আসছে রমজানকে সামনে রেখে বেড়েই চলেছে নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে দাম বেড়েছে ব্রয়লার মুরগি, ছোলা, চিনি, ডিম, কাঁচা মরিচ ও রসুনের দাম। এছাড়া বেড়েছে সবজির দাম। তবে পেঁয়াজের দাম সামান্য কমেছে। মাছ-মাংসসহ অন্যান্য পণ্যের দামে তেমন কোন পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায়নি।
আজ রাজধানীর মতিঝিল এজিবি কলোনী, নিউমার্কেট, আজিমপুর, বাসাবো, মালিবাগ, শান্তিনগরসহ কয়েকটি বাজারে গিয়ে এবং খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এমন চিত্রই দেখা যায়।
আজ বাজারে ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহেও যা পাওয়া গিয়েছে ১৬০ থেকে ১৭০ টাকা কেজি দরে। এক মাস আগে এটির দাম ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা প্রতি কেজি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সামনে রমজানকে সামনে রেখে মুরগির চাহিদা বেড়েছে। ফলে দাম বেড়েছে স্বাভাবিকভাবেই। তবে দেশি মুরগি আগের মতোই ৩৫০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ডিমের দাম আবারো বেড়েছে। খামারের লাল ডিম হালিতে ২ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ৩২ থেকে ৩৬ টাকা দরে। এক সপ্তাহ আগেও যা বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৪ টাকা হালি দরে। এছাড়া দেশি মুরগির ডিম ৪০ থেকে ৪৪ টাকা এবং হাঁসের ডিমের দাম নেয়া হচ্ছে প্রতি হালি ৩৪ থেকে ৩৮ টাকা। আগের চড়া দামেই অর্থাৎ ৪২০ থেকে ৪৪০ টাকা কেজি দওে গরুর মাংস এবং ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি দরে খাসীর মাংস বিক্রি হতে দেখা যায়।
অন্য যেকোন বছরের তুলনায় এবার ছোলার দামে দামে উত্তাপ বেশি। এবারই প্রথম এটির দাম ১০০ টাকা অতিক্রম করেছে। গত মঙ্গলবার রমজানের আগে সার্বিক বাজার পরিস্থিতি নিয়ে বৈঠক হয় বাণিজ্যমন্ত্রণালয়ে। সেই বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে ছোলার দাম কিছুটা বাড়তি। তবে দেশে চাহিদার চেয়ে মজুদ বেশি রয়েছে। বাণিজ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যেও একদিন পরেই ছোলার দাম ৯০ টাকা থেকে লাফ দিয়ে ১০০ টাকা ছুঁয়েছে। একইভাবে বৈঠকের পরদিন বুধবার দাম বাড়ে চিনি। এক সপ্তাহ আগেও যে চিনির দাম ছিল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা। এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৫৮ থেকে ৬২ টাকা কেজি দরে।
এ সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম সামান্য কমেছে। যদিও রসুনের বাজার আগের মতোই চড়া রয়েছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৪০ থেকে ৪৪ টাকা কেজি দরে। এক সপ্তাহ আগে এটি বিক্রি হয়েছে ৪২ থেকে ৪৮ টাকা কেজি দরে। এক কেজি আমদানিকৃত পেঁয়াজের দাম নেয়া হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকা। আমদানিকৃত রসুন আগের মতোই ২০০ থেকে ২৩০ টাকা প্রতি কেজি এবং দেশি রসুন ১০০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। চীনা আদার দাম নেয়া হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা এবং দেশিটা বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৯০ টাকা কেজি দরে।
সবজির বাজার ঘুরে দেখা যায় পেঁপে, গাজরসহ কয়েক প্রকারের সবজির দাম চড়া। এছাড়া অধিকাংশ সবজির দাম ৪০ টাকার ঘরে অবস্থান করছে। বাজারে প্রতি কেজি বেগুন ৩৫ থেকে ৪০, ঢেঁড়স ৩০ থেকে ৩৫, চিচিঙ্গা ৩৫ থেকে ৪০ ও করলা ৪০ থেকে ৪৫ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। এছাড়া পটোল ৩৫ থেকে ৪০, বরবটি ৩০ থেকে ৪০, ঝিঙ্গা ৪০ থেকে ৪৫, পেঁপে ৫৫ থেকে ৬০, শসা ৪০ থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি হয়। বৈরি আবহাওয়ার জন্য কাঁচা মরিচের দাম বাড়তি বলে জানালেন ব্যবসায়ীরা। বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকা।
এ সপ্তাহে মাছের বাজারে তেমন কোন পরিবর্তন নেই বলে জানান ব্যবসায়ীরা। প্রতি কেজি দেশি রুই মাছ আকারভেদে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আমদানিকৃত রুই ১৮০ থেকে ২৮০, বড় কাতলা ৩০০ থেকে ৪০০, তেলাপিয়া ১৪০ থেকে ১৮০, চিংড়ি আকারভেদে ৩৫০ থেকে ৭০০, চাষের কৈ ২০০ থেকে ২৫০, পাঙ্গাশ ১৩০ থেকে ১৫০, সিলভার কার্প আকারভেদে ১২০ থেকে ১৮০, মাগুর ৭০০ থেকে ৮০০, আইড় ৩০০ থেকে ৬৫০, বোয়াল ৩০০ থেকে ৫০০, পাবদা ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। মাঝারি মাপের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১০০০ থেকে ১৫০০ টাকা কেজি দরে।
চালের বাজারে নতুন আসা স্বর্ণাসহ সব ধরনের মোটা চাল বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকা কেজি দরে। এছাড়া চিকন চালের মধ্যে মিনিকেট ৪০ থেকে ৪৫, নাজিরশাইল ৪৬ থেকে ৫৪ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি খোলা আটা ২৫ থেকে ২৮, প্যাকেট ৩২ থেকে ৩৪, খোলা ময়দা ৩৪ থেকে ৩৬, প্যাকেট ৪০ থেকে ৪২ টাকা কেজি দরে বিক্রি হতে দেখা যায়। এছাড়া আগের মতোই পাঁচ লিটার সয়াবিন তেল ৪৩৫ থেকে ৪৫৫ টাকায় এবং এক লিটারের বোতল বিক্রি করা হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকায়। খোলা পামঅয়েল বিক্রি হচ্ছে ৬৪-৬৬ টাকায় এবং পামঅয়েল সুপার বিক্রি হচ্ছে ৬৭ থেকে ৬৯ টাকা লিটার দরে।
সানবিডি/ঢাকা/আহো