চলতি বছরের শুরুতেই সেপ্টেম্বরে পৃথিবী ধ্বংস হবে বলে গুঞ্জন উঠেছিলো। খ্রিস্ট ধর্মের তাত্ত্বিকরা এ বিষয়ে ভবিষ্যৎবাণীও করেন।
ঘটনা পুরোনো কিন্তু দিনটি আসন্ন। তাই পুরোনো কথা নতুন মোড়কে সাজিয়ে বলা যায়, আড়াই মাইল বা প্রায় এক হাজার তিনশো ফুট চওড়া গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষ ঘটবে বলে আশঙ্কা করছে এই তাত্ত্বিক গোষ্ঠী।
ধারণা করা হচ্ছে, ‘২০১২টিটি৫’ নামে একটি শিলাখণ্ড পৃথিবীর সাম্ভাব্য ঘাতক।
আসন্ন এ বিপর্যয়ের সময়সীমা ধরে নেওয়া হয়েছে সেপ্টেম্বরের ২১ তারিখ থেকে এ মাসের শেষ অব্দি।
কিন্তু আন্তর্জাতিক মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা বরাবরই এ ভবিষ্যৎবাণীকে ভুল বলে আখ্যা দিয়েছে। শুরু থেকেই নাসার বিজ্ঞানীরা জানাচ্ছেন, আগামী এক শতাব্দীতে পৃথিবীর উপর কোনো গ্রহাণু আঘাত হানবে না।
সম্প্রতি ক্যালিফোর্নিয়ার প্যাসাডেনায় নাসার জেট প্রপালসন ল্যাবরেটরি থেকে পল চোডাস জানান, পৃথিবীর কাছাকাছি এমন কোনো ধ্বংসাত্মক গ্রহাণু বা মহাজাগতিক বস্তু অবস্থানের প্রমাণ আমাদের হাতে নেই, যা সম্প্রতি পৃথিবীর উপর আঘাত হানতে পারে।
কথিত এ আশঙ্কার পরিপ্রেক্ষিতে পৃথিবীবাসীকে ভরসা জোগাতে নাসা তার নিজস্ব ওয়েবসাইটে একটি বিবৃতিও প্রকাশ করেছে।
পল জানান, যদি সেপ্টেম্বরে পৃথিবীর দিকে এমন কোনো বস্তু ধেয়ে আসতো তাহলে নাসা এর আভাস পেতো।
নাসার হিসেবে পৃথিবীর নিকটবর্তী প্রায় ১৩ হাজার গ্রহাণু রয়েছে। এদের মধ্যে মাত্র দুই শতাংশ ছাড়া বাকি ৯৮ শতাংশ গ্রহাণু সম্পর্কে কোনো ধারণা পাওয়া যায়নি।
এই ১৩ হাজার গ্রহাণুর মধ্যে এক হাজার ছয়শো সাতটি গ্রহাণু সাম্ভাব্য বিপদজনক বলে জানিয়েছে নাসা। অর্থাৎ এ জাতীয় শিলা আকারে অনেক বড়।
নাসার ভাষ্য, এ ধরনের বড় শিলা পৃথিবীতে আঘাত করলে ভূমি ও মহাসাগরের উপর প্রভাব পড়তে পারে। এ কারণে হতে পারে সুনামিও। তবে এমন ঘটনা ১০ হাজার বছরে সাধারণত এক বার হয়।
নাসা আরও জানিয়েছে, সেপ্টেম্বরের ২২ ও ২৪ তারিখ বড় শিলাখণ্ড পৃথিবী অতিক্রম করবে। ২২ তারিখ দু’টো গ্রহাণু অতিক্রম করবে পৃথিবীকে। এর মধ্যে একটি একশো ৯০ মিটার বা ছয়শো ২৩ ফুট প্রশস্ত ও অন্যটি দু’শো ৮০ মিটার বা নয়শো ১৮ ফুট। এর ঠিক দু’দিন পর ২৪ তারিখ দু’শো ৭০ মিটার আটশো ৮৫ ফুট আয়তনের একটি গ্রহাণু অতিক্রম করবে আমাদের গ্রহ।
নাসার পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, বড় গ্রহাণুগুলো পৃথিবীর সঙ্গে কয়েক মিলিয়ন মাইল দূরত্ব রেখে ও ছোটগুলো সর্বোচ্চ সাত মিলিয়ন মাইল দূর থেকে অতিক্রম করে।
পৃথিবী থেকে চাঁদের দূরত্ব দুই লাখ ৩৮ হাজার আটশো মাইল। অন্যদিকে, আমাদের সবচেয়ে নিকটতম গ্রহ শুক্র ২৫ মিলিয়ন মাইল দূরে অবস্থিত। ফলে পৃথিবীর নিকটবর্তী গ্রহাণুগুলো অন্য গ্রহের তুলনায় সাধারণত চাঁদের সঙ্গে নিকটতম দূরত্ব রেখে অতিক্রম করে। আবার এসব গ্রহাণুর কক্ষপথও ভিন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছে নাসা।
আসন্ন ২২ তারিখ দু’শো ৮০ মিটার প্রশস্ত গ্রহাণুটি ১৪ দশমিক সাত মিলিয়ন ও ২৪ তারিখ দু’শো ৭০ মিটার প্রশস্ত গ্রহাণুটি পাঁচ দশমিক এক মিলিয়ন মাইল দূর থেকে অতিক্রম করবে। আর এটিই হচ্ছে পৃথিবী অতিক্রমকারী সর্ব নিকটতম দূরত্বের গ্রহাণু।
তবুও শিলা ২০১২টিটি৫ যে এর কক্ষপথ থেকে ছিটকে পড়বে না, সে বিষয়টিও খতিয়ে দেখছেন নাসার বিজ্ঞানীরা।
নাসা মোটামুটি জোর দিয়েই বলছে, পৃথিবীর সঙ্গে সংঘর্ষ হতে পারে এমন আশঙ্কা নেই। সুতরাং পৃথিবী নিরাপদেই থাকবে।
তবে নাসা গ্রহাণু শনাক্তকরণে আরও গুরুত্ব দিচ্ছে। পৃথিবীর উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে এমন গ্রহাণু শনাক্তকরণে উন্নত কৌশল তৈরির চেষ্টায় রয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।