শফিক রেহমানের অনেক সৃষ্টি এবং সমস্যা! বিশেষ করে মুক্তিযুদ্ধকালীন বিবিসির সাংবাদিক শফিক রেহমান, স্বৈরশাসক এরশাদের বিরুদ্ধে যায়যায়দিনের ক্ষুরধার এবং রম্য কলামের শফিক রেহমান খালেদা জিয়া আর যুদ্ধাপরাধীদের তাবেদারিতে তার নামের প্রতি যে অবিচার করেছেন তা মানা যায় না।
আমাদের স্কুল জীবনে তিনি ছিলেন আধুনিক স্মার্ট সাংবাদিকতার আইডল। কিন্তু অতঃপর তার নানান স্খলন তাকে বিশেষ ব্র্যাকেটবন্দী করেছে। এবং এর দায় তার। আমার স্কুল জীবনে যায়যায়দিনে চিঠি লিখলে শফিক রেহমান যে তার সই করা পোষ্টকার্ড পাঠাতেন তা গর্বে পকেটে নিয়ে ঘুরতাম আর বন্ধুদের দেখাতাম এই দেখ শফিক রেহমানের চিঠি! দিনের পর দিন যক্ষের ধনের মতো সেটি যত্নেই থাকতো!
যায়যায়দিনের আগে তিনি সাপ্তাহিক সন্ধানী নামের চমৎকার একটি কাগজ প্রকাশের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের লেখা 'একাত্তরের দিনগুলি' এই সাপ্তাহিক সন্ধানীতেই ধারাবাহিকভাবে বেরোয়। তার বইটিও প্রকাশ করে সন্ধানী প্রকাশনী।
এরশাদের পতনের পর শফিক রেহমান দেশে ফিরলে পুরনো পল্টনে বাসস অফিসের ভবনে সাপ্তাহিক সন্ধানী অফিসে আমি তার সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তিনি আমাকে পরামর্শ দিয়ে বলেছিলেন লন্ডনে বেড়াতে গেলে যেনো এপ্রিলের দিকে যাই। কারণ তখন অনেক টিউলিপ ফোটে।
আবার বসুন্ধরা গ্রুপের কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে তিনি যখন দৈনিক যায়যায়দিন বের করেন, এর আগে আমার সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠক শেষে যখন বলেন, তিনি আমাকে চান, তখন আমি তার সঙ্গে কাজ করতে রাজি হইনি। কারণ তার নিয়ত স্বচ্ছ মনে হয়নি। নিয়ত স্বচ্ছ না থাকায় সেই যায়যায়দিনও সাড়া ফেলতে পারেনি। হাওয়া ভবনের চাপে বসুন্ধরা গ্রুপ তাকে টাকা দিয়ে ফেঁসে যায়! অতপর ব্যর্থ মিশন পণ্ড হলে সাংবাদিকদের টাকা না দিয়ে তিনি লন্ডনে ভেগে যাচ্ছিলেন! সাংবাদিকরাই সেদিন তাকে এয়ারপোর্টে আটকে দেন।
দ্বিতীয় দফায় দৈনিক যায়যায়দিন বের করার আগে ইস্কাটন গার্ডেনের বাসার সেই বৈঠকে আমাকে বলা তার কিছু ডায়লগ ছিলো এ রকম: 'কেউ কেউ হাসিনার বক্তৃতা লিখে, আমি খালেদা জিয়ার বক্তৃতা লিখি। আমারটা বেশি মানুষ খায়’, 'আমি শ্যাম্পেন খাই, কোনোদিন নামাজ পড়িনি, কিন্তু যারা শুক্রবার রাস্তা বন্ধ করে নামাজ পড়ে, তাদের অনুভূতিকে সম্মান করি’! খালেদা জিয়া কতো আধুনিক-স্মার্ট(!) বুঝাতে বললেন, 'বিচারপতি মোস্তফা কামালকে খালেদা জিয়া আইন কমিশনের চেয়ারম্যান করতে রাজি হননি, কারণ তার দাঁড়ি আছে!'
এই শফিক রেহমানের গ্রেফতার নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে এখন অনেক কথা হচ্ছে। কিন্তু এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা সজিব ওয়াজেদ জয়ের চটজলদি জড়িয়ে পড়াটা ভালো লাগেনি। আমার ধারণা আখেরে এসব বিষয় আওয়ামী লীগের বিপক্ষে যাবে। কারণ কী জানেন? কাদের সিদ্দিকীর আজকের ভূমিকায় আমরা যতো ক্ষিপ্ত হই না কেনো, বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে তার সম্পর্ক, ছবি এসব কি মুছে দিতে পারবো? না বুকে হাত রেখে বলতে পারবো যে কাদের সিদ্দিকী মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন না! ইমরান এইচ সরকারকে আনফ্রেন্ড-আনফলো করার ডাক দেওয়াই যায়। কিন্তু গণজাগরণ মঞ্চের উত্তাল ১৭ দিনের বিপ্লবের নেতা সেই ইমরানকে কি মুছে দিতে পারবো?
আরেকটা ঘটনা বলি।
নয় বছর পর দেশে গিয়ে একটি সত্য বাস্তব দেখে মজা পেয়েছি। আওয়ামী লীগের বেশিরভাগ নেতা-কর্মীর বাসায়-অফিসে যে পত্রিকাটি রাখা হয় সেটি প্রথম আলো। অথচ এই জয় না তার অনুসারীদের প্রথম আলো বর্জনের ডাক দিয়েছিলেন! কিন্তু দেশের বাস্তব অবস্থা কী? দুনিয়ার বুদ্ধিমান নেতারা জনপ্রিয় পত্রিকা-মিডিয়ার সঙ্গে ভাব করে চলেন। এতে করে তাদের মিশনসহ অনেক কিছুর বাস্তবায়ন সফল হয়ে যায়।
নেতাদের একটু ধীরে সুস্থে সময় নিয়ে মন্তব্য করতে হয়, তাই করা উচিত। নেতা এবং কর্মীদের পার্থক্য এখানেই। জয় নানা কিছুতে তার নানা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের কথা বলেন। কিন্তু মন্তব্যে, মিডিয়ার সঙ্গে সম্পর্কে তার নানাকে অনুসরণ করেন মনে হয় না। বঙ্গবন্ধু সেখানেই বিশাল। সূত্র: চ্যানেল আই
লেখক পরিচিতি প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক। অালোড়ন সৃষ্টিকারী সাপ্তাহিক ‘বিচিন্তা’ দিয়ে সাংবাদিকতা শুরু। পরে সাপ্তাহিক ‘প্রিয় প্রজন্ম’ সম্পাদক। ‘বাংলাবাজার পত্রিকা’ প্রতিষ্ঠার সময় থেকে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন করে আলোচিত। এরপর দৈনিক ‘জনকণ্ঠ’ পত্রিকায় অনেক প্রতিবেদন করে আলোড়ন তুলেছেন। বেশ অনেক বছর ধরে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী। নিয়মিত লিখছেন দেশের বিভিন্ন পত্রিকায়। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও তিনি সক্রিয়, হাজার হাজার ফলোয়ার তার। সিডনিতে প্রবাসী বাংলাদেশীদের জন্যও এক পরম অাশ্রয় সাংবাদিক ফজলুল বারী।
মন্তব্যে প্রকাশিত মত মন্তব্যকারীর নিজস্ব। www.sunbd24.com এর সম্পাদকীয় অবস্থানের সঙ্গে এসব অভিমতের মিল আছেই এমন হবার কোনো কারণ নেই। মন্তব্যকারীর বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে www.sunbd2424.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় নেবে না।
সানবিডি/ঢাকা/সিআই/এসএস