সরকারের পক্ষ থেকে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নেয়ার পর থেকেই তামাক কোম্পানিগুলো আইন সংশোধনের উদ্যোগকে বিতর্কিত করতে নানা ধরনের প্রচারণা শুরু করেছে। বরাবরের মত তারা, ‘আইন সংশোধন হলে রাজস্ব কমে যাবে‘ এমন ভয় দেখাতে শুরু করেছে। ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাশ এবং ২০১৩ সালে আইনটি সংশোধনের সময়ও তারা একই ধরনের প্রচারণা চালায়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, গত ১০ বছরে তামাক খাত থেকে সরকারের রাজস্ব ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। আইন প্রণয়নের ফলে তামাক ব্যবহারের হার কমলেও রাজস্ব আয় কখনোই পূর্বের বছরের তুলনায় কমেনি।
বৃহস্পতিবার (১৫ ডিসেম্বর) সকাল ১০:৩০ টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনৈতিক গবেষণা ব্যুরো ও বাংলাদেশ নেটওয়ার্ক ফর টোব্যাকো ট্যাক্স পলিসি এর উদ্যোগে `রাজস্ব হারানোর জুজুর ভয়, তামাক কোম্পানির পুরনো অস্ত্র ও বাস্তবতা’শীর্ষক একটি ওয়েবিনারে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
জুমে অনুষ্ঠিত এ ওয়েবিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপনকালে তামাক নিয়ন্ত্রণ বিষয়ক গবেষক ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা বলেন, ২০০৫ সালে দেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস হয়। আইন পাসের বছর (২০০৪-০৫ অর্থ-বছর) তামাকজাত দ্রব্য থেকে থেকে রাজস্ব আয় ছিলো ২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা, পরের বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ হাজার ৩৫১ কোটি টাকায়। সরকার ২০১২-১৩ অর্থবছরে ১০ হাজার ১৭০ কোটি টাকা রাজস্ব পায়। ২০১৩ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের পরের বছর রাজস্ব বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ১২ হাজার ৫৫৫ কোটি টাকায়। এই বছরগুলোতে রাজস্ব বৃদ্ধির হার কখনোই কমেনি বরং ২০০৪-০৫ অর্থ বছর থেকে ২০২১-২২ অর্থবছর পর্যন্ত তামাকজাত দ্রব্য থেকে রাজস্ব আয় প্রায় সাড়ে ১১ গুন বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ আইন পাস, সংশোধনসহ তামাক নিয়ন্ত্রণের প্রতিটি উদ্যোগে তামাক কোম্পানী রাজস্ব হারানোর ভয় দেখিয়েছে।
ওয়েবিনারে অপর একটি প্রবন্ধে বিএনটিটিপি’র প্রজেক্ট ম্যানেজার হামিদুল ইসলাম হিল্লোল বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিলেই তামাক কোম্পানিগুলো রাজস্ব কমে যাওয়ার ভয় দেখায়। এনবিআরও সেই ভয় নিয়ে কথা বলে। কিন্তু পরিসংখ্যানে রাজস্ব কমার কোনো নজির কখনোই পাওয়া যায়নি। বরং প্রস্তাবিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের সংশোধনে সিগারেটের খুচরা বিক্রি বন্ধ, লাইসেন্সিং ব্যবস্থা, স্মোকিং জোন নিষিদ্ধকরণ, ই-সিগারেট বিক্রি-উৎপাদন-আমদানি বন্ধের কথা বলা হয়েছে। যেগুলো জনস্বাস্থ্য রক্ষায় বাস্তবায়ন হওয়া অত্যন্ত জরুরি। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে জরুরি একটি তামাক কর নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করতে হবে।
ওয়েবিনারে প্যানেল আলোচক হিসেবে উন্নয়ন সমন্বয় এর ডিরেক্টর রিসার্চ আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন, তামাক কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত পরোক্ষ কর অনেক কম। যার ৮১ শতাংশ পরোক্ষভাবে ভোক্তার উপরই বর্তায়। পরোক্ষ কর আমাদের আয়ের প্রধান উৎস না। আমাদের প্রত্যক্ষ করের ওপর বেশি গুরুত্ব আরোপ করতে হবে। তামাকে উচ্চমাত্রায় করারোপ করলে বিক্রি কমলেও তা রাজস্বে তেমন কোন প্রভাব ফেলবে না। বরং সেটা তামাক সেবনকারীর সংখ্যা কমাতে সাহায্য করবে এবং তরুণদের নিরুৎসাহিত করবে।
প্যানেল আলোচক হিসেবে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেলের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রকল্প পরিচালক মো. বজলুর রহমান বলেন, বাজেটে কখনো সাদা পাতাকে গুরুত্ব দেয়া হয় না। এটার উপর কোনো ট্যাক্স নেই ফলে এটার বাজার উন্মুক্ত। নীতিতে সবসময় সিগারেট অনেক বেশি গুরুত্ব পায়। কিন্তু দেশে জর্দা, গুল, সাদাপাতার ব্যবহার অনেক বেশি। তাই এসব দ্রব্যের ওপর বিশেষ নজর দেওয়া জরুরী।
বিএনটিটিপি’র প্রজেক্ট অফিসার ইব্রাহীম খলিলের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কান্ট্রি ম্যানেজার নাসির উদ্দীন শেখসহ তামাক নিয়ন্ত্রণ বিশেষজ্ঞ, উন্নয়নকর্মী ও সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন।
এএ