রাজধানীর শ্যামলী এলাকায় বাজার করতে এসেছিলেন শাওন নামের এক পোশাককর্মী। বর্তমান বাজারের দাম সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির বাজারে আয়-ব্যয়ের হিসাব এখন মেলানো যাচ্ছে না। মাংসের দাম বেশি হওয়ায় কিছুদিন আগেও মাছ কিনতাম। এখন মাংস কেনা মুশকিল আবার মাছের বাজারও চড়া। তবে আগে তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছ কিনে খাওয়া যেত; কিন্তু এখন এগুলোর দামও চড়া।
রমজান মাসের আগমনের সাথে সাথে আরও ভয়াবহ চেহারা ধারণ করেছে নিত্যপণ্যের বাজার। দ্রব্যমূল্যের লাগাম ছাড়া ঘোড়া ছুটছেতো ছুটছেই। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। মাছ, মাংস, সবজিসহ দাম বেড়েছে প্রায় সব পণ্যের।
বৃহস্পতিবার (২৩ মার্চ) রাজধানীর শ্যামলী, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে এই এমনটাই দেখা গেছে।
সোনালি মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৭০ টাকা, অথচ কয়েক দিন আগেও ছিল ২৭০ টাকা। ব্রয়লার ২৭০ টাকা বিক্রি হচ্ছে, যা কয়েক দিন আগে ছিল ২৪০-২৫০ টাকা কেজি। গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ টাকা, যা কয়েক দিন আগে ছিল ৭০০ টাকা। খাসির মাংস ১ হাজার ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ১ হাজার টাকা।
মাঝারি আকৃতির রুই মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা বিক্রি হচ্ছে; অথচ কয়েক দিন আগেও ছিল ২৬০ টাকা। জাপানি মাছ প্রতি কেজি ২৩০ টাকা, যা আগে ছিল ১৯০ টাকা। মৃগেল মাছ ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ২১০ টাকা। কই মাছ কেজি প্রতি ৩০০ টাকা, যা আগে ছিল ২১০ টাকা। মাঝারি গলদা চিংড়ি মাছ ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৫৫০ টাকা। তেলাপিয়া প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা, যা আগে ছিল ১৮০ টাকা।
পাঙাশও বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা কেজি, যা আগে ছিল ১৮০ টাকা। পাবদা বিক্রি হচ্ছে ৫০০ টাকায় যা আগে ছিল ৪০০ টাকা। সুরমা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা, যা আগে ছিল ২০০ টাকা। অন্যদিকে দেশি কই মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০০ টাকা। চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, যা আগে ছিল ৬০০ টাকা। শোল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, যা আগে ছিল ৫০০ টাকা। ট্যাংরা প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, যা আগে ছিল ৩৫০ টাকা।
এদিকে শুধু মাছ ও মাংসের দাম বাড়েনি। পাল্লা দিয়ে বেড়েছে ডিমের দামও। বর্তমানে প্রতি হালি ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, যা কয়েক দিন আগেও ছিল ৪০ টাকা।
মুরগির দাম বাড়ার বিষয়ে ব্যবসায়ী আলাউদ্দিন বলেন, রমজান উপলক্ষ্যে মানুষ অতিরিক্ত মাংস কিনে ফ্রিজে রাখার চেষ্টা করছে। এ জন্য মুরগির প্রচুর চাহিদা।
এ ছাড়া সব কিছু দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় মুরগির ফিডেরও দাম বেড়েছে। ফলে খামারিদের মুরগির খরচ বৃদ্ধি হওয়ায় পাইকারি দামও বেড়েছে। ফলে বাজারে বিক্রেতারাও বেশি দামে বিক্রি করছে।
মাছের দাম বাড়ার কারণ জানতে চাইলে মাছ ব্যবসায়ী আসাদ খান বলেন, মাছের ফিডের (খাবার) দাম বাড়ার পর থেকে মাছের দাম বেড়ে গেছে। ফিডের দাম বাড়ায় মাছচাষিদের অতিরিক্ত খরচ হচ্ছে। ফলে ব্যবসায়ীদের কাছ বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বেশি দামে ক্রয় করার ফলে ব্যবসায়ীদেরও বাড়তি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
রমজানকে ঘিরে বেশি দাম বেড়েছে শসা, ক্ষিরা, লেবু, মরিচ, গাজর পেঁয়াজে। কোনো সবজিই এখন ৫০-৬০ টাকার কমে পাওয়া যাচ্ছে না।
শ্যামলীর কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, পটল প্রতি কেজি ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, টমেটো প্রতি কেজি ৪০ টাকা; অথচ কয়েক দিন আগে ছিল ৩০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৮০ টাকা; অথচ কয়েক দিন আগেই ছিল ৬০ টাকা, বেগুন প্রতি কেজি ১০০ টাকা, যা আগে ছিল ৮০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ৮০ টাকা,
সিম প্রতি কেজি ৬০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, লেবু প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা অথচ কয়েক দিন আগে ছিল ২০-৩০ টাকা, মুলা বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা, পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৪৫ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ টাকা, যা আগে ছিল ১০০ টাকা।
এ ছাড়া পেঁপে প্রতি কেজি ৪০ টাকা, যা আগে ছিল ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, মুলা প্রতি কেজি ৫০ টাকা, যা আগে ছিল ৪০ টাকা, ফুলকপি প্রতি পিস ৫০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ৬০ টাকা যা আগে ছিল ৪০ টাকা এবং কাঁচাকলা প্রতি হালি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছ।
এম জি