কক্সবাজারে আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে তার ছবি ও জেলা প্রশাসনের নাম ব্যবহার করে সমুদ্র সৈকতের পাশে সরকারি জমি দখল করে গড়ে উঠেছে অবৈধ মার্কেট। সুগন্ধা পয়েন্ট সড়কের উত্তর ও দক্ষিণ পাশে এসব মার্কেট তৈরির অভিযোগ উঠেছে।
স্থানীয়রা জানান, গত ৭ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগের জনসভায় প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে রাতারাতি ‘মেহেদী হাসান মার্কেট’ নাম দিয়ে সৈকতের পাশে সরকারি জমিতে ৭২টি দোকান স্থাপন করা হয়। এমনকি সেখানে বেআইনিভাবে নেওয়া হয়েছে বিদ্যুৎ সংযোগও। এসব দোকান মৌসুম ভিত্তিক মাত্র ৬ থেকে ৭ মাসের জন্য চালু থাকে। প্রতিটি দোকান থেকে মাসিক ভাড়া তোলা হয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। এমনকি দোকানগুলো বিক্রিও হয়ে থেকে চড়া দামে। এভাবে চলতি মৌসুমের জন্য শুধু ভাড়া দিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় কিছু সিন্ডিকেট চক্র। নজরুল ইসলাম নজুর নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট এসব কর্মকাণ্ডে জড়িত বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা। অপরদিকে সুগন্ধা পয়েন্ট সড়কের উত্তর পাশে একইভাবে ‘ডলপিন মার্কেট’ নাম দিয়ে ১০ থেকে ১২টি দোকান নির্মাণের কাজ চলছে।
সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, সুগন্ধা পয়েন্ট সড়কের দক্ষিণ পাশের ট্রাফিক পুলিশ বক্স থেকে ড্রাগন মার্কেট পর্যন্ত সারিবদ্ধভাবে প্রায় ৭২টি দোকান করা হয়েছে। এসব দোকানের ওপরে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি ও বান্যার টাঙানো। দোকানের বাইরে বড় করে টাঙানো সাইনবোর্ডে রয়েছে সরকারি লোগো এছাড়াও তাতে লেখা রয়েছে সৌজন্যে- নজরুল ইসলাম নজু, সভাপতি, মেহেদী হাসান মার্কেট, সুগন্ধা পয়েন্ট সড়ক, জেলা প্রশাসন (কক্সবাজার)।
স্থানীয়রা জানান, সেখানে নজরুল ইসলাম নজুর ১২টি, রুহুল কাদের ৩টি, রুপম ৩টি, সুমন ১টি, গুরা মিয়া ১টি, জাকের ১টি, আমান ১টি, জয়নাল ২টি, নাজিম ৩টি, কালাম ৪টি, হেলাল ৪টি, রফিক ১টি, শামসুর ১টি, ইউসুফ ১টি, জুয়েল ৩টি সহ বিভিন্ন জনের ৭২টি দোকান রয়েছে। এসব দোকান বিক্রি হয়েছে চড়া দামে। সম্প্রতি জুয়েল নামের এক ব্যক্তি ৬ লাখ টাকায় ৩টি দোকান কিনে নিয়েছেন। আলমগীর নামের এক ব্যক্তি কিনেছেন একটি। এছাড়া ট্রাফিক পুলিশ বক্সের পেছনে একটি ঝুপড়ি ভাড়া দেওয়া হয়। সেখানে চলে নানান অপকর্ম। এটি অপরাধীদের আস্তানা হিসেবে পরিচিত। এসব অবৈধ স্থাপনা নির্মাণ এবং অপরাধ কর্মকাণ্ডে দুজন বিচকর্মীও জড়িত বলে অভিযোগ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে যোগাযোগ করা হয় কথিত মেহেদী হাসান মার্কেটের সভাপতি নজরুল ইসলাম নজুর সঙ্গে। তিনি বলেন, আমার ছেলে মেহেদী হাসানের নামে মার্কেটের নাম দেওয়া হয়েছে। আমরা এখানে অনেকেই একসঙ্গে ব্যবসা করছি। জেলা প্রশাসন সব জানে।
অপরদিকে সড়কের উত্তর পাশে একইভাবে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে ‘ডলপিন মার্কেট’ নামে আরও একটি মার্কেট তৈরি শুরু হয়। সেখানেও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও আওয়ামী লীগের লোগো সমন্বিত সাইনবোর্ড লাগিয়ে রাতারাতি ১০ থেকে ১২টি দোকান নির্মাণ শুরু হয়। যার নির্মাণকাজ এখনো অব্যাহত রয়েছে।
এ বিষয়ে কক্সবাজার পিপলস ফোরামের সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল বলেন, প্রশাসনের নির্লিপ্ততায় ধীরে ধীরে দখল ও স্থাপনা নির্মাণ শুরু হয়। পরে দোকানগুলো অনেকটা স্থায়ী রূপ নেয়। এক সময় এসব উচ্ছেদ কঠিন হয়ে পড়ে এবং সরকারি অর্থের অপচয় হয়। শুরুতেই পদক্ষেপ নিয়ে এসব উচ্ছেদ করতে হবে। এখন দখল-বেদখল কাজেও খুব কৌশলে বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি ব্যবহার করে দখলদাররা। এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন শাখার সহকারী কমিশনার মাসুম বিল্লাহ বলেন, সুগন্ধা পয়েন্ট সড়কের উভয় পাশের দোকানগুলো সব অবৈধ। সেখানে জেলা প্রশাসনের অনুমতি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। উত্তর পাশের কিছু স্থাপনা সম্প্রতি উচ্ছেদ করা হয়েছে। এছাড়া আমরা ব্যস্ত থাকার সুযোগে তারা আবার দখল করেছে। দ্রুত এসব উচ্ছেদের ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়াও জানার পর বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি সম্বলিত ব্যানার ও সাইনবোর্ড খুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) আমিন আল পারভেজ এসব বিষয়ে অবহিত নন বলে জানান।
আই এইচ