স্বামীর ডাকে বাড়ির বাইরে গিয়েছিলেন সালমা বেগম (৩০)। সেই সরল বিশ্বাসই কাল হয়ে দাঁড়ায় তার জন্য। স্বামীর দেয়া আগুনে প্রাণ হারাতে হয়েছে তাকে।
সোমবার সন্ধ্যা ৭টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি পাবনা উপজেলার ঈশ্বরদীর দিয়াড বাগইল এলাকার শাহাবুলের স্ত্রী।
এ ঘটনায় সোমবার সন্ধ্যায় সালমার স্বামী শাহাবুলসহ ৫ জনকে আসামি করে ঈশ্বরদী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার অন্য আসামিরা হলেন-শাহাবুলের মা হালিমা বেগম, বড় ভাই আমজাদ হোসেন, মেজো ভাই আজিজ ও সেজো ভাই মজিবর রহমান। সালমার চাচাতো ভাই আলম বাদী হয়ে এ মামলায় দায়ের করে।
নিহত সালমার চাচি রেহেনা বেগম জানান, প্রায় ১৫ বছর আগে শাহাবুলের সঙ্গে সালমার বিয়ে দেয়া হয়। সংসার জীবনে তাদের সংসারে নবম শ্রেণিতে পড়ুয়া শারমিন (১৪) ও সিজান (১০) নামে এক ছেলে আছে। বিয়ের প্রথম দিকে শাহাবুল ভালো থাকলেও পরবর্তীতে মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। নিজের সংসারের খরচ চালাতে সালমা ঈশ্বরদী ইপিজেডএ একটি পোশাক কারখানায় চাকরি নেয়। দীর্ঘদিন সালমা চাকরি করে সংসার চালায়।
সালমার চাচাতো ভাই সুজন জানান, সালামার স্বামীর বাড়ি থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরেই বাগইল গ্রামে সালমার বাবার বাড়ি। রোববার বিকেলে ওই এলাকায় ঝড় হয়। এরপরে সালমা বাবার বাড়িতে আসেন। বাবা নুর মোহাম্মদ বার্ধক্যজনিত কারণে অসুস্থ। ঠিকমতো চোখে দেখতে পান না। সালমা তার বাবার জন্য রুটি আর সেমাই বানিয়ে এনেছিল। রুটি ও সেমাই বাবাকে দিয়ে স্বামীর বাড়ি ফিরে যাওয়ার পরেই এ ঘটনা ঘটে।
সালমার মেয়ে শারমিন জানান, তাদের বাড়ির পাশে রেললাইন। সেই রেললাইনের পাশেই তার বাবা একটি চায়ের দোকান দিয়েছিল। রোববার সন্ধ্যায় মা ফিরে আসলে বাবা বাড়ি থেকে মাকে চায়ের দোকানে ডেকে নিয়ে যায়। ওই সময় বাবা মাকে জানায় যে, চায়ের দোকানের আশেপাশে একটা মানুষ ঘোরাফেরা করছে। তার ভীষণ ভয় লাগছে। কথাটা শুনে মা সরল মনে বাবার পেছন পেছন চলে যায়।
সালমার মা হালিমা জানান, মৃত্যুর আগে সালমা ঘটনার বিবরণ দিয়ে গেছে। সালমা তাদের জানায় যে, কৌশলে বাইরে ডেকে নিয়ে যায়। চায়ের দোকানের পাশে ছোট ছোট ঝোপ আছে। শাহাবুল অন্ধকারের মধ্যে তার গলায় গামছা দিয়ে ফাঁস দিয়ে শক্ত করে ধরে। এরপরে তাকে টেনে নিয়ে যায় ঝোপের দিকে। কোনো কিছু বুঝে উঠার আগেই তার শরীরে পেট্রোল ঢেলে দিয়ে আগুন দেয়া হয়। রোববার রাতে ঈশ্বরদী থেকে রামেক হাসপাতালে আসার পথে সালমা তাদের এসব কথা জানায়। সময় যতো গড়াতে থাকে সালমার অবস্থা ততোই অবনতি হতে থাকে। সোমবার দুপুরের পর থেকে সালমা কোনো কথা বলতে পারেনি।
স্থানীয়দের বরাদ দিয়ে সালমার চাচাতো ভাই সুজন জানান, সালমার সারা শরীরে আগুন জ্বলছে আর ছুটোছুটি করছে। সেই ভয়াবহ দৃশ্য দেখে স্থানীয় লোকজনদের কয়েকজন ছুটে এসে গায়ে পানি ঢেলে আগুন নেভায়। এরপরে প্রথমে তাকে নেয়া হয় ঈশ্বরদী সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। পরে রাত দুইটার দিকে সালমাকে রামেক হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ভর্তি করা হয়।
রামেক সূত্র জানায়, সালমার শরীরের ৯৫ ভাগ পুড়ে গেছে ও পোড়া স্থানগুলো ছিল খুব গভীর। মঙ্গলবার সকালে ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের কাছে সালমার লাশ হস্তান্তর করা হবে।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস