাগ্রহণ করতে সরকার বাধ্য হয়েছে। আমরা গত দুই সপ্তাহ ধরে বারবার বলেছি, আপনারা যাতে বড় সমাবেশ করতে পারেন সেজন্য সরকার সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করবে। কিন্তু না, তারা দেশে বিশৃঙ্খলা করার জন্য নয়াপল্টনেই সমাবেশ করবে। এটি তো সম্পূর্ণভাবে বেআইনি।
সরকার যদি সহায়তা না করত তাহলে বিএনপির পক্ষে দেশের নয়টি জায়গায় বড় সমাবেশ করা সম্ভব হতো না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের সব কয়টি বিভাগীয় শহরে তারা সমাবেশ করেছে, সরকার তাদের নিরাপত্তা দিয়েছে, সেখানে টুঁ শব্দটুকুও হয়নি। যেখানে একটু হয়েছে, সেখানে তারা নিজেরা নিজেরা চেয়ার ছোড়াছুড়ি ও মারামারি করেছে। কিন্তু যখন বিএনপি ক্ষমতায় ছিল, তখন আমাদের সমাবেশ করতে দেওয়া হতো না। অথচ ১৪ বছর যাবৎ আমরা ক্ষমতায়, তারা নির্বিঘ্নে সমাবেশ করেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসের গ্রেপ্তারের প্রশ্নে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, তারা সবাই ২০১৩, ১৪ ও ১৫ সালে পাঁচশ’ মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা, ৩ হাজার মানুষকে আগুনে দগ্ধ করা, সাড়ে তিন হাজার গাড়ি পোড়ানো ও লঞ্চ-ট্রেন পোড়ানোর হুকুমদাতা হিসেবে আসামি। তারা আদালতকেও বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছেন, হাজিরা পর্যন্ত দেননি। গত ৭ তারিখ নয়াপল্টনে যে ঘটনা ঘটলো, পুলিশের ওপর হামলা করা হলো, বিএনপি কার্যালয়ের ভেতরে ১৫টি তাজা বোমা পাওয়া গেলো। বিভিন্ন সময় ঢাকা-চট্রগ্রামসহ সারা দেশে যে গাড়িতে আগুন দেওয়া এবং ভাঙচুর হয়েছে, এগুলোর হুকুমদাতাও মির্জা ফখরুল সাহেব ও মির্জা আব্বাস। আর তাজা বোমা নিয়ে যখন কেউ পার্টি অফিসে বসে থাকে, তখন যারা বসা ছিল সবাই তো অপরাধী। তারা তাজা বোমা নিয়ে কেন বসে ছিলেন? এসব কারণে পুলিশ তাদের গ্রেপ্তার করেছে।
লন্ডন থেকে তারেক রহমান বিশৃঙ্খলা ঘটাতে উস্কানি দিচ্ছেন কি না? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এসব সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড, বিশেষ করে নয়াপল্টনেই তারা সমাবেশ করবে—এটি তারেক রহমানের নির্দেশেই তারা করেছে। বিএনপির অনেক নেতারা শুরু থেকেই রাজি ছিলেন, এমনকি পুলিশের সঙ্গে প্রথম দুটি বৈঠকে বিএনপিই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের প্রস্তাব দিয়েছিল। পরে তারেক রহমানের নির্দেশেই তারা বিগড়ে বসে। মিরপুরে পল্লবী, কালশী মাঠ, ইজতেমার ময়দান ও বাণিজ্য মেলার মাঠ এমন চার-পাঁচটি বিকল্প প্রস্তাবও তারা উপেক্ষা করে। তারেক রহমান ‘দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা’র দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি, খুন, চোরাচালান, মানিলন্ডারিংয়ের আসামি। একজন আসামির নেতৃত্বে যখন দল পরিচালিত হয়, সেই দল অপরাধী-আসামি-সন্ত্রাসীর মতই আচরণ করবে, বিএনপিতে তাই ঘটছে।
কিছু গণমাধ্যমের সাম্প্রতিক ভূমিকা নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, গণমাধ্যম স্বাধীন বলে একপেশে সংবাদ পরিবেশন করা তাদের কাজ নয়। পক্ষপাতদুষ্টতা বা রাজনীতি করা কোনো গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেই সমীচীন নয়।
এএ