অবশেষে রাজধানীর দক্ষিণখানের ফায়েদাবাদে দুই নারীকে দল বেঁধে নির্যাতন ও বাড়ি-ঘর লুট করে দখলের ঘটনায় মামলা নিয়েছে পুলিশ। ঘটনার পাঁচ দিন পর শনিবার গভীর রাতে দক্ষিণখান থানা পুলিশ মামলাটি রেকর্ড করে রাতেই অভিযান চালিয়ে ৪ জনকে গ্রেপ্তার করে।
দক্ষিণখান থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) সৈয়দ লুৎফুর রহমান বিষয়টি বাংলামেইলকে নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- নির্যাতনকারী মোস্তফা কামাল বাবু, আতাউর রহমান আতোশ, মোহম্মদ আলী ও নাছিমা খানম। রোববার এদের প্রত্যেকের ৭ দিন করে রিমান্ড চেয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গত ১৮ এপ্রিল সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মধ্য ফায়েদাবাগের ৪৫/১ এর বাসিন্দা মাকসুদা বেগম (৪৮) ও তার মা হালিমা বেগমকে (৭০) নির্মমভাবে পিটিয়ে আহত করা হয়। এ ঘটনায় নির্যাতিতরা মামলা করতে গেলে উল্টো নির্যাতনকারীদের মামলা নিয়ে থানা থেকেই তাদের জেলহাজতে পাঠানো হয়। গত বৃহস্পতিবার নির্যাতনের ভিডিও বাংলামেইলের হাতে পৌঁছে। রাতেই বিষয়টি নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। এর পরেই টনক নড়ে প্রশাসনের। গণমাধ্যমগুলোও গুরুত্ব দিয়ে সংবাদটি প্রকাশ করে।
জানা গেছে, নির্যাতিত এই পরিবারটির বিরুদ্ধে থানায় মামলা নেয়ার পর তারা বাড়ি-ঘর ছেড়ে আত্মীয় স্বজনদের বাড়িতে আত্মগোপন করেন। তবে এসময় মাকসুদা বেগমের খালা সাহিদা বেগম (৬৫) বাড়িতে ছিলেন। এই সুযোগেই হামলাকারীরা বাড়ি-ঘর দখল করে মালামাল লুট করে। এ সময় ওই বৃদ্ধাকেও মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে বাংলামেইলে সংবাদ প্রকাশের পর থানার ওসি লুৎফুর রহমান বাংলামেইল থেকে ভিডিওটি নিয়ে দেখেন এবং নির্যাতিতদের মামলা নেয়ার আশ্বাস দেন। পরদিন মাকসুদা বেগম জেল থেকে জামিন নিয়ে থানায় গিয়ে একটি অভিযোগ দায়ের করলে পুলিশ মামলা হিসেবে আমলে নেয়। পরে রাতেই অভিযান চালিয়ে চার নির্যাতককে গ্রেপ্তার করে।
রোববার সকালে দক্ষিণখান থানার ওসি বাংলামেইলকে বলেন, ‘মামলা হওয়ার পরপরই ওই বাড়িতে অভিযান চালিয়ে চরজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কিছু মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। বাকিগুলো উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দক্ষিণখান থানার এসআই শাহজাহান বাংলামেইলকে বলেন, ‘শনিবার গভীর রাতে ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়েছে। নির্যাতিতদের ওই বাড়িটি বিধ্বস্ত অবস্থায় পাওয়া গেছে। বাড়ির সব মালামাল লুটের সত্যতা পাওয়া গেছে। প্রাথমিক অবস্থায় বাড়ির বেশ কয়েকটি দরজা জানালা উদ্ধার করা হয়েছে। অন্যান্য মালামাল উদ্ধারের চেষ্টা চলছে।’
তিনি বলেন, এই মামলার যে কয়জন আসামি হাসপাতালে রয়েছে তাদেরও গ্রেপ্তারের জন্য সংশ্লিষ্ট থানাকে একটি চিঠি দেয়া হচ্ছে। তারা হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর গ্রেপ্তার দেখিয়ে কোর্টে প্রেরণ করা হবে।
https://youtu.be/GASliBhVOB0
প্রকাশিত ৯ মিনিট ২১ সেকেন্ড, ৫ মিনিট ৫০ সেকেন্ড ও ৪ মিনিট ১০ সেকেন্ডের ওই তিনটি ভিডিওতে দেখা গেছে, দু’জন নারীকে ৬-৭ জন নারী ও ৮-৯ জন পুরুষ পালাক্রমে পেটাচ্ছে। কখনো লাঠি, কখনো হাতুড়ি, কখনো রড ও কখনো ইট দিয়ে আঘাত করা হচ্ছে তাদের। আঘাতে ওই নারী মাটিতে লুটে পড়েন। বৃদ্ধা হালিমা বেগমকে এলোপাতারি পেটানো হয়। এক পর্যায়ে তাদের প্রায় বিবস্ত্র করে ফেলা হয়। এসময় এই দুই নারীকে উদ্ধার করতে এসে ছেলে কামরুল হাসান মুন্না (১৮) ও তার বাবা আবুল হোসেন খান (৫৮) হামলার শিকার হোন।
এ সময় ঘটনাস্থালর পাশের একটি ভবনের সঙ্গে থাকা সিসি ক্যামেরায় পুরো ঘটনা ধারণ হচ্ছে বুঝতে পেরে হামলাকারীরা সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলে। এরপর চলে আরো অমানুষিক নির্যাতন। চলে দ্বিতীয় ধাপের হামলা। এসময় দালালরা তাদেরকে পাশের একটি ভবনের কক্ষে আটকে পিলারের সঙ্গে বেঁধে হাতুড়ি ও রড দিয়ে পেটায়। সেখানে তারা অজ্ঞান হয়ে পড়েন।
খবর পেয়ে দক্ষিণখান থানার এসআই শাহজাহানের নেতৃত্বে একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাদের উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠান।
ভিডিও ফুটেজ দেখে হামলাকারীদের নাম নিশ্চিত হওয়া গেছে। এরা হচ্ছেন- মিজানুর রহমান সরদার (৪৬), নাছিমা বেগম (৪০), বাচ্চু মিয়া (৪৮), ফাতেমা বেগম (৪৮), আতাহার আলী ওরফে আতশ (৪২), রাশেদা বেগম (৪০), মোহাম্মদ আলী (৩৮), মিন্টু মিয়া (১৯), জয় (১৯), মহসিন (২২), খলিল মিয়া (৫৫), সামসু (৩২), হালিমা বেগম। স্থানীয়রা জানান এরা সবাই জমির দালাল চক্রের সদস্য।