জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রথমবারের মতো ‘মিয়ানমারের পরিস্থিতি’ বিষয়ক একটি রেজুলেশন গৃহীত হয়েছে। স্থানীয় সময় বুধবার (২১ ডিসেম্বর) মিয়ানমারের বিদ্যমান রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, জরুরি অবস্থা, বন্দি মুক্তিসহ বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়। রেজুলেশনটির ওপর ভোট আহ্বান করা হলে তা ১২-০ ভোটে অনুমোদিত হয়।
জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধির অফিস থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়।
ভোটাভুটি পর্বে প্রস্তাবনার বিপক্ষে কোনো সদস্য ভোট অথবা ভেটো প্রদান করেনি। চীন, ভারত ও রাশিয়া ভোটদানে বিরত ছিল।
ভোট শেষে সংযুক্ত আরব আমিরাত, ফ্রান্স, মেক্সিকো, গ্যাবন এবং নরওয়ে তাদের বক্তব্যে রেজুলেশনটিতে রোহিঙ্গা সংকটের বিষয়টি অন্তর্ভুক্তিকরণের প্রশংসা করে এ সমস্যা সমাধানে নিরাপত্তা পরিষদের জোরালো ভূমিকার দাবি জানান। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তার বক্তব্যে রেজুলেশনটি উত্থাপন করার জন্য যুক্তরাজ্যকে ধন্যবাদ জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই রেজুলেশনটি রোহিঙ্গা বিষয়ে বাংলাদেশ সরকারের অবস্থানের প্রতি জাতিসংঘের সবচেয়ে ক্ষমতাধর অঙ্গটির শক্তিশালি সমর্থনেরই বহিঃপ্রকাশ। রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটসহ অন্যান্য বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জের প্রেক্ষাপটে গৃহীত রেজুলেশনটি রোহিঙ্গা সংকটের প্রতি বিশ্ব সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আরও সুসংহত করতে সহায়ক হবে বলে আশা করা যায়।
মিয়ানমারে নির্যাতনের শিকার হয়ে ২০১৭ সালে ৮ লক্ষাধিক রোহিঙ্গাসহ এ পর্যন্ত ১.২ মিলিয়নের অধিক রোহিঙ্গা বাংলাদেশে প্রবেশ করে। শুরু থেকেই তাদের মাতৃভূমি মিয়ানমারে নিরাপদ, টেকসই ও মর্যাদাপূর্ণ প্রতাবসনে বিশ্ব নেতৃবৃন্দের কাছে দাবি জানানো হচ্ছে।
এই প্রস্তাবনা অনুমোদিত হওয়ার ফলে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানের বিষয়টি নিরাপত্তা পরিষদের নিয়মিত কার্যকলাপের অংশ হয়ে গেলো। একইসঙ্গে এটি রোহিঙ্গা সমস্যার দ্রুত ও স্থায়ী সমাধানে বাংলাদেশের অব্যাহত প্রচেষ্টাকে আরও শক্তিশালী ও ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
রেজুলেশনটিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের আশ্রয়, নিরাপত্তা ও মানবিক সহযোগিতা দেওয়ায় বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়। রোহিঙ্গা সঙ্কটের মূল কারণগুলো চিহ্নিত করে তাদের প্রত্যাবসনে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টির জন্য মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে আহ্বান জানায় পরিষদ।
এছাড়া এ সমস্যার সমাধানে আসিয়ানের সদস্য রাষ্ট্রসমূহের ২০২১ সালে গৃহীত পাঁচ দফা ঐক্যমত্যের দ্রুত ও পূর্ণবাস্তবায়নের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। এর বাস্তবায়নে জাতিসংঘের কোনো সহযোগিতার প্রয়োজন হবে কিনা সে বিষয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব এবং মিয়ানমারবিষয়ক বিশেষ দূতকে আগামি বছরের ১৫ মার্চের মধ্যে নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রতিবেদন পেশ করার অনুরোধ করা হয়।
উল্লেখ্য, রেজুলেশনটির পেন হোল্ডার (মূল স্পন্সর) পরিষদের অন্যতম স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য। বিগত তিনমাস ধরে রেজুলেশনটির নেগোশিয়েশন শেষে আজ এটি নিরাপত্তা পরিষদে গৃহীত হয়। নিরাপত্তা পরিষদের ডিসেম্বর ২০২২ এর সভাপতি ভারত এবং তাদের সভাপতি থাকাকালীন সময়েই রেজুলেশনটি গৃহীত হলো।
এম জি