কোনো শিক্ষককে শাস্তি দেইনি ধর্ম নিয়ে কটূক্তির বিচার হয়েছে। এতে যদি আমার ফাঁসি হয় মাথা পেতে নেব। ১৯৭১ সালে যুদ্ধ করে শহীদ হতে পারিনি গাজী হয়েছি। এখন আমার আল্লাহকে নিয়ে কটুক্তি বিচার করে যদি ফাঁসি হয় তাহলে বুঝবো শহীদ হয়েছি।
বৃহস্পতিবার নারায়ণগঞ্জ ক্লাবে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেল
নে তিনি এ সব কথা
বলেন সাংসদ সেলিম ওসমান।
সংবাদ সম্মেলন কক্ষে দলের শতাধিক নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন।
সাংসদের কাছে সাংবাদিকেরা জানতে চান, আপনি ক্ষমা চাইবেন কিনা? এতে সাংবাদিকদের পাল্টা প্রশ্ন করে সাংসদ বলেন, ‘আমি কার কাছে ক্ষমা চাইব? আল্লাহর কটাক্ষকারীর সাজা হয়েছে। আমি যদি মরেও যাই তাও ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।’
ঈমানদার মুসলমানেরা শিক্ষকের শাস্তি চেয়েছিলেন দাবি করে তিনি সাংবাদিকদের কাছে জানতে চান, ‘আমরা কি ইবলিসের রাজত্বে বাস করছি? আপনারা জবাব দেন।’
শুক্রবারের ঘটনা প্রসঙ্গে সেলিম ওসমান বলেন, শুক্রবার সকাল ১০টায় ওই স্কুলের হিসেব-নিকেশ নিয়ে একটি সভা ডাকা হয়েছিল। ওই স্কুলে ইতোমধ্যে আমার ব্যক্তিগত তহবিল হতে ৫০ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। স্কুলের একটি দেওয়াল নির্মাণ ও একটি পুকুর ভরাট নিয়ে ম্যানেজিং কমিটির উপর স্থানীয়দের ক্ষোভ ছিল। কারণ জলাশয় ভরাট করতে হলে চেয়ারম্যান, ইউএনওসহ সংশ্লিষ্টদের অনুমতি প্রয়োজন হয়। শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় স্কুল শিক্ষককে গণপিটুনী দিয়ে একটি কক্ষে আটকে রাখা হয়। পরে পুলিশ এসে প্রধান শিক্ষককে উদ্ধার করে স্কুলের একটি কক্ষে আটকে রাখে। পুলিশ ও স্থানীয়রা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে পারছিল না। দুপুর ১২টায় আমাকে ফোন করা হয়। তখন আমি স্থানীয়দের জানাই তোমরা আমার উপর আস্থা রাখতে পারবে কিনা। উত্তরে তারা হ্যাঁ জানায়। ওই সময়টাতে পুলিশ প্রশংসা পাওয়ার মতো কাজ করেছে। কারণ উত্তেজিত জনতাকে শান্ত করতে হলে তখন পুলিশের লাঠিচার্জ কিংবা গুলি করা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। আমি জুমআর নামাজের পর রওনা দিয়ে বিকেল ৪টায় ঘটনাস্থলে গিয়ে পৌঁছাই। তখন সেখানে গিয়ে দেখি ৫ হাজারের মতো লোকজন বৃষ্টিতে ভিজে সেখানে উপস্থিত রয়েছে। তাদের মধ্যে ৮শ থেকে ১ হাজার নারীও ছিল। অনেকেই সেদিন দুপুরে নামাজ পড়তে যাই নাই। আমি ঘটনাস্থলে উপস্থিত হওয়ার পর লোকজন আমাকে বলে ‘এমপি সাহেব শিক্ষক যেন ঘর থেকে বের হতে না পারে। মাস্টারকে আপনি আমাদের উপর ছেড়ে দিন। আমরা তাকে কেটে কুচি কুচি করে খাওয়াবো। তখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনতে গিয়ে আমি বদ্ধঘরে থাকা হেড মাস্টারের কাছে কারণ জানতে চাই এবং ধর্ম নিয়ে কোনো কটূক্তি করেছে কিনা সেটা জানতে চাই। উত্তরে প্রধান শিক্ষক আমাকে বলেন, ‘হয়তো আমার মাথা ঠিক ছিল না। আমার মাথা নষ্ট। কটূক্তি করলেও করতে পারি। আমি তিন কন্যার বাবা, আমি একজন কন্যাদ্বায়গ্রস্থ পিতা। আপনি আমাকে রক্ষা করেন। তখন তাকে আমি জিজ্ঞেস করি আপনি এখন কী করবেন, তখন প্রধান শিক্ষক স্বেচ্ছায় কানে ধরে উঠবস করার কথা স্বীকার করেন। পরে আমি তাকে ঘর থেকে বের করে আনি। তখন হেড মাস্টার কানে ধরে উঠবস করে। হ্যাঁ তখন আমি এলাকাবাসীর জন্য পরিস্থিতি সামাল দিতে আঙ্গুল দিয়ে উঠবস করতে বলেছিলাম।
ওই সময়ে সেলিম ওসমান বলেন, ‘আমার লোকজন কী হাতে চুড়ি পরে আছে’। প্রশ্ন ছুড়তেই সংবাদ সম্মেলনে থাকা সেলিম ওসমানের অনুগামী লোকজন চিৎকার করে উঠেন ‘আমরা আছি, শুধু অর্ডার দেন।’
তখন সেলিম ওসমান পাল্টা উত্তরে বলেন, ‘আমি নারায়ণগঞ্জকে অশান্ত করতে চাই না। বন্দরের ঘটনার কারণে যদি আমার ফাঁসিও হয় তাহলে কেউ কোনো প্রতিবাদ করবে না। যে শাস্তি হোক আমি মাথা পেতে নিব।’
শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে লাঞ্ছনার ঘটনায় জাতীয় পার্টির স্থানীয় সাংসদ সেলিম ওসমানসহ জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি ইকবাল কবিরের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এই রুল দেন।
সানবিডি/ঢাকা/এসএস