কামরাঙ্গীরচরের ভূগর্ভস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়া উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা। শুক্রবার নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটি, স্বপ্নের সিড়ি এবং প্রদেশ এর উদ্যোগে এক মতবিনিময় সভায় বক্তারা এ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। কামরাঙ্গীরচর হুজুরপাড়ায় কামরাঙ্গীরচর মডেল কিন্ডারগার্টেন এন্ড হাইস্কুলের অডিটরিয়ামে কামরাঙ্গীরচরের ভূগর্বস্থ পানির স্তর নীচে নেমে যাওয়া এবং সুপেয় পানি সরবরাহ অপ্রতুলতা শীর্ষক এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
কামরাঙ্গীর চরের উন্নয়ন কর্মকান্ড শুরু হয়েছে তবে অনেক প্রতিষ্ঠান এখনো কাজ শুরু করে নাই, যার ফলে একাধিক প্রতিষ্ঠান একাধিকবার রাস্তা খুড়াখুড়িসহ নাগরিকের বিরম্বনার কারণ হয়ে দাড়াতে পারে বলে আশংকা করছেন নগরবাসী। উক্ত অনুষ্ঠানে কামরাঙ্গীর চরের সুশিল সমাজের গন্যমান্য ব্যক্তিবর্গ, সামাজিক সংগঠন এবং স্থানীয় জনগনের অংশগ্রহণে মতামত প্রতিফলিত করার একটি পদক্ষেপ নেয়া হয়।
কামরাঙ্গিরচর মডেল কিন্ডারগার্টেন স্কুল এর প্রধান মোঃ আব্দুস সালামের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি ছিলেন নিরাপদ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ইবনুল সাঈদ রানা, বিশেষ অতিথি ছিলেন এনডিএফ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট এড: সুলতান মাহমুদ বান্না, গ্রীন মাইন্ড সোসাইটির নির্বাহী আমির হাসান, স্বপ্নের সিড়ির সভাপতি ইসরাত জাহান লতা, নির্বাহী উম্মে সালমা এবং প্রদেশ এর নির্বাহী ইউসুফ আলীর সঞ্চালনায় বক্তব্য রাখেন, হিউম্যান রাইটস এর ঢাকা জেলা চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল মামুন, সাংবাদিক ইলিয়াস আহমেদ বাবুল , কাউন্সিলর নিলুফা ইয়াসমিন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
বক্তারা বলেন সুপেয় পানি সরবরাহ যেমন কর্তৃপক্ষের দায়িত্ব, তেমনি নাগরিকের অধিকার সুপেয় পানি প্রাপ্তী। রাজধানীর দক্ষিন সিটি করপোরেশন এলাকার ৫৫, ৫৬, ৫৭ নং ওয়ার্ড সিটি করপোরেশন এর আওতায় অন্তর্ভুক্ত হলেও এই এলাকার নাগরিকের জন্য করপোরেশন থেকে তাদের ন্যায্য অধিকার পানি ও পয়ঃনিশ্কাষন ব্যবস্থাপনায় এখন পর্যন্ত দৃশ্যমান কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় নাই। নাগরিক সুবিধা পাওয়া এবং নাগরিকের চাহিদা প্রাপ্তীতে অধিকার সম্পর্কে এখন এলাকার মানুষ অনেক সচেতন হয়েছে। সুপেয় পানি প্রাপ্তি তাদের দাবি ন্যায্য। অথচ ঢাকা ওয়াসা তার দায়িত্ব পালনে দৃশ্যত কোন পদক্ষেপ গ্রহন করে নাই। কর্তপক্ষ এখনো পয়নিস্কাশন, খাবার পানি সরবরাহ বিষয়ে উদাসিন। রাজধানীর প্রতিটি এলাকায় সুপেয় খাবার পানির অপ্রতুলতা চলছে। ওয়াসা তিন বছর আগে ভূগর্বস্ত পানি উত্তোলন কমিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিলেও তারা প্রায় সব এলাকাতেই তাদের পানি উত্তোলন এর জন্য ডিপ টিউবঅয়েল গুলোকে নতুন করে আরো গভীরে বসাচ্ছে। প্রতি বছর ঢাকার ভূগর্বস্থ পানির স্তর ২ থেকে ৩ মিটার নীচে নামছে। এটা জেনেও ওয়াসা তাদের পানি উত্তোলন বন্ধে কোন পদক্ষেপ নিচ্ছে না। পানির স্তর নীচে নামার কারণ হলো ঢাকা শহরে প্রতি বছর ফাঁকা জায়গা পাকা করা হচ্ছে নানা ধরনের অট্ট্রালিকা বানানোর জন্য। ফসলী জমি, মাঠ পার্ক, পুকুর, জলাশয়, খাল, বিল, নদী এবং উম্মোক্ত স্থান দখল করে নানা ধরনের অট্ট্রালিকা গড়ে তোলা হচ্ছে। ফলে বৃষ্টির পানি কোন ভাবেই ভূমির নীচে প্রবেশ করতে পারছে না।
ঢাকা শহরের আশপাশের নদী এবং ঢাকার ৪৩ টি খাল দখল মুক্ত করতে হবে পানির আধার রক্ষা করতে হবে। ভূগর্বস্থ পানি উত্তোলন কমাতে হবে, প্রাকৃতিক বৃষ্টির পানি এবং নদীর পানি ব্যবহার বাড়াতে হবে। কামরাঙ্গির চর এলাকায় অতিসত্বর পানি সরবরাহ না হলে পানির জন্য হা হা কার তৈরী হবে, ক্রমেই লোক সংখ্যা বাড়ছে। প্রতিটি বাড়ীতে ডিপ টিউবঅয়েল বসিয়ে পানি তোলছে, ছোট ছোট কলকারখানা বসানো হচ্ছে, পানির ব্যবহার বাড়ছে প্রতিদিন। কাজেই সমস্যা সমাধানে সরকারকে উদ্যোগী হতে হবে। আমাদের সামাজিক সংগঠনগুলোর ঐক্যবন্ধ আহবান নাগরিকের পানি সমস্যায় সমাধান আনয়ন সম্ভব, কর্তৃপক্ষের টনক নড়াতে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন।
সভায় সুনির্দিষ্ট কয়েকটি দাবী উত্থাপিত হয়-
১। কামরাঙ্গীরচর এলাকাকে আবাসিক এবং আধূনিক নগর পরিকল্পনায় আনা হউক।
২। কামরাঙ্গীরচর এলাকার সোয়ারেজ লাইনগুলো কোন ভাবেই নদীতে পড়তে দেয়া যাবে না। বিকল্প ব্যবস্থা করা হউক।
৩। অভিলম্বে ওয়াসা কর্তক পানি সরবরাহ করা হউক।
৪। কামরাঙ্গীরচর এলাকার বর্জ্য ব্যস্থাপনায় সঠিক উদ্যোগ নেয়া হউক।
৫। পর্যাপ্ত খেলার মাঠ, পার্ক, চিকিৎসাকেন্দ্র উন্নয়নসহ রাস্তার পাশে পদচারীর হাটার জয়গা রেখে সবুজায়ন এবং ড্রেনেজ ব্যবস্থা নতুর শহর পরিকল্পনায় আনা হউক।
৬। কামরাঙ্গীরচর এলাকার নদীর তীরে হাটা এবং বসার ব্যবস্থা করা হউক।
৭। নদীর পানি পরিস্কার, দখল মুক্ত, দূষন মুক্ত রাখায় কামরাঙ্গীর চর এলাকার মানুষ আদর্শ রোলমডেল হিসাবে উপস্থাপিত হউক।