বিএনপি, জামায়াত, গণতন্ত্র মঞ্চের যুগপৎ আন্দোলন কর্মসূচির দিকে ইঙ্গিত করে এর সমালোচনা করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, ‘বিএনপি-জামায়াত জোট মিলে এবং তাদের সঙ্গে আরও কিছু পার্টি দাঁড়াল। আরেকটি জিনিস খুব অবাক লাগে—কোথায় বামপন্থী আর কোথায় ডানপন্থী। যারা বামপন্থী, তারা মনে হয় ৯০ ডিগ্রি ঘুরে গেছে।’
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) রাজধানীর কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে বিজয় দিবস উপলক্ষে আওয়ামী লীগ আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন শেখ হাসিনা।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জামায়াত, বিএনপির সঙ্গে আমাদের বাম, অতি বাম, স্বল্প বাম, তীব্র বাম, কঠিন বাম—সব যেন এক হয়ে এক প্ল্যাটফর্মে। ওই যে বলেছিল না—কী বিচিত্র এই দেশ, সেলুকাস। সেই কথায় মনে হয় কোথায় তাদের আদর্শ? কোথায় তাদের নীতি? আর কোথায় কী? আর কী কারণে যারা হত্যাকারী, দশ ট্রাক অস্ত্র চোরাকারবারিতে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, গ্রেনেড হামলায় আইভী রহমানসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের হত্যায় যার বিচার হয়েছে সাজাপ্রাপ্ত আসামি, দেশের টাকা পাচারকারী, সব ধরনের অপকর্ম, এতিমের টাকা আত্মসাৎ করা, ব্যাংকে রেখে সেই টাকার মুনাফা খাওয়া, সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের নেতৃত্বে আমাদের বড় বড় তাত্ত্বিক, বড় বড় কথা বলে, তারা এক হয়ে যায় কীভাবে? সেটাই আমার প্রশ্ন।’
স্বাধীনতাবিরোধীদের রাজনীতিতে পুনর্বাসন করেছিল বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান দাবি করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সেই দলে যুক্ত হয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে হবে? এদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে তাদের সমর্থন করে কীভাবে? এটা ভাবলে আমার অবাক লাগে। এরা তো ইতিহাস জানে।’
সরকারপ্রধান বলেন, ‘আওয়ামী লীগের অপরাধটা কী? আওয়ামী লীগ তো ক্ষমতায় বসে নিজে খাচ্ছে না। দেশের মানুষকে খাবার দিচ্ছে।’ গৃহহীনদের ঘর দেওয়া, রোগের চিকিৎসা করাসহ বিভিন্ন সরকারি উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন সরকারপ্রধান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি ডিসেম্বর মাসে বিজয়ের অনুষ্ঠান করবে। সেদিন আসলে আন্দোলন করে সরকার উৎখাত করবে। এতই সোজা! (এটা) আওয়ামী লীগ পারে।’
টানা তিনবারের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ পারে, আইয়ুব খানকে আমরা উৎখাত করেছি, ইয়াহিয়া খানকে যুদ্ধে পরাজিত করে উৎখাত করেছি, জিয়াকে পাই নাই হাতে, কিন্তু জিয়া যখনই যেখানে গেছে আন্দোলন তো তাঁর বিরুদ্ধে হয়েছে। এরশাদকে উৎখাত করেছি। খালেদা জিয়া (১৯৯৬ সাল) ১৫ ফেব্রুয়ারি ভোট চুরি, তাকে উৎখাত করা হয়েছে। আবার ২০০৬-এ ভোট চুরি করেছিল, ১ কোটি ২৩ লাখ ভুয়া ভোটার দিয়ে ভোট করতে চেয়েছিল সেটাও বাতিল হয়েছে।’
‘কাজেই আওয়ামী লীগ পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় বসলে...হ্যাঁ চক্রান্ত করতে পারবে, ষড়যন্ত্র করতে পারবে।’
নেতা-কর্মীদের সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি বলেন, ‘চক্রান্ত করে ২০০১-এ আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। তার ভোগান্তি এ দেশের মানুষের হয়েছে। মানুষকে সজাগ থাকতে হবে। আবার সেই ভোগান্তিতে পড়তে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রেখে আমরা এগিয়ে যাব উন্নয়নের পথে অপ্রতিরোধ্য গতিতে। গড়ে তুলব ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ।’
আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পরেই দেশের মানুষ উপলব্ধি করতে পেরেছে সরকার জনগণের সেবক এবং সরকার ইচ্ছে করলেই মানুষের উন্নতি করতে পারে, সেটা প্রমাণ করেছে বলে দাবি করেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘ক্ষমতায় আসাটা খুব সহজ ছিল না। এত সহজে আসতে দেয়নি। জনগণ আমাদের সমর্থন করে। ভোট আমাদের আছে। কিন্তু নির্বাচনে বারবার কারচুপি করে হোক, ষড়যন্ত্র করে হোক, চক্রান্ত করে হোক আওয়ামী লীগকে ক্ষমতায় আসতে বাধা দেওয়া হয়েছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘মানুষের শক্তি বড় শক্তি। আর বিশ্বাস। মানুষের শক্তি নিয়েই আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে।’
২০৪১-এর স্মার্ট বাংলাদেশ কেমন হবে সে বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যে বাংলাদেশে প্রত্যেকটা মানুষ কম্পিউটার ব্যবহারে পারদর্শী হবে। আমাদের অর্থনীতি আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্য। আমাদের সবকিছু আমরা ই-গভর্নেন্স, ই-বিজনেস সবকিছু আমরা এভাবে করব। এমনকি স্বাস্থ্যসেবা থেকে শিক্ষা—সবকিছুতেই আমরা গড়ে তুলব। সেইভাবে আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বিজয় আমরা এনেছি, এই বিজয়ের পতাকা সমুন্নত রেখে চলতে হবে। আর যেন ওই খুনি, যুদ্ধাপরাধী, যাদের আমরা বিচার করেছি, এরা যেন এই দেশটাকে আবার ধ্বংস করতে না পারে। সেদিকে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সবাইকে লক্ষ রাখতে হবে।’
মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন জানানো বিদেশিদের সম্মাননা দেওয়ার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের জন্য এতটুকু কেউ করলে আমরা সেটা স্বীকার করি। আবার কেউ আমাদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করলে প্রতিবাদও করতে জানি।’
আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ ও উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলামের যৌথ সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য আমির হোসেন আমু, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য মতিয়া চৌধুরী, মোশারফ হোসেন, শাজাহান খান, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, সিমিন হোসেন রিমি, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদ প্রমুখ।
এএ