করোনা মহামারি চলাকালিন ২০২০ সালের ১৭ মে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) তথা পুঁজিবাজারের হাল ধরেন অধ্যাপক ড. শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এরপর থেকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে নিয়ন্ত্রক সংস্থা ব্যাপক উদ্যোগ নেয়।
তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের ন্যূনতম ২ শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণের বাধ্যবাধকতা নির্দেশনা জারি করে কমিশন। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় করপোরেট গভর্ন্যান্স শক্তিশালী করা, জেড ক্যাটাগরি কোম্পানিগুলোর জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা, আইপিও প্রক্রিয়া সহজ করা, ইউনিয়ন পর্যায়ে ও বিদেশে ব্রোকার হাউজের শাখা খোলার অনুমোদনসহ নানা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। যার প্রভাব পড়তে শুরু করে পুঁজিবাজারে। বিএসইসি নানামুখী কার্যকর উদ্যোগের ফলে পুঁজিবাজার এখনও একটি ভালো অবস্থানে রয়েছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
কমিশনের কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহনের কারণে ২০২০ সালের আগস্ট মাসে ‘বিশ্বসেরা’ খেতাব পায় বাংলাদেশের পুঁজিবাজার। এই মাসে বাংলাদেশের পুঁজিবাজার সারা বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে ভালো পারফরম্যান্স করে।
২০২০ সালের মাঝামাঝি সময় থেকে ২০২১ সালের অক্টোবর পর্যন্ত টানা উত্থানে ছিল দেশের পুঁজিবাজার। বিনিয়োগকারীরাও আস্থাহীনতা কাটিয়ে উঠেন। তবে ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর বিশ্ব অর্থনীতিতে নেতিবাচক হওয়ার প্রভাব পড়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে।
বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ সুরক্ষা করতে পুঁজিবাজারের জন্য চলতি বছরও যখন যে পদক্ষেপের প্রয়োজন তাই করেছে বিএসইসি।
বন্ড মার্কেট উন্নয়নে ইসলামি গ্রিন সুকুকের পাশাপাশি ১১ অক্টোবর প্রথমবারের মতো দুইটি বন্ডের লেনদেনের মাধ্যমে পুঁজিবাজারে সরকারি বন্ডে লেনদেন চালু হয়। যার ফলে পুঁজিবাজারে আকার বা বাজার মূলধন বৃদ্ধি পেয়েছে।
বছরজুড়েই কারসাজির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান ছিল বিএসইসির। প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) অর্থ লোপাট, বিনিয়োগকারীদের বিও হিসাব থেকে অর্থ তছরুপ এবং শেয়ার কারসাজির দায়ে কয়েকটি কোম্পানির উদ্যোক্তা-পরিচালক, ব্রোকার হাউজের এমডি-পরিচালক ও বিনিয়োগকারীদের শাস্তি হিসেবে অর্থদণ্ড (জরিমানা) এবং ফৌজদারি মামলা করেছে বিএসইসি।
কোম্পানিগুলোকে বোনাস লভ্যাংশের বদলে নগদ লভ্যাংশ দিতে অনুপ্রাণিত করা হয় চলতি বছরে। এছাড়া যেসব কোম্পানি টাকা তুলে হাওয়া হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোকে ডি লিস্টিংয়ের উদ্যোগ নেয় কমিশন।
টানা পতন থামাতে করোনা মহামারির মধ্যে ২০২০ সালের ১৯ মার্চ ফ্লোর প্রাইস (শেয়ারের দামের সর্বনিম্ন সীমা বেঁধে দেওয়া) আরোপ করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসই)। তা প্রত্যাহারের পর সূচকের পতন ঠেকাতে চলতি বছরে ২৮ জুলাই থেকে আবারও তালিকাভুক্ত সব শেয়ার ও মিউচুয়াল ফান্ডের ওপর ফ্লোর প্রাইস আরোপের সিদ্ধান্ত নেয় বিএসইসি। যা ২১ ডিসেম্বর প্রত্যাহার করা হয়।
এদিকে চলতি বছরের প্রথম মাসে পুঁজিবাজারে উত্থানের হাওয়া থাকলেও এরপর থেকে কেবল দরপতন। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এতসব উদ্যোগের পরও থেমে থেমে পুঁজিবাজারে দরপতন অব্যাহত থাকে সারা বছর। পুঁজি হারানোর ভয় ও উৎকণ্ঠায় বছরজুড়ে শেয়ার বিক্রি করে বাজার ছাড়েন দুই লাখ বিনিয়োগকারী। বিশ্ব অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতি, ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, শ্রীলঙ্কার পরিস্থিতি এসব কারণে পুঁজিবাজারে স্থির হতে পারেনি বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা।
তারা মনে করছেন, পুঁজিবাজারে ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীর সংখ্যা বেশি। যারা অল্পতেই ভীত হয়ে গুজব, গুঞ্জনে কান দেন বেশি। যার কারণে শেয়ার বিক্রি করে দেন। আর এতে স্থিতিশীল হতে পারে না পুঁজিবাজার। এ প্রবনতা থেকে বিনিয়োগকারীরা বেরিয়ে আসতে পারলে বাজার স্থিতিশীল হবে বলে মনে করেন তারা।
পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন
Sunbd News–ক্যাপিটাল নিউজ–ক্যাপিটাল ভিউজ–স্টক নিউজ–শেয়ারবাজারের খবরা-খবর
সানবিডি/এসকেএস