শসা বিক্রেতাকে ঘিরে রয়েছেন বিভিন্ন বয়সের সাত-আটজন মানুষ। শসা বিক্রেতা আলিমুজ্জামান একের পর এক শসা ছিলছেন, কেটে লবণ মেখে ক্রেতাদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। ভিড় কমছেই না। ঘণ্টা না যেতেই তার কাছে থাকা সব শসা বিক্রি হয়ে যায়। অল্প সময়ের মধ্যেই সব বিক্রি হয়ে যাওয়ায় বেশ উৎফুল্ল দেখা গেল আলিমুজ্জামানকে।
এ দৃশ্য রোববার কেরানীগঞ্জে নবনির্মিত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সামনের। আলিমুজ্জামান বললেন, ‘এখানে (কেরানীগঞ্জের রাজেন্দ্রপুর) নতুন কারাগার হওয়ায় আমার মতো অনেকেই নানা ধরনের ব্যবসা করতে পারবে। পাল্টে যাবে এলাকার চিত্র।’ রোববার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কারাগারটি উদ্বোধন করেন।
উদ্বোধন উপলক্ষে ওই এলাকায় ব্যাপক জনসমাগম ঘটে। শুধু আলিমুজ্জামান নন, ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার কেরানীগঞ্জে স্থানান্তর হওয়া নিয়ে স্থানীয়রা বেশ উচ্ছ্বসিত। তাদের ধারণা, কারাগারটিকে কেন্দ্র করে এলাকার সার্বিক চিত্র পাল্টে যাবে। দ্রুত উন্নয়ন ঘটবে এলাকার। আশপাশে গড়ে উঠবে দোকানপাট, মার্কেট ও রেস্টুরেন্ট। লোকজনের ব্যাপক সমাগম ঘটবে। যোগ হবে ব্যবসা-বাণিজ্যে নতুন মাত্রা। সৃষ্টি হবে কর্মসংস্থান।
তবে উন্নয়নের পাশাপাশি অপরাধও বাড়তে পারে বলে কেউ কেউ আশংকা করছেন। তারা বলছেন, ছিনতাই, ডাকাতিও বাড়তে পারে। কারণ কারাগারের আশপাশের সড়ক ফাঁকা। কারাগারে বন্দিদের দেখতে আসা স্বজনসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ ছিনতাইয়ের কবলে পড়তে পারেন।
এ জন্য ওই এলাকায় পুলিশের নজরদারি বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন অনেকে। কদমপুরের বাসিন্দা আশাদুল বলেন, কারাগারে প্রতিদিন প্রচুরসংখ্যক লোকজন আসা-যাওয়া করবে। এটাকে কেন্দ্র করে আশপাশে খাবার হোটেল, ফাস্টফুড, পোশাকের দোকানসহ বিভিন্ন ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে।
অনেক ভাসমান লোকও এখানে আসা-যাওয়া করবে। এতে করে চুরি-ছিনতাই বাড়বে বলে তার ধারণা। রাজেন্দ্রপুরের বাসিন্দা আবু বকর যুগান্তরকে বলেন, কেন্দ্রীয় কারাগারকে কেন্দ্র করে এই এলাকা জমজমাট হয়ে উঠবে। ইতিমধ্যে অনেকে দোকানপাট নির্মাণ শুরু করেছেন। কারা অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুরে ১৯৪ দশমিক ৪১ একর জমির ওপর তৈরি হচ্ছে নতুন কারাগার।
এর মধ্যে ৩১ একর জমিতে পুরুষ-১ কারাগারটি রোববার উদ্বোধন হল। অত্যাধুনিক এ কারাগারটির ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ বন্দি। একই ধারণক্ষমতার পুরুষ কারাগার-২ নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে এখানে। এ ছাড়া ২৭০ বন্দি ধারণক্ষমতাসম্পন্ন নারী কারাগারের কাজ চলছে। মোট ৩টি কারাগারের প্যারামিটার দেয়ালের বাইরে কারা সীমানায় ২০০ শয্যার হাসপাতাল নির্মাণেরও পরিকল্পনা রয়েছে। এ হাসপাতাল জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, কেন্দ্রীয় কারাগারের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর থেকেই ওই এলাকার জমির দাম বাড়া শুরু করেছে। কারাগারের আশপাশে অনেকে নিচু জায়গায় বালু ভরাট করা শুরু করেছেন। তারা বহুতল মার্কেট, শপিং মল করার চিন্তা করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার উদ্বোধন করবেন- এ খবরে আগে থেকেই আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে শুভেচ্ছা জানিয়ে রং-বেরঙের ব্যনার-ফেস্টুন টানায় মোড়ে মোড়ে। সড়ক-মহাসড়কের গাছগুলো দৃষ্টিনন্দন করতে গোড়ায় লাগানো হয়েছে লাল-সাদা রং।
তোরণও নির্মাণ করা হয় বেশ কয়েকটি। কেরানীগঞ্জের তেঘরিয়া ইউপি চেয়ারম্যান মো. জজ মিয়া যুগান্তরকে বলেন, কারাগারটি স্থাপনের ফলে স্থানীয় বাসিন্দাদের আর্থসামাজিক উন্নয়ন ঘটবে। বাড়ির মালিকরা ভাড়াটিয়া পাবে। নতুন নতুন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে উঠবে। এতে করে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে এলাকাবাসীর।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস