সাউথ এশিয়া সাব রিজিওনাল ইকোনমিক কোঅপারেশনের (সাসেক) ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের ডিএস-৫ এর আওতায় সরাইল ইন্টারসেকশন থেকে বুধন্তী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত সার্ভিসলেনসহ ছয়লেন সড়ক নির্মাণে চুক্তি সই হয়েছে।
বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) নগরীর সোনারগাঁও হোটেলে সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ওয়ার্ক প্যাকেজ-৩ এর চুক্তি সই হয়েছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অধীন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ‘সাসেক ঢাকা-সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন’ এ প্রকল্পের উব্লিউপি-৩ প্যাকেজের লট নম্বর ডিএস-৬ এর নির্মাণকাজ যৌথ উদ্যোগে চীন ও বাংলাদেশের তিনটি কোম্পানি বাস্তবায়ন করবে। এর মধ্যে চীনের কোম্পানি দুইটি হলো- চেসিইটিস ও এসএলজিসি এবং বাংলাদেশের প্রপার্টি ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড (পিডিএল)। এতে খরচ ধরা হয়েছে এক হাজার ৮৫ কোটি ৩৪ লাখ ৭৬ হাজার ৮৩০ টাকা। পিডিএল দেশের অন্যতম বৃহৎ শিল্পগ্রুপ প্রাণ-আরএফএলের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান।
প্রকল্পের পরিচালক এ কে মোহাম্মদ ফজলুল করিম, সড়ক ও জনপথ বিভাগের (সওজ) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (কুমিল্লা জোন) আবু হেনা মোহাম্মদ তারেক ইকবাল উপস্থিত ছিলেন। এসময় হিগো-মীর আক্তারের (চীনের হিগো ও বাংলাদেশের মীর) পক্ষে লিউ শাওমিই ও চেসিইটিস–এসএলজিসি-পিডিএলের পক্ষে জাং লিয়াং স্ব স্ব পক্ষে চুত্তিতে সই করেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেগম রওশন আরা মান্নান এমপি, দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্পপ্রতিষ্ঠান প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের চেয়ারম্যান ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আহসান খান চৌধুরী, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নুরী, এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) বাংলাদেশ কার্যালয়ের নতুন কান্ট্রি ডিরেক্টর এডিমন জিনটিং, জনপথ অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী মো. ইসহাক। চুক্তি সই অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করেন অতিরিক্ত প্রকল্প পরিচালক মো. মাছুম সারওয়ার।
উব্লিউপি-৩ প্যাকেজের লট নম্বর ডিএস-৬ এর আওতায় বুধন্তী বাসস্ট্যান্ড থেকে এস এম স্পিনিং মিল পর্যন্ত ১৯ দশমিক ১ ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণ করা হবে। এর চুক্তিমূল্য ১ হাজার ৮৫ কোটি ৩৪ লাখ টাকা। কাজটি যৌথভাবে বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশের পিডিএল ও চীনের দুটি প্রতিষ্ঠান। এ লটে ১৫৫ মিটারের ২৫টি কালভার্ট, ৩৪৭ দশমিক ৫৩ মিটার দৈর্ঘের সাতটি সেতু, ৩ দশমিক ৮৮৩ কিলোমিটার ড্রেন, ১ হাজার ১২০ বর্গ মিটারের বাস বে ও সার্ভিস লেনের রিজিড পেভমেন্ট নির্মাণ করা হবে। এছাড়া দুটি ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ করা হবে।
ডিএস-৫ এর আওতায় সরাইল ইন্টারসেকশন থেকে বুধন্তী বাসস্ট্যান্ড পর্যন্ত ১৫ দশমিক ৭ কিলোমিটার ফ্লেক্সিবল পেভমেন্ট নির্মাণ করা হবে। এর চুক্তিমূল্য ১ হাজার ২৩২ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। এর আওতায় ১১টি কালভার্ট, ১১টি সেতু, একটি ওভার পাস, বাস বে ও সার্ভিস লেনে রিজিড পেভমেন্ট ইত্যাদিত নির্মিত হবে। এছাড়া দুটি ফুটওভার ব্রিজও নির্মাণ করা হবে।
সওজ জানায়, ঢাকা-সিলেট জাতীয় মহাসড়কটি রাজধানী ঢাকা, বন্দরনগরী চট্টগ্রাম ও দেশের অন্যান্য অংশের সঙ্গে বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সড়ক যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম। সিলেট বিভাগে তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ, বন, চা-বাগান, পাহাড়, হাওড় ইত্যাদি প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর যা বৃহত্তর সিলেট বিভাগের ৪টি জেলাকেই পর্যটন সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলেছে যেখানে প্রতি বছর লাখ লাখ দেশি বিদেশি পর্যটক ভ্রমণ করেন।
অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাওয়ায় এ মহাসড়ককে কেন্দ্র করে কয়েকটি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে যেখানে দেশি-বিদেশি বিনিয়োগের ফলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে প্রভাবিত করবে। বর্তমানে দুই লেনের এ মহাসড়ক ক্রমবর্ধমান যানবাহনের চাপ সামাল দিতে পারছে না। এর ফলে একদিকে যেমন সড়ক দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়ায় জানমালের ক্ষয়ক্ষতি হচ্ছে অন্যদিকে বিভিন্ন লোকেশনে যানজটের কারণে ভ্রমণ সময় বেড়ে যাচ্ছে যা উন্নয়নের পথে অন্তরায় হিসেবে কাজ করছে।
ভৌগলিকভাবে স্ট্র্যাটেজিক লোকেশনের কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কটি এশিয়ান হাইওয়ে (এএইচ-১ এবং এএইচ-২), বিমসটেক (বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টিসেক্টরাল, টেকনিকাল অ্যান্ড ইকোনমিক কোঅপারেশন) করিডোর (করিডোর-৩) এবং সার্ক হাইওয়ে করিডোর (এসএইচসি-৫) এর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।
এসব দিক বিবেচনায় নিয়ে ২০২১ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারির মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী সড়কটিকে উভয় পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক লেনসহ ছয় লেনে উন্নীতকরণের লক্ষ্যে সাসেক ঢাকা সিলেট করিডোর সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদিত হয়। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি প্যাকেজ লটে বিভক্ত হয়ে বাস্তবায়িত হবে।
ওয়ার্ক প্যাকেজ-০৩ এর আওতাভুক্ত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও হবিগঞ্জ জেলার মোট ৩৪ দশমিক ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মহাসড়কের নির্মাণকাজ বাস্তবায়নের চুক্তি সম্পাদন করা হয়। এ চুক্তির আওতাধীন লট দুটির প্রতিটির কন্সট্রাকশন কাজের সময়কাল চার বছর ও মেইনটেন্যান্সের সময়কাল ৬ বছর।
এ প্যাকেজের আওতায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল-বিশ্বরোড, শাহবাজপুর, রামপুর ও বীরপাশা এবং হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুর উপজেলাধীন আন্দিউরা ও বেজুরা স্থানগুলোর ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক সরলীকরণ মাধ্যমে নিরাপদ সড়ক নিশ্চিত হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার চান্দুরা বাজার অংশে ওভারপাস নির্মাণের মাধ্যমে যানজট নিরসন হবে। এছাড়া পরিবেশের প্রভাব ও স্থায়িত্ব বাড়ানোর লক্ষ্যে এ মহাসড়ক নির্মাণে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন ব্যবহার করা হবে।
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর ২০২১ সালের ১ জানুয়ারি থেকে ২০২৬ সালের ৩১ ডিসেম্বর মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ১৬ হাজার ৯১৮ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি অর্থায়ন ৩ হাজার ৬৭৩ কোটি ৮৯ লাখ এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) ঋণ ১৩ হাজার ২৪৪ কোটি ৬৮ লাখ টাকা। নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সিলেট জেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হবে।
প্রকল্পের মূল কার্যক্রম
সড়কের উভয়পাশে ধীরগতির যানবাহনের জন্য পৃথক সার্ভিসলেনসহ ৬ লেনে উন্নীতকরণ। প্রকল্পের মোট দৈর্ঘ্য ২০৯ দশমিক ৩২৮ কিলোমিটার। প্রকল্পের আওতায় ৬ হাজার ২০ মিটারের ৬৬টি সেতু, ১ হাজার ৪৮৯ মিটারের ৩০৫টি কালভার্ট, ২ হাজার ৪৮৪ মিটারের ৫টি রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ করা হবে। ৫ হাজার ৩৯৫ মিটারের ৮টি ওভারপাস, ১ হাজার ২৫১ মিটারের ২৬টি ফুট ওভারব্রিজ, ৩৭টি গ্রেড ইউটার্ন, ৮টি রাউন্ড অ্যাবাউট (গোল চত্বর) নির্মাণ করা হবে। ১ হাজার ৩৩ দশমিক ৫৭ একর ভূমি অধিগ্রহণ করা হবে। সার্ভিসসহ ছয়লেন সড়কটিতে ব্যবহার করা হবে পলিমার মডিফাইড বিটুমিন।
আই এইচ