রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে চলছে গাছ কাটার মহোৎসব। সুইমিংপুলের পাশে এরই মধ্যে ৭টি গাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এছাড়া আরো প্রায় ৬০টির মতো গাছ কাটা হবে বলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি প্রকল্পের বোর্ডে টানানো নোটিশ সূত্রে জানা যায়। মতিহারের সবুজ চত্বরকে মরুভূমিতে পরিণত করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।
কৃষি প্রকল্প অফিস সূত্রে জানা যায়, সুইমিংপুলের পাশে থাকা ৪টি বাবলা, ৩টি শিশু, ২টি জাম ও ২টি খেজুর গাছ কাটা হবে। এর মধ্যে ৭টি গাছ ইতোমধ্যেই কাটা হয়েছে। এগুলো মাত্র ৭৬ হাজার ১শ টাকায় বিক্রি করা হয়।
এছাড়া রাবির মেডিকেল সেন্টারের মধ্যে কাঠাল, জাম, গবরা, আমসহ মোট ১৪টি গাছ কাটা হবে। যার মধ্যে বেশ কয়েকটি গাছ এরই মধ্যে কাটা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় সুইপার কলোনি সংলগ্ন এলকায় ২২টি, রাবির নারিকেল বাড়িয়া ক্যাম্পাসে ১৬টি, এছাড়াও ক্যাম্পাসের বিভিন্ন জায়গায় মোট ১৩টি গাছ কাটা হবে। এর মধ্যে কিছু মরা গাছও রয়েছে।
এ বিষয়ে কৃষি প্রকল্পের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা প্রকৌ. মো. এমরান আলী বলেন, ‘অনেক দিন আগে থেকেই সুইমিংপুলের লোকজন আমাদের কাছে অভিযোগ দিয়ে আসছে। সুইমিংপুলের আশেপাশের গাছগুলো থেকে পাতা পড়ে পানি নোংরা হয়ে যাচ্ছে। সেজন্য গাছগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে।’
মো. এমরান আলী আরো বলেন, ‘যখন কোনো গাছ অন্য গাছের ওপর হেলে পড়ে, মারা যায়, বা ঘর-বাড়ি, বিদ্যুতের লাইনের ওপর পড়ে কিংবা যেসব গাছ সমস্যার সৃষ্টি করে, সেগুলো আমরা কেটে ফেলি বা বিক্রি করি। বর্তমানে যে গাছগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে তা আইন মেনেই করা হয়েছে। আর মেডিকেল সেন্টারের ওখানে ভবন হবে সেজন্য সেগুলো কাটা হচ্ছে, হবে। তবে সুইপার কলোনির গাছগুলো ব্যাপারে কিছু জানি না।’
সুইমিংপুলের পাশ দিয়ে প্রতিদিনই ক্যাম্পাসে আসেন শাহ মখদুম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী কাওসার বুকল। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রত্যেক ছুটির মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এভাবে গাছ কাটে। এর আগেও হবিবুর রহমান হলের সামনে পুরো একটা এলাকা গাছ কেটে সাফ করে ফেলেছে প্রশাসন। গতকাল সুইমিং পুলের গাছও কাটতে দেখে অবাকই হয়েছি। কারণ সুইমিংপুলের ওখানে গাছগুলো যথেষ্ট দূরে ছিলো। যে দূরুত্বে গাছগুলো ছিলো তাতে সুইমিংপুলের পানির যে খুব একটা ক্ষতি হতো এমন নয়।’
কাওসার বুকল আরো বলেন, ‘শুনছি ক্যাম্পাসে আরো কিছু গাছ কাটা হবে। এভাবে গাছ কাটার কোনো মানে হয় না। এদিকে রাজশাহীর আবহাওয়া দিন দিন খারাপের দিকে যাচ্ছে। সে তুলনায় গরমের মধ্যে ক্যাম্পাস অনেক ঠা-া থাকে। কিন্তু এভাবে গাছ কাটতে থাকলে ক্যাম্পাসে থাকা মুশকিল হয়ে যাবে।’
সুইমিংপুলের কাছাকাছিই স্টেডিয়াম মার্কেট। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্টেডিয়াম মার্কেটের এক দোকানদার বলেন, ‘বর্তমান প্রশাসন যেসব গাছ কাটা দরকার সেগুলোও কাটছে, যেগুলোর দরকার নেই সেগুলোও কাটছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, সুইমিংপুল থেকে শুরু করে মেডিকেল সেন্টার পর্যন্ত যে গাছগুলো কাটা হয়েছে সেগুলো কাটার কোনো দরকারই ছিলো না। আর এইভাবে গাছ কাটা যেকোনোভাবে বন্ধ করতে হবে। তা নাহলে ক্যাম্পাসকে বাঁচানো যাবে না।’
এ বিষয়ে কৃষি প্রকল্পের সভাপতি ও উপ-উপাচার্য অধ্যাপক চৌধুরী সারওয়ার জাহান বলেন, ‘সুইমিংপুলের ড্রেনের ওপরেই গাছগুলো ছিলো। গাছগুলো যেনো ড্রেনটা ফাটিয়ে নষ্ট না করে দেয় সেজন্য কাটার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এজন্য এরই মধ্যে ২টি জাম গাছ, ১টা বাবলা এই তিনটা গাছ কাটা হয়েছে। এছাড়া আর কোনো গাছ কাটার কোনো অর্ডার নেই।’
তবে সরজমিনে দেখা যায়, ‘২টি জাম গাছ ছাড়া বাকি ৫টি গাছ ড্রেনের ওপরে না কিছুটা দূরে ছিল।
সানবিডি/ঢাকা/হৃদয়/এসএস