বর্তমানে দেশে ভোজ্যতেলের বার্ষিক চাহিদা রয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টনের। এর বিপরীতে মাত্র তিন লাখ টনের জোগান অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে আসে। অর্থাৎ চাহিদার প্রায় ৮৮ শতাংশই পূরণ করতে হয় আমদানির মাধ্যমে। এক্ষেত্রে প্রতি বছর ব্যয় হয় প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। তবে বৈশ্বিক সংকটের কারণে আমদানিনির্ভরতা কমিয়ে আনতে চলতি অর্থবছর থেকে তিন বছর মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে সরকার। এতে ২০২৫ সাল নাগাদ সাড়ে নয় লাখ টন বা চাহিদার ৪০ শতাংশ ভোজ্যতেল উৎপাদন করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। এরই মধ্যে চলতি মৌসুমের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি জমিতে বিভিন্ন ধরনের তেলবীজ আবাদ হয়েছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় এবার সরকারিভাবে ২০ লাখ বিঘা জমিতে বিনামূল্যে সার ও বীজ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, ২০২০-২১ অর্থবছরে ৮ লাখ ৫৪ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের তেলবীজ আবাদ হয়। সে বছর প্রায় ১২ লাখ টন তেলবীজ উৎপাদন হয়। ২০২১-২২ অর্থবছর ৮ লাখ ৬১ হাজার হেক্টর জমিতে ১২ লাখ ৬২ হাজার টন তেলবীজ উৎপাদন হয়।
চলতি অর্থবছর ৮ লাখ ৫৯ হাজার হেক্টর জমিতে সাড়ে ১৫ লাখ টন তেলবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়। এসব তেলবীজ থেকে চার লাখ টন ভোজ্যতেল উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে।
এবার আবাদি জমির পরিমাণ লক্ষ্যমাত্রাকে ছাড়িয়ে গেছে। অর্থবছরের মার্চ পর্যন্ত ১০ লাখ ৩ হাজার হেক্টর জমিতে বিভিন্ন ধরনের তেলবীজ আবাদ করা হয়েছে। এর মধ্যে সরিষা ৮ লাখ ১২ হাজার হেক্টর, চীনাবাদাম ৮৭ হাজার হেক্টর, তিল ২ হাজার হেক্টর, সয়াবিন ৮৬ হাজার হেক্টর, সূর্যমুখী ১৪ হাজার হেক্টর ও তিসি ১ হাজার হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এ মৌসুমের বাকি সময় আরো প্রায় ৫০ হাজার হেক্টর জমিতে তিল ও সয়াবিনের আবাদ হবে। সে হিসেবে এ বছর প্রায় ১৬ লাখ টন তেলবীজ উৎপাদনের সম্ভাবনা রয়েছে।
সাধারণত সরিষা, সূর্যমুখী ও তিল হতে ভোজ্যতেল উৎপাদন হয়। আর চীনাবাদাম ও সয়াবিন বেকারি শিল্প এবং পোল্ট্রি ও মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। চীনাবাদাম ও সয়াবিন বাদে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ১৩ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে ১৮ লাখ টন তেলবীজ উৎপাদনের পরিকল্পনা রয়েছে। আর এসব শস্য থেকে ৫ লাখ ৯৬ হাজার টন ভোজ্যতেল উৎপাদন হবে, যা মোট চাহিদার ২৪ দশমিক ৮৪ শতাংশ। ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ২০ লাখ ৫৮ হাজার হেক্টর জমিতে ২৯ লাখ ২৭ হাজার টন তেলবীজ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নেয়া হয়েছে, যেখান থেকে ৯ লাখ ৬৫ হাজার টন ভোজ্যতেল উৎপাদন হবে। এটি মোট চাহিদার ৪০ দশমিক ২৪ শতাংশ।
তবে চীনাবাদাম ও সয়াবিন থেকে তেল নিষ্কাশন সম্ভব হলে আগামী দুই অর্থবছরে যথাক্রমে ৭ লাখ ১১ হাজার টন ও ১১ লাখ টন ভোজ্যতেল উৎপাদন সম্ভব হবে, যা মোট চাহিদার ৪৫ দশমিক ৮৬ শতাংশ।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে ২০২০-২১ অর্থবছর থেকে পাঁচ বছর মেয়াদি ‘তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন বৃদ্ধি’ প্রকল্প হাতে নেয়া হয়। এরপর এ প্রকল্পের অধীনে চলতি অর্থবছর থেকে ভোজ্যতেল আমদানিনির্ভরতা হ্রাসে তিন বছর মেয়াদি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। এর মাধ্যমে ২০২৫ সাল নাগাদ বিভিন্ন তেলজাতীয় ফসলের উৎপাদন তিনগুণ বৃদ্ধির পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়।
এনজে