দেশের শীর্ষ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শেষ হয়েছে। এখন তৃণমূলের প্রতিটি যুদ্ধাপরাধীকে খুঁজে বের করে বিচার করতে হবে। একজন যুদ্ধাপরাধীরও বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের সংগ্রাম আব্যাহত থাকবে। যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা সংগঠন ‘সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম’র চতুর্থ জাতীয় সম্মেলনে বক্তৃতায় অংশ নিয়ে নেতৃবৃন্দ এসব কথা বলেন।
শনিবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি মিলনায়তনে ‘যুদ্ধাপরাধী মুক্ত করবো দেশ, গড়বো মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ’ শীর্ষক স্লোগানে দুই পর্বের এই সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
উদ্বোধনী পর্বে সংগঠনের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) কে এম শফিউল্লাহ বীর উত্তমের সভাপতিত্বে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- সাবেক প্রধান বিচারপতি ও বর্তমান আইন কমিশনের চেয়ারম্যান এ বি এম খায়রুল হক, পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সভাপতি বিচারপতি এ এফ এম মেজবাহ উদ্দীন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভিসি (শিক্ষা) অধ্যাপক ড. নাসরিন আহমেদ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ, ইক্বরা সভাপতি মাওলানা ফরিদউদ্দিন মাসউদ, সংগঠনের ভাইস চেয়ারম্যান অবসরপ্রাপ্ত কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরী প্রমুখ। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের মহাসচিব হারুন হাবীব। শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন মেজর (অব.) জিয়াউদ্দীন আহমেদ।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নের কথা তুলে ধরে বিচারপতি খায়রুল হক বলেন, বাংলাদেশ সকলের জন্য। সকলের কথাই আমাদের শুনতে হবে। সকলে যে যার যার ধর্ম পালন করতে পারে। এমনকি যে ধর্ম মানেও না, দেশটি তারও। আল্লাহ কিন্তু তাকেও খাওয়াচ্ছেন, পরাচ্ছেন একং প্রতিপালন করছেন- সে কথাগুলো আমাদের মনে রাখতে হবে।
সব অপরাধীকেই বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য সকল অপরাধীকেই বিচারের আওতায় আনতে হবে। শুধু যুদ্ধাপরাধ বলে কথা নয়, যে কোনো অপরাধীরই বিচার হওয়া বাঞ্ছনীয়। আইনের শাসন তা-ই বলে। এ সময় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুন্যালের বিচারকার্য নিয়ে তার সহকর্মীদের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করেন সাবেক এই প্রধান বিচারপতি।
অনুষ্ঠানে কে এম শফিউল্লাহ বলেন, যুদ্ধাপরাধের বিচারের জন্যই এই সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম গঠন করা হয়েছিল। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরু করতে পারাই আমাদের সবচেয়ে বড় অর্জন। এ পর্যন্ত অনেকের বিচারকার্য শেষ হয়েছে।
তিনি বলেন, শুধু কিছু যুদ্ধাপরাধীর বিচার করলে হবে না। তারা মুক্তিযোদ্ধাদের কোন কোন জায়গায় ঢুকে নিয়ন্ত্রণ করছে, সেখান থেকে খুঁজে বের করতে হবে। তাদের প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
ফোরামের চেয়ারম্যান বলেন, যুদ্ধাপরাধীমুক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নতুন বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন শুরু করেছিলাম, এ আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
এর আগে সারাদেশ থেকে আগত প্রতিনিধিদের নিয়ে নেতৃবৃন্দ সকালে জাতীয় পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে জাতীয় সম্মেলনের সূচনা করেন। এরপর জাতীয় সঙ্গীত, ধর্মগ্রন্থসমূহ থেকে পাঠ এবং উদ্বোধনী সঙ্গীত পরিবেশ করা হয়।
অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় পর্বে দুপুরে সংগঠনের প্রতিবেদন প্রকাশ করেন ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব। এছাড়া সাত বিভাগ থেকে দুইজন করে প্রতিনিধি বিভাগীয় প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। বিকালে কর্নেল আবু ওসমান চৌধুরীর (অব.) তত্ত্বাবধানে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচিতদের শপথ পাঠ করান কে এম শফিউল্লাহ। কনভেনশনের ঘোষণা পাঠ করেন ম. হামিদ।