এশিয়ায় কমেছে এলএনজির দাম
সান বিডি ডেস্ক প্রকাশ: ২০২৩-০২-০৭ ০৯:২০:৩৮
ইউরোপ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) বৈশ্বিক সরবরাহ আবারো এশিয়ার দিকে ঝুঁকেছে। জানুয়ারিতে এশিয়ার দেশগুলো এক বছরের সর্বোচ্চ এলএনজি আমদানি করেছে। তবে আমদানি বাড়লেও কমেছে দাম। বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টরা জানান, ইউরোপের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় গত বছর রেকর্ড উচ্চতায় পৌঁছেছিল এলএনজির দাম। তবে গত মাসে ব্লকটিতে এলএনজির পর্যাপ্ত মজুদ থাকায় দাম কমেছে। এছাড়া এশিয়ার মধ্যে চীনের নিম্নমুখী আমদানিও দাম কমাতে সহায়তা করেছে।
বাজার বিশ্লেষক প্রতিষ্ঠান কেপলারের সমন্বিত তথ্য বলছে, এশিয়ার দেশগুলো জানুয়ারিতে ২ কোটি ৪০ লাখ টন এলএনজি আমদানি করেছে। গত বছরের জানুয়ারির পর এটিই সর্বোচ্চ আমদানি। ডিসেম্বরে আমদানির পরিমাণ ছিল ২ কোটি ৩৭ লাখ ৪০ হাজার টন। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে আমদানি বেড়েছে ২ লাখ ৬০ হাজার টন। বিপরীতে ইউরোপের দেশগুলোয় আমদানি কমেছে। জানুয়ারিতে আমদানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ২০ হাজার টন। অথচ ডিসেম্বরে ব্লকটি ইতিহাসের সর্বোচ্চ এলএনজি আমদানি করেছিল। ওই মাসে আমদানির পরিমাণ ছিল ১ কোটি ৩৫ লাখ ১০ হাজার টন।
ঐতিহাসিক মানদণ্ডে ইউরোপের আমদানি এখনো শক্তিশালী। রাশিয়ার ওপর কয়েক ধাপে দেয়া নিষেধাজ্ঞার প্রতিক্রিয়ায় দেশটি ইউরোপে জ্বালানি সরবরাহ ব্যাপক কমিয়েছে। বিশেষ করে পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ তলানিতে নেমেছে। এ পরিস্থিতিতে ইউরোপ বিশ্বের অন্যান্য দেশ থেকে সরবরাহ বাড়াতে জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।
ইউরোপে মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ প্রাকৃতিক গ্যাসই আসত রাশিয়া থেকে। কিন্তু গত বছরের ২৪ ফেরুয়ারি ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ শুরুর পর ধস নেমেছে সরবরাহের এই ধারায়। এরপর থেকেই মূলত ইউরোপ এলএনজির সরবরাহ বাড়াতে মরিয়া হয়ে ওঠে।
২০২১ সালে ইউরোপ প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ৪৫ লাখ ৪০ হাজার থেকে সর্বোচ্চ সাড়ে ৯১ লাখ টন এলএনজি আমদানি করেছে। কিন্তু ইউক্রেন সংঘাত শুরুর পর ব্লকটির সর্বনিম্ন আমদানি দাঁড়িয়েছে ৮৮ লাখ টনে। আর সর্বোচ্চ আমদানি হয়েছে গত বছরের ডিসেম্বরে।
ব্যাপক চাহিদা তৈরি হওয়ায় গত বছর এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে ইউরোপের তীব্র প্রতিযোগিতা শুরু হয়। ইউরোপ স্পট মার্কেট থেকে বেশি দাম দিয়ে হলেও সরবরাহ নিশ্চিত করে। ফলে এশিয়ায় সরবরাহ নিম্নমুখী হয়ে পড়ে। কারণ সরবরাহকারী দেশগুলো বেশি দাম পাওয়ায় ইউরোপের বাজারে বিক্রি বাড়িয়েছে। ইউরোপে সরবরাহ বাড়ানোর ক্ষেত্রে শীর্ষ রয়েছে বিশ্বের তৃতীয় শীর্ষ এলএনজি রফতানিকারক দেশ যুক্তরাষ্ট্র।
তবে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ইউরোপে এলএনজির চাহিদা কমেছে। পর্যাপ্ত মজুদ ও শীতের তীব্রতা কম থাকায় দেশটিকে বেশি এলএনজি আমদানি করতে হয়নি।
এতে উত্তর এশিয়ার দেশগুলোয় সরবরাহের জন্য স্পট এলএনজির দাম কমে গেছে। ৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হওয়া সপ্তাহে প্রতি এমএমবিটিইউ এলএনজির মূল্য দাঁড়িয়েছে ১৮ ডলার ৫০ সেন্ট, যা ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরের পর সর্বনিম্ন।
অন্যদিকে গত সপ্তাহে এলএনজির এশিয়ান বাজার আদর্শ জেকেএমের দামও কমেছে। সর্বশেষ ২ ফেব্রুয়ারি প্রতি এমএমবিটিইউ সর্বনিম্ন ১৮ ডলার ৩৭ সেন্টে লেনদেন হয়েছে। এশিয়ার প্রধান ক্রেতারা স্বল্পমেয়াদি চুক্তিতে এলএনজি আমদানি কমিয়ে দেয়ার কারণেই দাম কমেছে।
চীনে বিশ্বের শীর্ষ এলএনজি আমদানিকারক। গত বছর জাপানকে পেছনে ফেলে এ অবস্থানে উঠে আসে দেশটি। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে চীন ৭১ লাখ ৮০ হাজার ও ডিসেম্বরে ৭২ লাখ ৮০ হাজার টন এলএনজি আমদানি করলেও গত মাসে তা কমে ৬১ লাখ ২০ হাজার টনে নেমেছে।
দীর্ঘমেয়াদি চুক্তির পাশাপাশি স্পট মার্কেট থেকেও এলএনজি আমদানি করে চীন। কিন্তু ইউক্রেন সংঘাতের পর বিশ্ববাজারে জ্বালানিটির দাম আকাশচুম্বী হয়ে উঠলে দেশটি আমদানি কমিয়ে দেয়।
এনজে