প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, বঙ্গবন্ধুর ছোট ছেলে শিশু শেখ রাসেলের ভাগ্য যেন আর কারো বরণ করতে না হয় এবং এমন ভয়ঙ্কর নিষ্ঠুরতার মুখোমুখী হতে না হয়। তিনি বলেন, আমি আমার ছোট ভাই রাসেলকে শিশু বয়সে হারিয়েছি এজন্য আমি সকল শিশুর নিরাপদ জীবন কামনা করি এবং আমি চাই তারা যথাযথভাবে বেড়ে উঠুক।
রবিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে জাতীয় শিশু-কিশোর পরিষদ আয়োজিত শেখ রাসেলের ৫১তম জন্মদিন উপযাপন উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি রকিবুর রহমানের সভাপতিত্বে সংগঠনের উপদেষ্টা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী বীর বিক্রম এবং সিরাজুল ইসলাম মোল্লা এমপি ও সাধারণ সম্পাদক মাহমুদুস সামাদ চৌধুরী এমপি ও পরিষদ সদস্য আতিকা সায়য়ারা বক্তব্য রাখেন।
অনুষ্ঠানে রাসেলের বড় বোন শেখ হাসিনা বলেন, শিশু রাসেলের দেহ বুলেটে ঝাঝরা করে দেয়ার মাধ্যমে খুনীরা তাদের নীতিভ্রষ্ট ও নিষ্ঠুরতা তুলে ধরেছে। এখন আমি শিশুদের মুখে রাসেলকে খুঁজে ফিরছি এবং ভাবছি বেঁচে থাকলে রাসেল এখন দেখতে কেমন হতো। শেখ হাসিনা বলেন, তার সরকার দেশকে এমনভাবে গড়ে তোলার চেষ্টা চালাচ্ছে যেখানে প্রতিটি শিশু নিরাপদ জীবন এবং উপযোগী পরিবেশে তাদের ভবিষ্যৎ নির্মাণ করার সুযোগ পায়।
শিশুদেরকে পড়াশোনায় মনোনিবেশের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পড়াশোনায় মনোযোগের পাশাপাশি তোমাদের পাঠ্যক্রম বহিঃর্ভুত কার্যক্রমে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে হবে, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রম সুস্থ ও সুযোগ্য নাগরিক গড়ে তোলে। তিনি শিশুদের জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকাসক্তির ব্যাপারে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে বাংলাদেশ অবশ্যই বিশ্বে মর্যাদার আসন লাভ করবে। শেখ হাসিনা বলেন, আজকের শিশুরাই ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনা করবে। এ জন্য সরকার বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে শিশুদের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মর্যাদা সমুন্নত রাখতে শিশুদের অবশ্যই সুযোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে হবে।
রাসেলের সঙ্গে তার স্মৃতি স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের পরিবার এবং দেশ যখন অস্থির সময় পার করছে, তখন রাসেলের জন্ম হয়, তাদের ছোট ভাইকে নিয়ে তারা অত্যন্ত আনন্দিত ছিলেন। তিনি বলেন, ঐতিহাসিক ৬-দফা দাবি ঘোষণার দেড় বছর আগে আমাদের উজ্জ্বল করে রাসেলের জন্ম হয়। তার জন্মের পর বেশীর ভাগ সময় আমার বাবা জেলে ছিলেন। স্বাধীনতার পরেই কেবল রাসেল আমার বাবার আদর পায়। শেখ হাসিনা বলেন, বাবার সঙ্গে দেখা করতে জেলখানায় যাওয়ার সময় আমরা রাসেলকে সঙ্গে নিয়ে যেতাম। শিশু রাসেল এ পরিস্থিতি বুঝতে পারতো, কিছুই সে বলতো না। তিনি বলেন, রাসেল বুঝতো জেলখানা হচ্ছে আমার বাবার বাড়ি।
শেখ হাসিনা বলেন, স্বাধীনতার পর রাসেল বঙ্গবন্ধুর কাছাকাছি থাকতো। বাবাকে সে বেশি বেশি কাছে পেতে চাইতো। শেষে সে আমার বাবার সঙ্গেই চির বিদায় নিল। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের ভয়ঙ্কর সেই রাতে আততায়ীরা অনেক শিশু হত্যা করেছে। তারা হত্যাকারীদের বাঁচাতে ইনডেমনিটি আইন পাস করেছে। আওয়ামী লীগ সরকার ওই আইন বাতিল করে ২১ বছর পর হত্যাকািেরদর বিচারের আওতায় এনেছে।
ভবিষ্যতে এ ধরনের নিষ্ঠুরতা বন্ধে তার সরকারের দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, শিশুদের অধিকার রক্ষায় এবং তাদের ওপর নির্যাতন বন্ধে তার সরকার আইন প্রণয়ন করেছে।
এ প্রসঙ্গে তিনি যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের আওতায় আনতে তার সরকারের উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা নারী, শিশু ও তরুণদের হত্যার জন্য দায়ী এবং এরা ১৯৭৫-এর হত্যাকারী। এ জন্য ১৯৭১ ও ১৯৭৫-এর হত্যাকারীদর বিচার অন্তর্ভুক্তিকরণ। নির্মমতায় দেশীয় সহায়তাকারীদের ব্যাপারে সকলকে সজাগ থাকার আহবান পুর্নর্ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ ধরনের কার্যক্রমে অপরাধীরা দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি পাবে। এ ধরনের সহিংসতা বন্ধ করতে সকলকে মনোযোগী হতে হবে উল্লেখ করে তিনি শিশুদের তাদের আশপাশে শারীরিক ও মানসিক অসুস্থতায় ভুগছে এমন শিশুদের যতœ নেয়ার আহবান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়া ও সাংস্কৃতিক বিভিন্ন প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন এবং পরে পরিষদের সদস্যদের পরিবেশিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।