কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে ছাড়িয়েছে। ২০২২ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের পরিমাণ ৩.০৩৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড করা হয়েছে, যা ২০২১ সালের তুলনায় ৩৮.৭১ শতাংশ বেড়েছে।
২০২১ সালে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ছিল ২.১৮৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বুধবার (২৫ জানুয়ারি) ঢাকাস্থ কোরিয়ান দূতাবাস কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের বরাত দিয়ে এ তথ্য জানায়।
বাংলাদেশে নিযুক্ত দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূত লি জ্যাং-কিউন বলেন, ২০২৩ সাল কোরিয়া ও বাংলাদেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী, যা কোভিড-১৯ মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ সত্ত্বেও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জগুলি কাটিয়ে দুই দেশের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যে গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে আসবে।
রাষ্ট্রদূত আশা প্রকাশ করেন যে, ব্যবসায়িক খাত বাংলাদেশের সঙ্গে কোরিয়ার অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য নীতির সুবিধা নেবে। যা ২০০৮ সাল থেকে বাংলাদেশের পণ্যের ৯৫ শতাংশ কোরিয়ার বাজারে শুল্ক ও কোটামুক্ত প্রবেশাধিকার প্রদান করে। কোরিয়ার নন-ট্র্যাডিশনাল বাজারে রপ্তানিতে বাংলাদেশ সরকার থেকে অন্তত ৪ শতাংশ নগদ প্রণোদনার সুবিধা থাকে।
কোরিয়া ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনের পরিসংখ্যানের তথ্য মতে, কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ২২.৯ শতাংশ বেড়েছে, যা এখন ৬৭৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ২০২১ সালে যা ছিল ৫৫২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। কোরিয়ার রপ্তানি ২০২১ সালে ১.৬৩৬ বিলিয়ন থেকে বেড়ে ২০২২ সালে ২.৩৫৭ বিলিয়ন হয়েছে, অর্থাৎ ৪৪.১ শতাংশ বেড়েছে। কোরিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে, এটি ২০০৭ সালে প্রথমবারের মতো ১০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার অতিক্রম করেছিল এবং ২০১১ সালে ২০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং ২০১৩ সালে ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে পৌঁছেছিল। তার পর প্রায় এক দশক ধরে এটি স্থবির ছিল এবং ২০২০ সালে যা ২.৯ শতাংশ সঙ্কুচিত হয়েছিল।
কোভিড-১৯ মহামারির বিরূপ প্রভাবের কারণে ৩৯৩ মিলিয়ন মার্কিন ডলার নেমেছিল। তবে, ২০২১ সাল ঘুরে দাঁড়ানোর সাক্ষী ছিল, যা ৫৫২ মিলিয়নের একটি বড় অর্জন প্রত্যক্ষ করেছে। যার উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধির পরিমাণ ওই বছরে ছিল ৪০.৪ শতাংশ এবং ২২.৯ বৃদ্ধির সঙ্গে ২০২২ সালে ৬৭৮ মিলিয়নের আরেকটি রেকর্ড করেছে।
কোরিয়াতে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি আইটেমের মধ্যে রয়েছে, তৈরি পোশাক, খেলাধুলা ও অবকাশ যাপনের সামগ্রী, ব্রোঞ্জস্ক্র্যাপ ইত্যাদি। তৈরি পোশাক কোরিয়ায় মোট রপ্তানির ৮৩.২ শতাংশ, যা ২০২২ সালে মোট ৫৩৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেকর্ড করেছে। বছরে ২৫.৮ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এছাড়া কাগজপণ্য এবং খাবারে আইটেম আকাশ ছোঁয়া ১৬৮.৬ শতাংশ এবং ১৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কাগজের পণ্য এবং খাবারে আইটেম যথাক্রমে ৩.৬ ও ৩.১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্রোঞ্জ স্ক্র্যাপের রপ্তানি ৪১.৮ শতাংশ বেড়ে ১৭.৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে।
বাংলাদেশে কোরিয়ার রপ্তানি ২০১১ সালে ছিল ১.৬৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এবং প্রায় এক দশক ধরে ১.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে সিমাবদ্ধ ছিল। ২০২০ সালে কোভিড-১৯ মহামারি চলাকালীন এটি আরও নিম্নমুখী হয়ে ১.০৩ বিলিয়ন ডলারে নেমে যায়। এক দশক স্থবিরতার পরে, এটি অবশেষে ২০২১ সালে আবার ১.৬৩৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে এসে দাঁড়ায়। যা বছরে ৫৮.৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং ২০২২ সালে এটি ২.৩৫৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার বেড়ে রেকর্ড গড়েছে, যার বৃদ্ধির হার ৪৪.১ শতাংশ।
তবে ২০২১ এবং ২০২২ সালে বাংলাদেশে কোরিয়ার রপ্তানি বৃদ্ধির প্রধান কারণ ছিল কোরিয়া থেকে বাংলাদেশের ডিজেল আমদানি বৃদ্ধি, যার হার ছিল ৭০৩.৮.৮ শতাংশ। ২০২২ সালে ৯৭২ মিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে। ২০২১ সালে কোরিয়ার বাংলাদেশে ডিজেল রপ্তানি ৪৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছিল ১২১ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
বাংলাদেশে কোরিয়ার অন্যান্য প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলি হলো—যন্ত্রপাতি, পেট্রো কেমিক্যালপণ্য, ইস্পাত ও কীটনাশক। সেগুলো ২০২২ সালে হ্রাস পেয়েছে; ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের পর প্রধানত দেশের বৈদেশিক রিজার্ভের পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক আরোপিত আমদানি বিধি-নিষেধের কারণে বলে মনে করা হয়।
এএ