বাংলাদেশের কৃষিপণ্য নিয়ে সরাসরি মধ্যপ্রাচ্য যাবে জাহাজ
নিজস্ব প্রতিবেদক প্রকাশ: ২০২৩-০১-৩০ ২১:৫৯:৩১
বাংলাদেশ সরাসরি মধ্যপ্রাচ্যে শাক-সবজি ও ফলমূল পাঠাতে পারবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক। সোমবার (৩০ জানুয়ারি) সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে কৃষিপণ্য ও আলু রপ্তানির অগ্রগতিবিষয়ক সভার শুরুতে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।
মন্ত্রী বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে কৃষিপণ্য রপ্তানিতে আমাদের প্রতিযোগী পাকিস্তান, ভারত ও তুরস্ক। ভারত আলু রপ্তানি করে। এসব দেশের পণ্যবাহী জাহাজ সরাসরি দুবাইসহ মধ্যপ্রাচ্যের বন্দরগুলোতে যেতে পারে। কিন্তু আমাদের জাহাজ সিঙ্গাপুর হয়ে যেতে হয়।
তিনি বলেন, এরইমধ্যে দুবাই বন্দরের সঙ্গে সমঝোতা হয়েছে। সম্প্রতি আমি দুবাই গিয়েছিলাম। এ নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আগেই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। আমরা তাতে সহায়তা করেছি। মধ্যপ্রাচ্যে সরাসরি আমরা শাক-সবজি ফলমূল পাঠাতে পারব। সিঙ্গাপুর না হয়ে সরাসরি যেতে পারলে সবজি নিয়ে চার-পাঁচ দিনে আমাদের জাহাজ দুবাই যেতে পারবে।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনে জাতির কাছে আমরা অঙ্গীকার করেছিলাম যে, দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তুলব। সত্যিকার অর্থে এখন মানুষ না-খেয়ে থাকে না। অন্তত দুবেলা ভাত খেতে পারে। আমরা সেই লক্ষ্যে পৌঁছেছি। এখন আমাদের লক্ষ্য মানুষকে পুষ্টিসমৃদ্ধ নিরাপদ খাদ্য দেওয়া। অর্থাৎ সার্বিকভাবে খাদ্যনিরাপত্তার বিভিন্ন দিকগুলোতে আমরা জোর দেব এবং সর্বাত্মকভাবে আমরা তা বাস্তবায়ন করতে চাই।
তিনি বলেন, খাদ্যনিরাপত্তা বলতে আমরা বুঝি, প্রয়োজনীয় দানাজাতীয় ও অন্যসব খাবার যাতে বাজারে পর্যাপ্ত থাকে, তা নিশ্চিত করা। অনেক সময় খাবার থাকলেও আয় থাকে না। কম আয়ের কারণে অনেক মানুষ না খেয়ে থাকে। এমন হলে কোনো দেশ নিজেকে খাদ্য নিরাপদ বলে দাবি করতে পারে না।
তিনি আরও বলেন, আমেরিকার মতো দেশেও ক্রিসমাসের সময় বিনামূল্যে খাবার দেওয়া হয়। শিকাগোতে ক্রিসমাসের আগে আমি দেখেছি। এ খাবার শুধু কালোরাই নেয় না, শ্বেতাঙ্গরাও নেয়। ওই দেশে কম দামে খাবার কিনে খেতে স্ট্যাম্প দেওয়া হয়। এতে বোঝা যায়, সেখানে পর্যাপ্ত খাবার থাকলেও খাদ্যনিরাপত্তা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। আমেরিকাতেও কমদামে ও ভর্তুকিতে মানুষকে খাবার দিতে হয়। কম আয়ের ও বেকারদের জন্য তারা এটা করে।
মন্ত্রী বলেন, খাদ্যনিরাপত্তার ক্ষেত্রে আমাদের অনেকটা অর্জন হয়েছে। চর ও হাওর এলাকাকে আমরা বলতাম কৃষিতে অনুন্নত। তাদের পরিবেশও প্রতিকূল। কিন্তু সেসব এলাকার মানুষ দুবেলা খেতে পারে। এখন আমাদের সামনে চ্যালেঞ্জ হলো পুষ্টিসমৃদ্ধ খাবার সরবরাহ করা। তিনটি বিষয় সামনে রেখে আমরা অগ্রসর হচ্ছি। কৃষির আধুনিকীকরণ করব, যান্ত্রিকীকরণ করব এবং বাণিজ্যিকীকরণ করব।
তিনি বলেন, স্থানীয় বাজার ও আন্তর্জাতিক বাজার দুটোতেই জোর দিতে হবে। আন্তর্জাতিক বাজারে যেতে হলে নিরাপদ খাদ্য নিশ্চিত করতে হবে। খাদ্যের মান বজায় রাখতে হবে। আমরা সেই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি, যদিও করোনা মহামারির কারণে দুই থেকে আড়াই বছর আমরা অনেক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। কৃষিকে লাভজনক পেশায় নিয়ে যাওয়া সবসময় আমাদের লক্ষ্য ছিল। কৃষি থেকে লাভ করা, আয় করা ছিল আমাদের উদ্দেশ্য।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, স্থানীয় বাজারে পণ্য বিক্রি করে কৃষকরা সবসময় পর্যাপ্ত দাম পান না। সবজি-ডিম ও মাছের উৎপাদন বেশি হলেও কৃষকরা তা বিক্রি করতে পারেন না। এজন্য আন্তর্জাতিক বাজারকে লক্ষ্য বানাতে হবে। ২০২২-২৩ সালে আমরা দুই হাজার মিলিয়ন ডলার আয় করার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিলাম কৃষি থেকে।
আন্তর্জাতিক বাজারে খাদ্য রপ্তানি করতে হলে মান বাড়াতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, শ্যামপুরে আমাদের একটি প্যাকিং হাউস আছে। কিন্তু লোকেশন ভালো না। এর আধুনিকায়ন চলছে। পূর্বাচলে আরেকটি প্যাকিং হাউস করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই একর জমি দিয়েছেন। সেখানে একটি ল্যাবরেটরিও হবে। এর সার্বিক পরিকল্পনা শেষ। দ্রুতই এটি একনেকে যাবে। তাড়াতাড়ি কাজ শুরু করতে পারব বলে আশা করছি।
এএ