ভয়াবহ পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়ছে কক্সবাজার
আপডেট: ২০১৬-০৬-২০ ১০:৫৭:৫৩
কক্সবাজার জেলাব্যাপী চলছে নির্বিচারে পাহাড় কাটা। সে সাথে অব্যাহত আছে বৃক্ষ নিধন, জলাশয় ভরাট ও অপরিকল্পিত নগরায়ন। ফলে জলবায়ুর পরিবর্তনের প্রভাবে পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে পুরো কক্সবাজার। প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা হিসেবে চিহ্নিত কক্সবাজার দিন দিন ঝুঁকির সম্মুখীন হলেও পরিবেশ বিধ্বংসী এসব কর্মকা- রোধে প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলে অভিযোগ করেন স্থানীয়রা।
জানা যায়, বিশ্বের দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত নগরী কক্সবাজারকে আধুনিকায়ন (!) করতে গত কয়েক বছরে নির্বিচারে কাটা হয়েছে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী অসংখ্য পাহাড়। মানুষের বেঁচে থাকার জন্য অতি জরুরী অক্সিজেন সরবরাহকারী বৃক্ষ নির্বিচারে কেটে সাবাড় করা হয়েছে বনাঞ্চল। এখনো এ ধারা অব্যাহত রয়েছে। সেই সাথে পর্যটন শহরে গড়ে উঠছে শত শত অপরিকল্পিত বহুতল ভবন। এখানে নেই কোন উন্নত ড্রেনেজ ব্যবস্থা। একটু বৃষ্টি হলেই সরু ড্রেনগুলো পাহাড় কাটা মাটি এসে ভরে যায়। শহরে যত্রতত্র নালা, ড্রেন দখল-বেদখল হয়েছে। দখলদারদের তালিকাও হয়েছে একাধিক। ড্রেনেই স্থান পেয়েছে দোকানপাট, বাসাবাড়ি, ময়লা-আবর্জনার স্তুপ। পৌর কর্তৃপক্ষের খবর নেই এদিকে।
এসব কারনে একদিকে পৌর শহরে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পাশাপাশি স্থানীয়রা আশংকা করছেন, এ পরিস্থিতি বিদ্যমান থাকলে কক্সবাজারে মারাত্মকভাবে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটতে পারে।
সৈকতে ব্যবসায়ী খাইরুল আমিন, কলাতলি আর্দশ সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন সমবায় সমিতির সেক্রেটারী নাছির উদ্দিন জানিয়েছেন, কক্সবাজার পর্যটন শহরে হাতেগুনা কয়েকটি ছাড়াও বাকি ভবন গুলো উন্নত প্রযুক্তি, টেকসই নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করা হয়নি। অপরিকল্পিত ভাবে গড়ে উঠা আকাশচুম্বী বহুতল ভবনের পাশ দিয়ে হাঁটলেই গা শিউরে ওঠে। কখন মাথার উপর ভেঙ্গে পড়ে এ অবস্থা। এসব নিম্মমানের বহুতল ভবনগুলোও কক্সবাজারে পরিবেশের বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে বলে মন্তব্য করেন তারা।
এদিকে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ জালিয়াপাড়া ও প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিন ভাঙ্গনের কবলে পড়েছে। শাহপরীর দ্বীপে চলছে জোয়ার ভাটা। এছাড়া কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধুরুং, দক্ষিণ ধুরুং, আলী আকবর ডেইল, তাবলের চর, পেকুয়া উপজেলার মগনামা, কাকপাড়া, পশ্চিম পাড়া, মহেশখালী উপজেলার সাপমারার ডেইল, ধলঘাটা, মাতারবাড়ি, কক্সবাজার সৈকতের লাবণী পয়েন্ট, কলাতলী সী ক্রাউন পয়েন্ট, ডায়াবেটিস হাসপাতাল পয়েন্ট ও রামু উপজেলার হিমছড়ি পয়েন্ট বিধবস্ত বেঁড়ি বাঁধ ও বাঁধ উপচে ডুকে পড়ে লবনাক্ত পানি।
টেকনাফের সাবরাং ইউনিয়নবাসি জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে যাওয়ায় শাহপরীর দ্বীপটি দিন দিন ছোট হয়ে আসছে। স্বাধীনতার পূর্বে শাহপরীরদ্বীপের আয়তন ছিল দৈর্ঘ্য প্রায় ১৫ কিলোমিটার এবং প্রস্থ ১০ কিলোমিটার। বর্তমানে তা ছোট হয়ে দৈর্ঘ্য ৪ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৩ কিলোমিটারে নিচে নেমে এসেছে। সাগরের করাল গ্রাসে হারিয়ে যাচ্ছে শাহ পরীর দ্বীপের একের পর এক বসতি ও গ্রাম।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন গ্রামবাসি জানান, সাগরে গ্রাম করা গ্রামগুলো রক্ষায় সরকার কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। ইতোপূর্বে বেঁড়িবাঁধ সংস্কারের জন্য বরাদ্ধ দেয়া টাকায় উন্নয়নের কাজ নাম মাত্র চলেছিল। সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারা ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন সিন্ডিকেট করে সরকারী টাকা পকেটস্থ করছে। ফলে উন্নয়ন বঞ্চিত শাহপরীর দ্বীপ এলাকার মানুষগুলো বরাবরই অবহেলিত পড়ে রয়েছে।
কক্সবাজার সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক মোঃ আমান উল্লাহ জানিয়েছেন, নির্বিচারে পাহাড় কাটা, জলাশয় ভরাট, নদী দখল, বৃক্ষ নিধন ও যত্রতত্র বহুতল ভবন নির্মাণের কুফল আমরা ভোগ করা শুরু করেছি। পরিবেশ বিধংসী কর্মকান্ডের বিরূপ ফল ভবিষ্যত প্রজন্মকে মারাত্মক ভাবে ভোগ করতে হবে।
কক্সবাজার পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম জানান, পাহাড় কাটার বিরুদ্ধে নিয়মিত অভিযান চলছে। বেশ কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্টানের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। পরিবেশ বিধংসী কাজে জড়িত অনেককে নোটিশও দেয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ভবিষ্যত প্রজন্ম ও নিজেদের বেঁচে থাকার স্বার্থে কক্সবাজারের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। সৈকতের জীববৈচিত্র রক্ষা ও ম্যান গ্রোভ ফরেস্ট সহ পরিবেশ রক্ষায় সকলকে আরো সচেতন হতে হবে।