ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের “মাস্টারদা সূর্যসেন হল” স্বাধীনতা’র পূর্বে স্থাপিত আবাসিক হলগুলো’র মধ্যে অন্যতম ঐতিহ্যবাহী একটি হল। মলচত্বর সংলগ্ন হলটি’র উত্তরদিকে রয়েছে নবনির্মিত “বিজয় একাত্তর হল” এবং দক্ষিণে রয়েছে “হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হল”।
সুবিশাল এই হলটি প্রতিষ্ঠিত হয় ১৯৬৬ সালে। শুরুতে এর নাম ছিল “জিন্নাহ হল”। ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় কিছু সাহসী আবাসিক ছাত্র এই হলের নাম বদলে রাখে সূর্যসেন হল। তবে তখনো অফিশিয়ালি এই নাম গ্রহণ করা হয় নি। স্বাধীনতা’র পর বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে ১৯৭২ সালে এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় “মাস্টারদা সূর্যসেন হল”। অদ্যাবধি হলটি এই নামেই পরিচিত। বর্তমানে এখানে দুই সহস্রাধিক ছাত্র বসবাস করছে।
ছয়তলা বিশিষ্ট হলটিতে একটি শহীদ মিনার রয়েছে। আরো আছে স্বাধীনতা যুদ্ধে হলের শহীদ শিক্ষক এবং ছাত্রদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভ “স্মৃতি’র জানালা”। ২০১০ সালে তৎকালীন প্রভোস্ট এবং বিশিষ্ট কবি প্রয়াত অধ্যাপক ডঃ খোন্দকার আশরাফ হোসেনের ডিজাইনে এটি উদ্বোধন করেন মাননীয় উপাচার্য অধ্যাপক ডঃ আ আ ম স আরেফীন সিদ্দিক। “স্মৃতি’র জানালা”র সম্মুখভাগে একটি ফোয়ারা রয়েছে। তাছাড়া হলের মূল অংশের ভেতরে এবং বাইরে একটি করে কৃত্রিম লেক রয়েছে।
বর্তমানে মাস্টারদা সূর্যসেন হলে একটি ক্যাফেটেরিয়া এবং একটি ক্যান্টিন চালু আছে। তবে এদের খাবারের মান এবং মূল্য নিয়ে প্রচুর অভিযোগ রয়েছে। দুই বছর আগে বিক্ষুব্ধ ছাত্ররা অস্বাস্থকর খাবার পরিবেশনের জন্য “লাদেন গুহা” নামক ক্যান্টিনে ভাংচুর চালায়। এ ঘটনায় নয়জন ছাত্রকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়। অবশ্য হলের মেস “নেক্সাস”-এর খাবারের মান মোটামুটি মানসম্মত।
খেলা-ধুলা এবং সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের দিক থেকে সূর্যসেন হল বেশ এগিয়ে। এই হলের ডিবেটিং ক্লাব এবং স্বেচ্ছাসেবী রক্তদাতা সংগঠন “বাঁধন” অত্যন্ত সক্রিয়। হলে রয়েছে গ্রন্থাগার, প্রশস্ত পাঠকক্ষ, পত্রিকা কক্ষ, মসজিদ, ইনডোর গেমস এবং টিভিরুম। “সূর্যসেন হল অ্যালামনাই এসোসিয়েশন” কর্তৃক বৃত্তাকার সুপেয় পানির বেসিন ও একটি কম্পিউটার ল্যাব প্রতিষ্ঠা’র কাজও প্রায় শেষের দিকে এবং একটি দৃষ্টি নান্দনিক হল গেট তৈরি হবে বলে যানা গেছে। ছাত্রদের ওঠানামা’র সুবিধা’র জন্য হলের দুই প্রান্তে দুটি লিফট এবং ওয়াইফাই জোন স্থাপণ করা হয়েছে।
গত মার্চ মাসের ৯,১০ ও ১১ তারিখে সূর্যসেন হলের ডিজিটাল ডাটাবেইজ তৈরী’র প্রাথমিক কাজ শেষ হয়েছে। খুব শিগগীর এটি উদ্বোধন করা হবে এবং এর মাধ্যমে এটি হবে দেশের প্রথম ডিজিটাল হল।
দেশের অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব এই হলে থেকে পড়াশোনা করেছেন। এদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের বর্তমান গভর্নর অধ্যাপক ডঃ আতিউর রহমান, বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক ডঃ আবুল বারকাত,কলা অনুষদের ডিন এবং বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ডঃ সদরুল আমিন,তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ডঃ হোসেন জিল্লুর রহমান,কথাসাহিত্যিক ডঃ সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম,ইতিহাসবিদ অধ্যাপক ডঃ সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, প্রয়াত সাংবাদিক এনায়েত উল্লাহ, প্রধানমন্ত্রী’র তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবহান চৌধুরী, প্রকৌশলী মোস্তাফা জব্বার এবং রাজনীতিবিদ জিয়াউদ্দিন বাবলু, হেমায়েতউদ্দিন আওরঙ্গ, ডঃ আবদুস সোবহান গোলাপ প্রমুখ। একাত্তরে স্বাধীনতা সংগ্রামে প্রাণ হারিয়েছেন এই হলের আবাসিক শিক্ষক অধ্যাপক ডঃ মোহাম্মদ সা’দাত হোসেন এবং ছাত্র বদিউল আলম, জিল্লুর মুর্শেদ, আতাউর রহমান, আবদুর রহিম, শামসুজ্জামান, মনিরুজ্জামান সহ নাম না জানা অনেকে।
সূর্যসেন হলের বর্তমান প্রভোস্ট অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল। প্রভোস্টের পাশাপাশি তিনি একই সাথে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি’র সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করছেন। তার যোগদানের পর থেকে হলে প্রভৃত উন্নয়ন সাধিত হয়েছে বলে সাধারন ছাত্ররা মনে করেন।