বিএনপির ঘোষিত ১০ দফা ও ২৪ ডিসেম্বর গণমিছিলের সঙ্গে মিল রেখে একই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জামায়াত। শনিবার (১০ ডিসেম্বর) বিকালে দলের প্রচার বিভাগ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জামায়াত জানিয়েছে, রাজধানী ঢাকার একটি স্থানীয় মিলনায়তনে কেন্দ্রীয় নেতাদের উপস্থিতিতে দেশবাসীর উদ্দেশে বক্তব্য প্রদান ও কর্মসূচি ঘোষণা করেন জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান।
জামায়াতের আমির ১০ দফা দাবি উল্লেখ করে আগামী ২৪ ডিসেম্বর রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভাগীয় শহর ও জেলায় জেলায় গণমিছিলের কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
জামায়াতের আমির ১০ দফা দাবি হচ্ছে—
১. অবিলম্বে সরকারের পদত্যাগ এবং ১৯৯৬ সালে সংবিধানে সংযোজিত ধারা ৫৮-খ, গ ও ঘ এর আলোকে নির্বাচনকালীন দল নিরপেক্ষ একটি অন্তর্বর্তীকালীন কেয়ারটেকার সরকার গঠন করতে হবে।
২. গ্রহণযোগ্য একটি স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করবে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আরপিও সংশোধন, ইভিএম পদ্ধতি বাতিল ও পেপার ব্যালটের মাধ্যমে ভোটের ব্যবস্থা নিশ্চিত করা এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনে দলীয় প্রতীক ব্যবহার বাতিল করতে হবে।
৩. বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া এবং জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীসহ সব বিরোধী দলীয় নেতা-কর্মীর মুক্তি।
৪. অবিলম্বে জামায়াতের অফিস খুলে দেওয়া, নিবন্ধন ও প্রতীক ফিরিয়ে দেওয়া এবং সভা-সমাবেশ ও মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।
৫. ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন-২০১৮, সন্ত্রাস দমন আইন-২০০৯ এবং বিশেষ ক্ষমতা আইন-১৯৭৪ বাতিল।
৬. বিদ্যুৎ, জ্বালানি, গ্যাস, সার ও পানিসহ সেবা খাতগুলোতে মূল্যবৃদ্ধির গণবিরোধী সরকারি সিদ্ধান্ত বাতিল করতে হবে।
৭. গত ১৫ বছরব্যাপী বিদেশে অর্থপাচার, ব্যাংকিং ও আর্থিক খাত, বিদ্যুৎ-জ্বালানি খাত ও শেয়ার বাজারসহ রাষ্ট্রীয় সব ক্ষেত্রে সংঘটিত দুর্নীতি চিহ্নিত করার লক্ষ্যে একটি স্বাধীন শক্তিশালী কমিশন গঠন করতে হবে।
৮. গত ১৫ বছরে গুমের শিকার সব নাগরিককে উদ্ধার করতে হবে এবং বিচারবহির্ভূত হত্যা বন্ধ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে নির্যাতন বন্ধ ও রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের প্রতিটি ঘটনার আইনানুগ বিচারের ব্যবস্থা করে বিচারিক প্রক্রিয়ায় শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৯. আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের উপযোগী করার লক্ষ্যে সরকারি হস্তক্ষেপ পরিহার করে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিতে হবে।
১০. সীমান্ত হত্যা বন্ধ ও দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষা এবং জাতিকে দ্বিধা-বিভক্ত করার ষড়যন্ত্র বন্ধ করে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে।
প্রসঙ্গত, বিএনপির ঘোষিত ১০ দফার সঙ্গে অনেকটাই হুবহু মিল রেখে দাবি দিয়েছে জামায়াত।
সংবাদ সম্মেলনে জামায়াত আমির উল্লেখ করেন, দেশকে আজ ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে উদ্ধারের উপায় হলো জনগণের নির্বাচিত সরকার প্রতিষ্ঠা করা। আর সেই জন্যই প্রয়োজন দল নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবিলম্বে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও জনগণের ন্যায্য অধিকার ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে যুগপৎভাবে গণআন্দেলন গড়ে তুলতে হবে।
কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া সেক্রেটারি এবং কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মতিউর রহমান আকন্দের সঞ্চালনায় নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— নায়েবে আমির অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুল্লাহ মো. তাহের, ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা এটিএম মা’ছুম, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আযাদ, ঢাকা মহানগরী দক্ষিণের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য নূরুল ইসলাম বুলবুল এবং ঢাকা মহানগরী উত্তরের আমির ও কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ জনাব সেলিম উদ্দিন।
এএ