ভুয়া বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের নামে জমি ক্রয়বিক্রয় এবং ভূমি উন্নয়ন কর ফাঁকি রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে যাচ্ছে ভূমি মন্ত্রণালয়।
রোববার (১৮ ডিসেম্বর) এ ব্যাপারে সচিবালয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাথে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাভুক্ত ‘যৌথ-মূলধন কোম্পানি ও ফার্মসমূহের পরিদপ্তর’ (আরজেএসসি)-এর মধ্যে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়।
আরজেএসসি নিবন্ধক শেখ শোয়েবুল আলম এনডিসি এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ড. মো: জাহিদ হোসেন পনির, পিএএ নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করেন। অনুষ্ঠানে অন্যান্যদের মধ্যে ভূমি মন্ত্রণালয় এবং আরজেএসসি-এর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। এই সমঝোতা স্মারক সাক্ষরের ফলে ভূমিসেবা সিস্টেম এবং আরজেএসসি সিস্টেমের মধ্যে আন্তঃসংযোগ এবং সমলয় স্থাপন হবে।
মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, কাগুজে কিংবা ভুয়া যৌথমূলধন কোম্পানি ও ফার্ম দেখিয়ে নামে জমি ক্রয়বিক্রয়ের মাধ্যমে বেআইনি কাজ করার অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। এছাড়া অনেকে সময় দেখা যায় ‘বাণিজ্যিক কিংবা শিল্প কাজে ব্যবহৃত জমি’ ভূমি উন্নয়ন কর ফাঁকি দেওয়ার উদ্দেশ্যে দলিলাদিতে ‘আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত জমি’ দেখিয়ে তাতে লাভজনক বৃহৎ ব্যবসা কার্যক্রম চালিয়ে যেতে। এর ফলে প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয় রাষ্ট্র।
বিভিন্ন ভূমিসেবা যেমন ই-নামজারি কিংবা ভূমি উন্নয়ন কর ব্যবস্থাপনায় আরজেএসসি এখতিয়ারভক্ত কোম্পানি কিংবা প্রতিষ্ঠানের প্রযোজ্য তথ্য যাচাইয়ের সুযোগ হবার ফলে এখন ভুয়া ব্যাবসায়িক প্রতিষ্ঠানের নামে জমি ক্রয়বিক্রয় এবং ভূমি উন্নয়ন কর ফাঁকি রোধ করা সম্ভব হবে। ফলে সরকারের কোষাগারে ভূমি উন্নয়ন কর বাবদ অতিরিক্ত বিপুল পরিমাণ রাজস্ব জমা হবে, যা এতদিন হতোনা!
এছাড়া, ভূমি এবং আরজেএসসি সিস্টেমের স্বয়ংক্রিয় আন্তঃসংযোগ ব্যবস্থার কারণে ই-নামজারি করার সময় করণিক ভুল হবেনা, কেননা আরজেএসসি সিস্টেম থেকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে তথ্য যাচাই করা হবে সংশ্লিষ্ট নামজারির পূর্বে।
প্রসঙ্গত, প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে ভূমি উন্নয়ন কর কেমন হবে তা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে এবং প্রয়োজন হলে তা পূনঃনির্ধারন করা হয়। সর্বশেষ পূনঃনির্ধারণ করা হয়েছিল ২০১৫ সালে। ভূমি উন্নয়ন কর নির্ধারণের মূল ভিত্তি জমির ব্যবহারের ধরণ।
সর্বশেষ প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী দেখা যায়, সাধারণ অকৃষি জমি ক্ষেত্রে যে এলাকায় বাণিজ্যিক কাজে ব্যবহৃত জমির ভূমি উন্নয়ন করের হার ৩০০ টাকা এবং শিল্প কাজে ব্যবহৃত জমির ভূমি উন্নয়ন করের হার ১৫০ টাকা, সেখানে আবাসিক ও অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত জমির ভূমি উন্নয়ন করের হার মাত্র ৬০ টাকা। অন্যদিকে কৃষি জমির ভূমি উন্নয়ন কর উল্লেখযোগ্য ভাবে কম। ২৫ বিঘা পর্যন্ত কৃষি জমির কোনও ভূমি উন্নয়ন কর দিতে হয়না। সাধারণ ক্ষেত্রে ২৫ বিঘার অধিক হতে ১০ একর পর্যন্ত কৃষি জমির জন্য প্রতি শতাংশ জমির জন্য ৫০ পয়সা। কৃষি জমি ১০ একরের ঊর্ধ্বে হলে প্রতি শতাংশ ১ টাকা। এলাকা এবং ব্যবহার-ভেদে অকৃষি ও কৃষি জমির ভূমি উন্নয়ন কর কমবেশি হতে পারে যা এই সম্পর্কিত প্রজ্ঞাপনে নির্ধারণ করে দেওয়া আছে।
উল্লেখ্য, আরজেএসসি পাবলিক কোম্পানি, প্রাইভেট কোম্পানি, বিদেশি কোম্পানি, ট্রেড অর্গানাইজেশন (বাণিজ্য সংগঠন), সোসাইটি (সমিতি), পার্টনারশিপ ফার্ম (অংশীদারি কারবার) ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন প্রদান করে এবং প্রযোজ্য আইনের বিধি মোতাবেক পরিচালনা নিশ্চিত করে।
এএ