রমজান মাসকে বলা হয় সুস্থ, শুদ্ধ জীবন চর্চার এক অপূর্ব সুযোগ। পরিপূর্ণ লাভের জন্য কেনাকাটা বা ভোজন সর্বস্ব না করে কোরআন পাঠ, হাদিস পাঠ আনুষাঙ্গিক ইবাদতে মনযোগী হতে হবে। হাদিস চর্চায় হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী ' হতে পারে ভালো অবলম্বন।
হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী গ্রন্থাকারে ছাড়াও অনলাইনে পাওয়া যাচ্ছে এবং পিডিএফ বই হিসেবে ডাউনলোড করেও নেয়া যায় (hadith.qm.org.bd)। এছাড়াও বইটি রকমারিতেও পাওয়া যাচ্ছে। আবার অডিও আকারেও দেয়া আছে, যা বর্ননা শুনতে পাওয়া যায়।
সাহাবা। নবীজীর (স.) সহযোদ্ধা। যারা ছিলেন নবীজীর (স.) বাণীর ধারক। যারা শান্তি ও সাম্যের বাণী নিয়ে ঘর ছেড়ে ছড়িয়ে পড়েছিলেন দেশ-দেশান্তরে। মানুষকে মুক্ত করেছিলেন শোষণের হাজার বছরের জাঁতাকল থেকে। সাম্রাজ্যবাদের ধ্বংসস্তূপের ওপর যারা উড্ডীন করেছিলেন সাম্য, ন্যায়বিচার ও মানবিকতার পতাকা। যাদের শতকরা ৯০ জনই মৃত্যুবরণ করেছিলেন জন্মভূমি থেকে অনেক দূরে।
সাহাবার পরের প্রজন্ম তাবেঈন। তার পরের প্রজন্ম তাবে-তাবেঈন। যারা নবীজীর (স.) সত্যজ্ঞান ধারণ করে গড়ে তুলেছিলেন এক আলোকোজ্জ্বল সভ্যতা। সত্যানুসন্ধানে যাদের অক্লান্ত মেহনতের ফসল হচ্ছে হাদীসের লিখিত রূপ। তারপর প্রজন্মের পর প্রজন্ম। শতাব্দীর পর শতাব্দী। নিবেদিতপ্রাণ মুহাদ্দিসদের হাদীস জ্ঞানের অংশবিশেষের বাংলা মর্মান্তরই হচ্ছে ‘হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী’। শহীদ আল বোখারী মহাজাতকের অনুবাদে বইটি প্রকাশ করেছে কোয়াণ্টাম ফাউন্ডেশন। বইটিতে মোট আটটি বিষয়ে ১২৬৮টি হাদিস বর্ণনা করা হয়েছে । বাংলাভাষায় হাদিসের অনুবাদ বা হাদিস বিশ্লেষণ নিয়ে অনেক গ্রন্থ আছে। তবে এক্ষেত্রে হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী সম্পূর্ণ ব্যতিক্রম। এ গ্রন্থের বিষেশত্ব হলো একেবারে সহজ সরল ভাষায় করা জীবন ঘনিষ্ট নির্বাচিত হাদিস সংকলন।
বইটিতে ১২৯ জন হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবা, তাবেঈন ও তাবে তাবেঈনের বর্ণিত হাদিস ব্যবহার করা হয়েছে। তাদের সবার নাম ও সংক্ষিপ্ত পরিচয় বইয়ে সংযুক্ত হয়েছে, যা খুবই তথ্যবহুল। ২৭টি উৎস গ্রন্থ এবং ৩১টি রেফারেন্স বইয়ের সাহায্য নেয়া হয়েছে। সবগুলোর সংক্ষিপ্ত বিবরণ দেয়া আছে। একজন পাঠকের কাছে পড়ার সময় বইটিকে কঠিন গবেষণা গ্রন্থ মনে হবে না কিন্তু গবেষণা করার সকল উপকরণই এখানে দেয়া আছে।
এইসব হাদিস সম্পর্কে লেখক বলেছেন ‘‘হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণী’ নবীজীর (স) পবিত্রবাণীর শাব্দিক অনুবাদ নয়। নবীপ্রেমিক হিসেবে তাঁর পবিত্রবাণীর যে অন্তর্নিহিত অর্থ আমি উপলব্ধি করেছি, তা-ই আন্তরিকতার সাথে মায়ের ভাষায় উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে মর্মার্থ অনুধাবনে, প্রকাশে বা মুদ্রণে কোথাও কোনো ভুল হয়ে থাকলে আল্লাহ গাফুরুর রাহীমের কাছে করজোড়ে অবনতমস্তকে ক্ষমাপ্রার্থনা করছি। পরম করুণাময় আল্লাহ রাব্বুল আলামিন আমাদের সবাইকে সকল ভুলভ্রান্তি মুক্ত করে সিরাতুল মুস্তাকিম, সাফল্যের সরলপথে পরিচালিত করুন।’’
হাদীস শরীফ বাংলা মর্মবাণীর উদ্বোধনী হাদীস-ই বলে দেয় যে তিনি কী ছিলেন! নবীজী (স) এই হাদীসে সুস্পষ্টভাবে বলেছেন, ‘তোমার মনে কখনও কারও প্রতি কোনও বিদ্বেষ বা অমঙ্গল চিন্তা থাকবে না। এটাই আমার সুন্নত। যে আমার সুন্নতকে ভালবাসল সে আমাকে ভালবাসল। আর যে আমাকে ভালবাসল জান্নাতে সে আমার সাথে থাকবে’।
হিংসা বিদ্বেষ ও অসহিষ্ণুতায় নিমজ্জিত মানুষের মুক্তির জন্যে এর চেয়ে ভালো বাণী আর কী হতে পারে! আসলে তিনি শুধু বাণী দিয়ে যান নাই, সেই বাণীকে বাস্তবে রূপায়িত করার জন্যে যা যা করণীয় যা যা করতে হবে তিনি তা নিজে করেছেন। এবং সেভাবেই তিনি দিক নির্দেশনা দিয়েছেন।
সেরকম জীবন নির্দেশমূলক হাদিসগুলো এই গ্রন্থে স্থান করে নিয়েছে । জীবনদৃষ্টি অধ্যায়ের সূচনার হাদীসটিই হচ্ছে- নবীজী (স) বলেন, প্রতিটি কাজ তুমি সবচেয়ে ভালোভাবে করবে। এটাই আল্লাহর নির্দেশ। নবীজী (স)আল্লাহর এই নির্দেশ শুধু মানুষকে জানিয়েই ক্ষান্ত হন নাই, তিনি তার নিজের জীবনে প্রতিটি কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করার চেষ্টা করেছেন। ব্যক্তিজীবন থেকে শুরু করে সমাজজীবন রাষ্ট্রীয়জীবন ধর্মীয়জীবন সবক্ষেত্রেই তিনি এই সবচেয়ে ভালোভাবে করা অর্থাৎ এহসানের গুরুত্ব দিয়েছেন এবং নিজে তা পালন করেছেন। এবং তার সাহাবীরা তাদের জীবনেও প্রতিটি কাজ সবচেয়ে ভালোভাবে করার আন্তরিক প্রচেষ্টা চালিয়েছেন। এবং সেজন্যেই তারা এক আলোকোজ্জ্বল সভ্যতা নির্মাণ করতে পেরেছিলেন।
এনজে