সিনেমার পর্দায় নারীশক্তি
প্রকাশ: ২০১৫-১০-১৮ ১৬:০১:৪২
‘ইয়া দেবী সর্বভূতেষু শক্তিরূপেণ সংস্থিতা’। শক্তির প্রতীকই নারী৷ আর এই শক্তির আরাধনাই হয়ে আসছে যুগ-যুগ ধরে৷ সিনেপর্দাতেও তার একাধিকবার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে৷ কখনও বিদ্যা তো কখনও রানিরাই গল্পের মোড়কে পরিচালকের আঁচড়ে হয়ে উঠেছেন পর্দার দুর্গা৷ পুরাণ বলছে অসম শক্তিশালী অসুরকে দমন করে নারীশক্তির প্রতিষ্ঠা করেছিলেন দেবতারা। অশুভকে হারিয়ে শুভ’র জয় ইতিহাসের জ্বলন্ত দলিল।নারীশক্তি আজ মৃন্ময়ী হয়ে চিন্ময়ীদের। মেয়েদের ইচ্ছা, মেয়েদের স্বপ্ন, তাঁদের লড়াই সিনেমাতেও৷ একচ্ছত্র হিরোয়িজম ছিল নায়কদেরই৷ এখন ছবিটা পাল্টে গিয়েছে৷ আজ পঞ্চমীর পুণ্য তিথিতে কথায় চলচিত্রের পাঁচ কন্যা।
ঋতুপর্ণা: টলিউডের বেশ কয়েক বছর থেকে নারীপ্রধান ছবিতেই অভিনয় করে চলেছেন তিনি৷ মেইনস্ট্রিম আর আর্টহাউসের তথাকথিত ভেদরেখা মুছে দিয়েছেন তিনি। ‘শ্বেত পাথরের থালা’তে অভিনয়ের দুনিয়ায় পা রেখেছিলেন ঋতুপর্ণা সেনগুপ্ত৷ তারপর কেটে গেছে দু’দশক৷ এতদিনে বাঙালি দর্শকের প্রাপ্তির থালাও উপচে পড়েছে ঋতু উপহারে৷ ‘দহন’ থেকে ‘দেবীপক্ষ’ সিনে সংসারে তাঁর অনায়াস ‘পারাপার’ নারী শক্তির আধাররূপে৷ ‘পারমিতার একদিন’ বা ‘দ্বিতীয় বসন্ত’ বা ‘চতুরঙ্গ’-ইন্ডাস্ট্রিতে নরীবাদের জোয়ার এসেছেন তিনি।
বিদ্যা বালান: তাঁর ‘কহানি’তে মুগ্ধ সারা দেশের দর্শক৷ ‘মুন্নাভাই’ থেকে ‘ববি জাসুস’ একের পর এক পারফরমেন্সে মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন তাঁর ফ্যানদের৷ তুখোড় অভিনয়ের দৌলতে তাঁর ঝুলিতে এসেছে জাতীয় পুরস্কার৷ নানা ভূমিকা. নিজেকে যত প্রমাণ করেছেন, তাঁর থেকে প্রত্যাশা যেন বেড়েছে আরও বেশি৷ বলিউডে সাম্প্রতিক নারীকেন্দ্রিক সিনেমার যে নতুন জোয়ার, তারও পুরোভাগে আছেন তিনিই৷ ‘কহানি’ থেকে ‘নো ওয়ান কিলড জেসিকা’ বা ‘ডার্টি পিকচার’-তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন সিনেমায় নায়িকাদের হিরোগিরি৷
কঙ্গনা রাণাওয়াত:২০১৪-র বলি ‘কুইন’ ছিলেন কঙ্গনা৷ কুইন ছবিতে একই সঙ্গে বক্স অফিস এবং সমালোচকদের সন্তুষ্ট করতে পেরেছিলেন তিনি৷ বাগদত্তার কাছ থেকে প্রতারিত হয়ে একা একটি মেয়ের হানিমুনে যাওয়ার গল্প ‘কুইন’। নিজের অভিনয়ের স্টিরিওটাইপও তিনি ভেঙে দিয়েছেন ‘কুইন’ ছবিতে৷ ‘কুইন’ ছবি কঙ্গনাকে শুধু পুরস্কারের ট্রফিই নয়, দিয়েছে সম্মান ও প্রশংসা৷ বলিউডের নারীকেন্দ্রিক ছবির জগতে বিদ্যা বালানের পর নতুন করে চর্চা শুরু হয়েছে তাঁকে নিয়ে৷ বলা হচ্ছে রেখা থেকে মাধুরী দীক্ষিত হয়ে বলিউডের এই বিশেষ ঘরানাকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তিনিই৷ স্বয়ং রেখা এসে তাঁর বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে গিয়েছিলেন ফিল্মফেয়ারের সেরা অভিনেত্রীর সম্মান৷ সম্প্রতি ‘কুইন’ ছবিতে অভিনয় করার জন্য জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন কঙ্গনা।
রানি মুখোপাধ্যায়:‘মর্দানি’ ছবিতে রানি অভিনয় করেছিলেন শিবানি শিবাজি রাও-এর ভূমিকায়, নারীপাচার চক্র বিশেষত শিশুপাচার চক্রকে যিনি নিজের প্রচেষ্টায় রুখে দিয়েছিলেন৷ এই ছবির সামাজিক বার্তা ছিল পরিষ্কার৷ সভ্য সমাজের বুকেই নারী ও শিশুদের নিরাপত্তার হালচাল চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল ছবিটি৷ একই সঙ্গে শিবানি শিবাজি রাওয়ের চরিত্রটি যেভাবে সেই চক্রের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছিল, তাতে শুধু সিনেমা নয়, সিনেমার মধ্য দিয়ে সমাজে সচেতনতা প্রসারের কাজটিও সারা হয়েছিল৷ সাধরাণ মানুষকেও যে অনেক বেশী সক্রিয় হয়ে উঠতে হবে, সে বার্তাই দিয়েছিল এ ছবি৷ রানি এ চরিত্রে অনবদ্য অভিনয় করেন৷ মূলত তাঁর জনপ্রিয়তাতে ভর করেই এ ছবির মধ্য দিয়ে পাচারচক্রের বিরুদ্ধে সচেতনতা ছড়িয়ে পড়ে৷ একই সঙ্গে পাচার রুখতে যাঁরা দীর্ঘ সংগ্রাম করছেন তাঁদেরও প্রতিনিধি হয়ে উঠেছিলেন রানি৷ এই প্রয়াসকেই কুর্নিশ জানিয়ে রানিকে দেওয়া হয় জাতীয় পুরস্কার৷
প্রিয়াঙ্কা:মধুরের ‘ফ্যাশন’ হয়ে প্রিয়াঙ্কার এই সফর বাইছে ‘গঙ্গাজলে’। অভিনয়, নাচে গানে তিনি মন্ত্রমুগ্ধ করে রেখেছেন সিনেপ্রেমীদের। এককথায় বলি-হলি দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন পিগি চপস। সম্প্রতি লন্ডনে শুরু হয়ে গিয়েছে তাঁর টিভি শো ‘কোয়ান্টিকো’। তাছাড়া গানে তো আগেই বেঁধেছেন গোটা বিশ্বকে। এছাড়া ‘মেরিকম’ ছবিতে প্রিয়াঙ্কার অভিনয় আলাদা মাত্রা দিয়েছে তাঁর কেরিয়ারকে।