আমি যখন ক্লাস নাইনে পড়ি তখন থেকেই পথশিশুদের নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হয়। সাথে আমার বন্ধু সিয়াম, ইউসুফ, রাফিক ও সামি আগ্রহ পোষণ করে। তারপর আমরা শীতবস্ত্র সংগ্রহ করে একদিন সকালে নগরীর বিভিন্ন বস্তি এলাকায় সাইকেল নিয়ে বের হয়। পথের মধ্যে যে সকল পথশিশুকে দেখি তাদেরকে আমরা শীতবস্ত্র দিই। এভাবেই আমাদের পথশিশুদের নিয়ে কাজ করার পথচলা শুরু হয়। রাজশাহীর পথশিশুদের সংগঠন অর্গানাইজেশন ফর দ্যা স্ট্রিট চিলড্রেন’র হিউম্যান রির্সোস ডেভোলপমেন্ট অফিসার আকাশ মজুমদার এসব কথা বলেন।
আকাশ মজুমদার আরো বলেন, এই সকল পথশিশুরাও প্রচন্ড আগ্রহী স্কুলে যেতে। তারাও পড়তে চাই স্কুলে। চাই শিক্ষিত হতে। বড় মানুষ হতে। তাদের মনেও অনেক কষ্ট। স্কুলে না যেতে পারার। চায়ের দোকানে কাজ করার। ভালো পোশাক পরতে না পারার। আমরা চাই এই পথশিশুদের স্কুলে যাবার সুযোগ তৈরি করতে। তাদেরকে ভালো মানুষ হিসেবে তৈরি করতে। আমরা চাই এই সংগঠনটি জাতীয় পর্যায়ে পথশিশুদের অধিকার আদায়ে কাজ করবে।
বর্তমানে আমাদের সংগঠনে ১০০জন সদস্য আছে। যারা নিয়মিত কাজ করছে এই পথশিশুদের জন্য। পথশিশুদের জন্য আর্থিক প্রয়োজন মেটাতে আমরা বিভিন্ন উৎসবে রঙ তুলির আয়োজন করি। পাশাপাশি খান তেঁহারি ঘর পথশিশুদের জন্য সাহায্য করে । এছাড়া আমাদের সংগঠনের সকল সদস্যদের আর্থিক সাহায্যের মাধ্যমে আমরা তাদের সাহায্য করি।’
রাজশাহী নগরীর বিভিন্ন এলাকার পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছে অর্গানাইজেশন ফর দ্যা স্ট্রিট চিলড্রেন নামের একটি সেচ্ছাসেবী সংগঠন। ২০১৪ সালে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের নবম শ্রেণির কয়েকজন শিক্ষার্থী মিলে এ সংগঠনটি তৈরি করে। এই সকল শিক্ষার্থী তাদের নিজেদের অর্থ ব্যয়ে বিভিন্ন উৎসবে পথশিশুদের নিয়ে ঘুরতে যায়। তাদেরকে স্কুলের প্রতি উদ্বুদ্ধ করতে শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে স্কুল নিমার্ণ করে। এই সকল শিশুদের স্কুলের পড়ার সুবিধা বুঝাতে তারা নিয়মিত সে এলাকায় যায়। তাদের সাথে আাড্ডা দিতে দিতে একটা সময় পথশিশু ও কর্মজীবী শিশুদের সাথে তাদের সখ্যতা তৈরি হয়। তারপর তাদেরকে এই স্কুলে পড়ার প্রতি আগ্রহী করে তোলে।
এই সকল পথশিশুদেরকে নিয়ে পহেলা বৈশাখে বনভোজনের আয়োজন করা হয়। তাদেরকে চিড়িয়াখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এতে তাদের সিটি কর্পোরেশনও সহযোগিতা করে। কারণ চিড়িয়াখানায় প্রবেশের টিকিটমূল্য প্রদান করতে হয় না।
সংগঠনের সভাপতি ইউসুফ আলী মাহি বলেন, আমরা সকলে একসাথে ছিন্নমূল বাচ্চাদের জীবনের সংকট নির্মূল করার প্রচেষ্টায় কাজ করছি। এর মধ্যে তাদের প্রাথমিক শিক্ষা, কম্পিউটার শিক্ষা প্রদানে, বস্ত্রাদি বিতরণ ও আচরণ পরিবর্তন করে মার্জিত আচরণ করার চেষ্টায় কাজ করছি। আমাদের সাংগঠনিক স্কুল পুষ্পকাননে প্রাথমিক শিক্ষার পাশাপাশি, কারিগরি শিক্ষা, ছবি আকাঁনো, গান শেখানো ও ধর্মীয় শিক্ষা প্রদান করা হয়। সেখানে নগরীর টুলটুলী পাড়ার ৩০ জন পথশিশুদের শিক্ষা প্রদান করা হয়। রাজশাহীতে আমরাই প্রথম পথশিশুদের বিহ্যাভেয়ার ডেভোলপমেন্টের জন্য কাজ করছি। আমাদের এই কাজের উদ্দেশ্য বাচ্চাদের ভবিষৎ যেন গোঁছানো হয়। আমরা চাই আগামী ১০বছরের মধ্যে এ সংগঠনটি রাজশাহীর মধ্যে সকল পথশিশুদের সেবা দিয়ে সুন্দর ও আলোকিত জীবন গঠন করতে সক্ষম হয়।
সানবিডি/ঢাকা/আহো