দেশের শস্যভান্ডারখ্যাত উত্তরের জেলা দিনাজপুরে নতুন আলু বাজারে তুলে প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম পাচ্ছেন না কৃষকরা। বর্তমানে ১১-১২ টাকা কেজি দরে আলু বিক্রি করছেন তারা। অথচ ২৬ টাকা কেজিতে এসব আলুর বীজ কিনেছেন কৃষকরা। পাশাপাশি সার ও কীটনাশকের দাম বাড়ায় এবার উৎপাদন খরচ বেড়েছে। সেইসঙ্গে পরিবহন খরচ দিয়ে বাজারে আলু এনে লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের। এ অবস্থায় পুঁজি হারানোর শঙ্কায় রয়েছেন অনেক কৃষক।
এদিকে, দাম কম পাওয়ায় হিমাগার থেকে গত বছরের আলুও তোলেননি অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ী। নির্ধারিত সময়ের বেশি সময় ধরে হিমাগারে আলু রাখায় লোকসান গুনতে হচ্ছে উভয়ের।
কৃষকরা জানিয়েছেন, ২৬ টাকা কেজিতে বীজ কিনে জমিতে রোপণ করেছেন। সেই আলু ১১-১২ টাকায় বিক্রি করছেন। উৎপাদনসহ যাবতীয় খরচ দিয়ে আলু চাষ করে এখন লোকসান গুনতে হচ্ছে তাদের।
এ বিষয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে জেলায় ৪৮ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। আবাদ হয়েছে ৪৭ হাজার ৩৯০ হেক্টর জমিতে। এসব জমিতে ১০ লাখ ৭০ হাজার ৩২৬ মেট্রিক টন আলু উৎপাদন হয়েছে। এর মধ্যে ঠাকুরগাঁওয়ে ২৭ হাজার ৬৭৭ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে সাত লাখ ৪০ হাজার ৫৮৪ মেট্রিক টন। পঞ্চগড়ে ৯ হাজার ৮৭০ হেক্টর জমিতে উৎপাদন হয়েছে দুই লাখ ১৭ হাজার ৬১০ মেট্রিক টন।
২০২২-২৩ অর্থবছরে দিনাজপুর অঞ্চলের তিন জেলায় ৭৯ হাজার ৯১৪ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। ইতোমধ্যে ৭৯ হাজার ৭৭৫ হেক্টর জমিতে আলু চাষাবাদ হয়েছে। এর মধ্যে দিনাজপুরে লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৪ হাজার ৯৬৪ হেক্টর জমি। তবে উৎপাদন হয়েছে ৪৩ হাজার ৮৮৫ হেক্টর। লক্ষ্যমাত্রার কম জমিতে আলু উৎপাদন হলেও ফলনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা কৃষি অধিদফতরের।
জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্র জানায়, জেলায় হিমাগারের সংখ্যা ১৩টি। সবগুলো হিমাগার মিলিয়ে আলু ধারণক্ষমতা এক লাখ ১৬ হাজার ১০ মেট্রিক টন। এর মধ্যে ৬৫ শতাংশ আলু বীজের। বাকিগুলো খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। পরিকল্পনা অনুযায়ী উৎপাদন এবং আলুর বহুমুখী ব্যবহার সম্ভব হলে কৃষক ও ব্যবসায়ীরা লাভবান হতেন।’
আলু চাষ করে পুঁজি হারানোর শঙ্কায় আছি জানিয়ে সদর উপজেলার উলিপুর এলাকার কৃষক ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে বাজারে আলুর কেজি ১১-১২ টাকায় বিক্রি করছি। এতে এক বিঘা জমির আলু বিক্রি করে ৪০-৪৫ হাজার টাকা পাওয়া যাবে। অথচ আলু চাষে প্রতি বিঘায় ৫০-৫৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলে আমার লোকসান হচ্ছে। যদি ১৫-১৬ টাকা দরে বিক্রি করতে পারতাম তাহলে লোকসান না হলেও খরচটা উঠতো।’
প্রতি বছর লাভের আশায় আলু চাষ করে লোকসান দিচ্ছি উল্লেখ করে এই কৃষক বলেন, ‘প্রতি বছর লোকসান দিতে হয়। বিঘাপ্রতি কোনও কোনও বছর ১০-৩০ হাজার টাকা লোকসান হয়। আলু চাষ করে এভাবে কতবার লোকসান দেবো? আগামী বছর আলুর পরিবর্তে অন্য ফসল চাষ করবো।’
এনজে