আওয়ামী লীগই স্বাধীনতার পরে গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল করেছিল বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। শুক্রবার (১৬ ডিসেম্বর) মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে রাজধানীতে বিএনপি আয়োজিত বিজয় শোভাযাত্রায় দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন।
বিকেলে নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে শোভাযাত্রাটি কাকরাইল মোড়, শান্তিনগর হয়ে মালিবাগ মোড় ঘুরে ফকিরাপুল মোড়ে এসে শেষ হয়। বিকেল ৩টা ৩৫ মিনিটে শুরু হয়ে পৌনে ৫টায় শোভাযাত্রা শেষ হয়। শোভাযাত্রায় বিএনপি ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন।
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন শোভাযাত্রার উদ্বোধন করেন। এ সময় সরকার উসকানি দিচ্ছে অভিযোগ করে এ বিষয়ে সতর্ক থাকতে তিনি নেতা-কর্মীদের আহ্বান জানান।
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আজকের এই শোভাযাত্রা প্রমাণ করেছে আমরা পারি। অতীতে পেরেছি, আগামীতেও পারব। সরকারের কোনো হুমকি-ধমকি, রক্তচক্ষুকে তোয়াক্কা না করে জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ করব।’
দলীয় নেতা-কর্মীদের উদ্দেশ্য করে খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘সরকার উসকাচ্ছে, মিথ্যাচার করছে। আপনারা কোনো উসকানিতে কান দেবেন না। শান্তিপূর্ণভাবে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আমরা আমাদের লক্ষ্য অর্জন করব।’
খন্দকার মোশাররফ বলেন, ‘আজকে যখন সরকার দেখছে তাদের দিন শেষ, তখন দেশে তারা বিএনপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচার করছে। ক্ষমতায় থাকতে এই গায়ের জোরের সরকার মিথ্যাচার করে জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করছে। তারা (সরকার) বলে, আমরা নাকি সন্ত্রাস করতে চাই। সন্ত্রাস যদি করে থাকে, তা আওয়ামী লীগ করেছে।’
প্রধানমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করে মোশাররফ বলেন, ‘অনেক কথা বলেছেন। আপনার সব কথার জবাব আমরা দেব না। শুধু মনে করিয়ে দিতে চাই, এই আওয়ামী লীগই স্বাধীনতার পরে গণতন্ত্র হত্যা করে বাকশাল করেছিল। গত ১৪ বছরে গণতন্ত্র হত্যা করেছে, লুটপাট করেছে।’
মোশাররফ আরও বলেন, ‘সারা দেশের জনগণ রায় দিয়েছে—এই সরকার, যারা গণতন্ত্র হত্যাকারী, তারা আর গণতন্ত্র ফিরিয়ে দিতে পারে না। জনগণের আজ একই ভাষা, একই তাদের দাবি, তারা এই সরকারের হাত থেকে মুক্তি পেতে চায়। তাই জনগণকে রক্ষা করতে আমরা ১০ দফা দিয়েছি। এই দাবি জনগণের দাবি। এই দাবির সমর্থনে আমরা রাজনৈতিক দলগুলোকে যুগপৎ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়েছি। আজকে আবার আহ্বান জানাতে চাই, আসুন দেশের দেশপ্রেমিক, গণতন্ত্রকামী দলমত-নির্বিশেষে ইস্পাত কঠিন ঐক্য গড়ে তুলে এই দেশকে বাঁচাই।’
বেলা আড়াইটায় শুরুর কথা থাকলেও নির্ধারিত সময়ের অনেক আগেই নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে জড়ো হতে থাকেন বিএনপির সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা। বেলা গড়ানোর সঙ্গে নেতা-কর্মীদের ভিড় বাড়তে থাকে। দুপুর ১টা না বাজতেই নয়াপল্টন ছাড়িয়ে নেতা-কর্মীদের ভিড় বিস্তৃত হয় আশপাশের এলাকায়। ছোট-বড় বর্ণিল সব ব্যানার, ফেস্টুন ও প্লাকার্ডে ছেয়ে যায় সমগ্র এলাকা। এসব ব্যানার-ফেস্টুনে শোভা পায় দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ছবি। নেতা-কর্মীদের বিশাল ভিড় থেকে ভেসে আসে নানা স্লোগান। শোভাযাত্রায় বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশগ্রহণ করেন। দেড় ঘণ্টার এই শোভাযাত্রার কারণে নয়াপল্টন ও এর আশপাশের সড়কে দীর্ঘ সময় যান চলাচল বন্ধ ছিল। ঢোলের বাদ্য ও গানের সুরের পাশাপাশি নানা স্লোগানে র্যালি শুরু হয়। নেতা-কর্মীদের মাথায় ছিল লাল-সবুজ ক্যাপ, হাতে ছিল জাতীয় পতাকা এবং বিএনপির দলীয় পতাকা।
এএ