দূষণ, দখল, ভরাটের ফলে ঢাকার চারপাশের নদীগুলো মৃতপ্রায় এবং অস্তিত্ব সঙ্কটে! শহরে যে নিম্নাঞ্চল রয়েছে, তার প্রায় ৭০ ভাগই ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে। এ ভরাট অব্যাহত থাকলে ২০৩০ সালের মধ্যে হারিয়ে যাবে ঢাকার শতভাগ নিম্নাঞ্চল।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) প্রকাশিত এক পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এমন তথ্যই প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) নিজ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে পবা এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, নদীর মতোই দখল-দূষণের শিকার হয়ে মৃত্যুর পথে এখন রাজধানীর লেকগুলো। ২০১৩ সালের জুন মাস থেকে চলতি (২০১৬) বছরের মার্চ মাস পর্যন্ত পবার নিয়মিত এ পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, করাইল বস্তি এলাকায় গুলশান-বনানী লেক ভরাট ও দখলের মাত্রা সবচেয়ে বেশি। এ বস্তির পয়ঃবর্জ্য সরাসরি এ সব লেকে ফেলা হচ্ছে। ফলে ভরাট হচ্ছে, এসব লেক। এ নার্সারি স্থাপনের মাধ্যমেও ভরাট করা হচ্ছে এ লেকগুলো।
প্রতিবেদনে বলা হয়, বনানী, গুলশান, বারিধারা, বাড্ডা, কালাচানপুর এলাকায় কেন্দ্রীয়ভাবে পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনের কোনো ব্যবস্থা নেই। পয়ঃবর্জ্য সেপটিক ট্যাংকের মাধ্যমে পরিশোধনের নিয়ম থাকলেও এসব এলাকায় বাড়ির মালিকরা তাদের পয়ঃবর্জ্য লেকে ফেলে দূষিত করছেন এর পানি।
অপরদিকে, গৃহস্থালি বর্জ্য, পুরনো ভবন সংস্কার থেকে সৃষ্ট বর্জ্য ফেলে ভরাট করা হচ্ছে, রাজধানীর গুলশান-বারিধারা লেক। এবং ভরাট শেষে সেখানে গড়ে তুলা হচ্ছে নার্সারী। তারপর বাঁশের ঘরসহ আধা-পাকা ঘর তুলে পোক্ত করা হচ্ছে সেই দখল দারিত্ব।
এভাবেই রাজধানীর লেকগুলো ক্রমেই দূষণ ও দখলের শিকার হচ্ছে। পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক যে, শুধু নিম্নাঞ্চলই নয়, ঢাকা শহরের অস্তিত্ব রক্ষাই এখন প্রশ্নের বিষয়।
প্রসঙ্গত, পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫ এর আওতায় গুলশান-বারিধারা এবং গুলশান-বনানী লেক দুটিকে 'প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন' এলাকা ঘোষণা করে বিভিন্ন কার্যাবলি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। প্রাকৃতিক জলাধার সংরক্ষণ আইন-২০০০ এর ৫ ধারায় প্রাকৃতিক জলাধারের প্রকার পরিবর্তনে বাধা-নিষেধ রয়েছে। অথচ এমন সংকটাপন্নবস্থাতেও এসব আইনের কোনো কার্যকর প্রয়োগ দেখা যায় না।
ঢাকার অস্তিত্ব রক্ষার্থে লেকগুলোর দূষণ ও দখল বন্ধে পবা’র সুপারিশ
রাজধানী ঢাকা রক্ষার্থে এর লেকগুলোর দূষণ ও দখল বন্ধে পবা কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে রয়েছে- ঢাকার লেকগুলোর ব্যবস্থাপনা সিটি কর্পোরেশনের ওপর ন্যস্ত করা; গুলশান-বারিধারা এবং গুলশান-বনানী লেক ভরাট ও দখলরোধে রাজউক কর্তৃক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং লেকের ভরাট ও দখল করা অংশ পুনরুদ্ধার ও নির্মিত স্থাপনা অপসারণ করে লেক আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা; গৃহস্থালি এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্য যাতে গুলশান-বারিধারা এবং গুলশান- বনানী লেকে ফেলা না হয়, সে জন্য ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা এবং করাইল বস্তির ঝুলন্ত টয়লেট উচ্ছেদ করা।
এছাড়াও ধানমণ্ডি লেক ভরাট ও দখলরোধে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা; রমনা লেক, পার্ক সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার লক্ষ্যে গণপূর্ত অধিদপ্তর কর্তৃক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা; ঢাকা মহানগরীর পয়ঃবর্জ্য পরিশোধনে ঢাকা ওয়াসা কর্তৃক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা; শিল্পপ্রতিষ্ঠান এবং হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বর্জ্য যাতে লেকে ফেলা না হয়, সে লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
পবা চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে সংবাদ সম্মেলনে মূল প্রতিবেদনের ওপর বক্তব্য রাখেন- সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক প্রকৌশলী মো. আবদুস সোবহান। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ডা. লেলিন চৌধুরী, সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তারিক হাসান মিঠুল, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলনের সভাপতি রাজিয়া সামাদ, বিআইডব্লিউটিএ-র সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, প্রকৌশলী আবদুস সাত্তার প্রমুখ।