চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) মূল্যবান ধাতু স্বর্ণের বৈশ্বিক চাহিদা উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। এ সময় দেশে দেশে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও চীনের গ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ স্বর্ণ কিনলেও বিনিয়োগকারীরা ক্রয়ের পরিমাণ কমিয়েছেন। মূলত এ কারণেই চাহিদা বাড়ার বদলে কমেছে। ওয়ার্ল্ড গোল্ড কাউন্সিল (ডব্লিউজিসি) সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানায়।
এ বিষয়ে প্রান্তিকভিত্তিক চাহিদা শীর্ষক এ প্রতিবেদনে বলা হয়, জানুয়ারি-মার্চ পর্যন্ত মূল্যবান ধাতুটির বৈশ্বিক চাহিদা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশ কমেছে। চাহিদার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৮১ টনে।
স্বর্ণের চাহিদায় উত্থান-পতনে কয়েকটি বিষয় চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করে। বৈশ্বিক চাহিদার অর্ধেকই আসে অলংকার ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। বাকি অর্ধেক আসে বিনিয়োগকারী, কেন্দ্রীয় ব্যাংক ও শিল্পসহ অন্যান্য খাত থেকে। অর্থনীতিতে টালমাটাল পরিস্থিতি দেখা দিলে নিরাপদ বিনিয়োগ মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত হয় এ ধাতু। বিনিয়োগকারীদের কাছে এ সময় ধাতুটির চাহিদা বেড়ে যায়।
গত বছর বিশ্ব অর্থনীতিতে বিপর্যয় দেখা দিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোয় স্বর্ণ কেনার হিড়িক পড়ে যায়। ফলে ওই সময় ১১ বছরের সর্বোচ্চে উঠে আসে ধাতুটির চাহিদা। এর প্রভাবে স্বর্ণের দাম আউন্সপ্রতি ২ হাজার ডলারে জায়গা করে নেয়, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ।
বছরের প্রথম তিন মাসে বৈশ্বিক চাহিদা কমে যাওয়ার কারণ হিসেবে ডব্লিউজিসি বলছে, ইউরোপে স্বর্ণের বার ও মুদ্রা কেনার পরিমাণ কমেছে। ভারতে স্বর্ণালংকারের চাহিদা কমে নেমেছে তিন বছরের সর্বনিম্নে। এছাড়া এক্সচেঞ্জ ট্রেডেড ফান্ডগুলো (ইটিএফ) বিনিয়োগকারীদের জন্য মজুদ করে রাখা স্বর্ণ বিক্রি করে দিচ্ছে, যা চাহিদা কমার ক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে।
প্রত্যক্ষভাবে স্বর্ণ না কিনে এতে বিনিয়োগের সবচেয়ে জনপ্রিয় মাধ্যম ইটিএফ। এসব ফান্ড মূলত বিনিয়োগকারীদের হয়ে নির্দিষ্ট পরিমাণ স্বর্ণ একটি ভল্টে মজুদ করে রাখা হয়। ইটিএফ শেয়ারের মূল্যনির্ধারণ হয় স্বর্ণের বিদ্যমান বাজারদরের ওপর ভিত্তি করে।
অন্যদিকে প্রথম প্রান্তিকে যেসব খাতে স্বর্ণের চাহিদা বেড়েছে তার মধ্যে অন্যতম কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তিন মাসে এসব ব্যাংক ২২৮ টন স্বর্ণ কিনেছে। ২০০০ সালের পর বছরের এ সময় এত বেশি স্বর্ণ আর কখনো কেনেনি কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো।
ডব্লিউজিসি জানায়, চীনে ২০১৫ সালের প্রথম প্রান্তিকের পর এবারই প্রথম স্বর্ণালংকারের সর্বোচ্চ চাহিদা তৈরি হয়। চাহিদার পরিমাণ ছিল ১৯৮ টন। কভিড-১৯-সংক্রান্ত সব ধরনের বিধিনিষেধ উঠিয়ে নেয়ায় দেশটির গ্রাহকরা অলংকার কেনার পরিমাণ বাড়িয়েছেন।
এনজে