পবিত্র রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ বিশেষ ইবাদত। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের উদ্দেশ্যে রমজান মাসে তারাবিহ নামাজ পড়বে, তার বিগত জীবনের সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। (বুখারি)
তারাবিহ নামাজ রোজা শুরু করার আগেই পড়া সুন্নত। রমজানের চাঁদ দেখেই মুমিন মুসলমান তারাবিহ নামাজ আদায় করেন। এমনকি যারা শরিয়তসম্মত কোনো গ্রহণযোগ্য ওজরের কারণে রোজা পালনে অক্ষম, তাঁরাও সুযোগ ও সামর্থ্য থাকলে তারাবিহ নামাজ আদায় করে থাকেন। পুরুষরা মসজিদে গিয়ে জামাতের সঙ্গে তারাবিহ নামাজ আদায় করেন। আর নারীরা নিজ নিজ ঘরে তারাবিহ আদায় করেন। শিশুরা বড়দের সঙ্গে সাধ্যমতো তারাবিহ পড়বে।
তারাবিহ কী?
তারাবিহ অর্থ হলো বিশ্রাম নেওয়া, প্রশান্তি লাভ করা। বরকতময় মাস রমজানে এশার নামাজের পর আদায় করা নামাজই তারাবিহ। দুই দুই রাকাত করে চার রাকাত তারাবিহ পড়ার পর বিশ্রাম নেওয়া হয়। কিছু সময় বিরতি দেওয়া হয়। বিরতি ও বিশ্রামের এ সময় রোজাদার নামাজিরা বিভিন্ন দোয়া-ইস্তেগফার করে থাকেন। আবার এ নামাজে দেহ-মনে প্রশান্তি আসে বলেই এর নাম তারাবিহ বা প্রশান্তির নামাজ।
নামাজ ও রোজা সব মুসলমানের জন্য ফরজে আইন হিসেবে প্রযোজ্য। আবার রোজার সঙ্গে তারাবিহ নামাজের একটা নিবিড় সম্পর্ক আছে। রমজান এলেই তারাবিহ নামাজ পড়ে মুমিন মুসলমান। হাদিসে পাকে এসেছে-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তাআলা তোমাদের প্রতি রোজা ফরজ করেছেন, আর আমি তোমাদের জন্য তারাবিহ নামাজকে সুন্নত করেছি। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে সওয়াবের আশায় রমজানে দিনে রোজা পালন করবে ও রাতের নামাজ (তারাবিহ) আদায় করবে, সে গুনাহ থেকে এরূপ পবিত্র হবে, যেরূপ নবজাতক শিশু মাতৃগর্ভ থেকে নিষ্পাপ হয়ে ভূমিষ্ঠ হয়।’ (নাসাঈ)
কোরআন নাজিলের মাস রমজান। তারাবিহর নামাজের প্রধান উদ্দেশ্য কোরআন তেলাওয়াত করা ও শোনা। এ নামাজেই মাসব্যাপী পূর্ণ কোরআন শরিফ তেলাওয়াত করা হয়। একে খতম তারাবিহ বলে। আবার ছোট ছোট সুরা দিয়েও তারাবিহ নামাজ পড়া যায়। অনেকে এটাকে সুরা তারাবিহ বলে থাকে।
খতম তারাবিহ কিংবা সুরা তারাবিহ উভয় ক্ষেত্রে ২০ রাকাত তারাবিহ পড়া উত্তম। রোজার সময় যত বেশি নামাজ পড়া যায় ততবেশি উত্তম। যদিও তারাবিহ নামাজের ব্যাপারে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘তা নিশ্চিতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, নিশ্চয়ই উবাই ইবনে কাআব রাদিয়াল্লাহু আনহু রমজানে রাত জেগে ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ পড়তেন এবং তিন রাকাত বিতর নামাজ পড়তেন।’ তাই উলামায়ে কিরামের একটি বড় অংশ মনে করে, এটাই সুন্নত। কেননা, তা আনসার, মুহাজির—সব সাহাবির মধ্যে সুপ্রতিষ্ঠিত, কেউ তা অস্বীকার করেননি।
হজরত ইবনে তাইমিয়া রাহমাতুল্লাহি আলাইহি আরও বলেন, ‘২০ রাকাত তারাবিহ পড়াই উত্তম এবং এটাই অধিকাংশ মুসলমানের আমল; আর নিশ্চয় এটি ১০ (সর্বনিম্ন) ও ৪০ (সর্বোচ্চ)-এর মাঝামাঝি। তবে যদি কেউ ৪০ রাকাত বা অন্য কোনো সংখ্যা আদায় করেন, তবে তা-ও জায়েজ হবে। এ বিষয়ে অন্যান্য ইমাম আলোকপাত করেছেন। (মজমুআ ফাতাওয়া)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, ‘নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ২০ রাকাত তারাবিহ নামাজ পড়তেন; তারপর বিতর নামাজ পড়তেন (মাজমুআ ফাতাওয়া ইবনে তাইমিয়া)
হজরত আবদুল্লাহ ইবনে রুম্মান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহুর খেলাফতের সময় মানুষ ২৩ রাকাত (বিতরসহ তারাবিহ নামাজ) দ্বারা রাত জাগরণ করতেন। (মুআত্তা ইমাম মালিক ২৮১; আবু দাউদ ৪২৮৯)
হজরত মোল্লা আলী কারি রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, ‘তারাবিহ নামাজ ২০ রাকাত, এ বিষয়ে সব সাহাবির ইজমা (ঐকমত্য) হয়েছে (মিরকাত শারহে মিশকাত, মাজমুউল ফাতাওয়া)
হজরত হাসান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, ‘দ্বিতীয় খলিফা হজরত ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু মানুষকে একত্র করলেন হজরত উবাই ইবনে কাআব রাদিয়াল্লাহু আনহুর পেছনে; তখন তিনি তাদের ইমামতি করে ২০ রাকাত নামাজ পড়তেন। (আবু দাউদ ১৪২৯)।
এনজে