ভারতে চলতি বছরে এখন পর্যন্ত ৫০ শতাংশ বেড়েছে জিরার দাম।প্রতি কুইন্টালের দাম উঠেছে ৪৭ হাজার ৫৭০ রুপি পর্যন্ত। অব্যাহত রফতানি চাহিদা বাজারদরে এমন উল্লম্ফনের ক্ষেত্রে প্রধান প্রভাবকের ভূমিকা পালন করেছে। আর এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি এগিয়ে চীন।
চীনের ক্রেতারা যে পরিমাণ জিরা কিনেছে, তা রফতানিকারকদের সরবরাহকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে যথেষ্ট। গত তিন সপ্তাহে চীন ভারতের কাছ থেকে ৩০০ থেকে সাড়ে ৩০০ কন্টেইনার জিরা কিনেছে।
বাংলাদেশও দেশটি থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ জিরা আমদানি করেছে। বর্তমানে দেশে জিরার চাহিদা স্বাভাবিকের তুলনায় মাত্র ১৫-২০ শতাংশ।
চীনে ব্যাপক চাহিদার পাশাপাশি উৎপাদন কমে যাওয়ার কারণে ভারতের প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রগুলোয় জিরার মজুদ অনেক কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে বলে এক প্রতিবেদনে জানায় কেডিয়া কমোডিটি।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্যাপক চাহিদার বিপরীতে সীমিত সরবরাহ মসলা পণ্যটির বাজারদরকে আকাশচুম্বী করে তুলেছে। যদিও ব্যবসায়ীরা এটি থেকে যথেষ্ট মুনাফা তুলে আনতে পারছেন। গত এপ্রিলে বাজারে নতুন করে সাড়ে পাঁচ থেকে ছয় কোটি ব্যাগ জিরা ঢুকেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে চলতি মাসে তা পাঁচ কোটি ব্যাগে নেমে আসতে পারে।
ভারতে জিরার সবচেয়ে বড় বাজার গুজরাটের উনঝায় অবস্থিত। এ বাজারে এক মাস আগেও প্রতিদিন জিরা এসেছে ৩০-৩৫ হাজার ব্যাগ। কিন্তু বর্তমানে তা কমে সাত থেকে আট হাজার ব্যাগে নেমেছে। রাজস্থানের বাজারগুলোয়ও প্রতিদিন সাত থেকে আট হাজার ব্যাগ জিরা আসছে।
রাজস্থানের বাজারে এরই মধ্যে ৬০-৬৫ শতাংশ জিরা চলে এসেছে। গুজরাটে এসেছে ৬৫-৭০ শতাংশ। প্রাক্কলিত পাঁচ কোটি ব্যাগের মধ্যে এরই মধ্যে বাজারে ঢুকেছে ২ কোটি ৮০ লাখ থেকে তিন কোটি টন।
প্রতি বছর আগের মৌসুম শুরু হয়ে স্থানীয় বাজারে জিরার চাহিদা কমে যায়। সে হিসেবে বর্তমানে দেশটিতে মসলাটির চাহিদা কম।
তবে আন্তর্জাতিক বাজারে ব্যাপক চাহিদা থাকার পরও উনঝাসহ পুরো দেশের বাজারে পর্যাপ্ত জিরা আসছে না, যা দামে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতারই ইংগিত দিচ্ছে।
বাজারে পাঁচ থেকে সাত লাখ টনের বেশি জিরার মজুদ নেই। এক গবেষণা প্রতিবেদনে জানা গেছে, ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে জিরার রফতানি চাহিদা আগামী দিনগুলোয়ও ঊর্ধ্বমুখী থাকবে। পাশাপাশি বাড়তি থাকবে দামও।
জিরা উৎপাদন ও রফতানিতে অন্য দুই শীর্ষ দেশ সিরিয়া ও আফগানিস্তান। দেশ দুটিতে নতুন মৌসুমের জিরা বাজারে উঠবে ১৫-২০ জুনের মধ্যে। এর মধ্যে আফগানিস্তানে গত বছরের তুলনায় এবার উৎপাদন ব্যাপক বাড়বে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।
সিরিয়ার ব্যবসায়ীদের প্রত্যাশা, এ মৌসুমে ২০-৩০ হাজার টন জিরা উৎপাদন হতে পারে, যা গত ১০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি। মসলাটির উৎপাদনের জন্য আগামী মাসে আবহাওয়া অনুকূলে থাকবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। প্রাক্কলিত হিসাব অনুযায়ী, দেশটিতে উৎপাদন বাড়লে দামের ওপর থেকে ঊর্ধ্বমুখী চাপ কমে আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন বিশ্লেষকরা।
এনজে