শবেবরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি কোনোটাই কাম্য নয়

প্রকাশ: ২০১৬-০৫-২২ ১৩:২৭:২২


shobe-boratআরবি শাবান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে শবেবরাত সমধিক পরিচিত। বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের মুসলমানরা এটি পালন করেন। এই রাতকে লাইলাতুল বরাতও বলা হয়। মধ্য শাবানের এ রজনী নিয়ে বাংলাদেশসহ ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ্য করা যায়।

মধ্য শাবানের এ রাতে আল্লাহতায়ালা তার সৃষ্টিলোকের দিকে দৃষ্টি দান করেন এবং সবাইকে মাফ করে দেন কেবল মুশরিক ব্যক্তি ছাড়া ও যার মধ্যে ঘৃণাবিদ্বেষ রয়েছে তাকে ছাড়া।

তবে অনেকেই শবেবরাত পালনকে নানাভাবে নিরুৎসাহিত করে থাকেন। উল্টো শবেবরাত পালনকে গোনাহের কাজ বলতেও কসুর করেন না। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ মানুষের মাঝে এক ধরনের দ্বিধা রয়েছে। এমতাবস্থায় আমাদের কথা হলো, শবেবরাত নিয়ে বাড়াবাড়ি বা ছাড়াছাড়ি কোনোটাই কাম্য নয়। যেহেতু ইসলাম মধ্যবর্তী ধর্ম, তাই আমরাও শবেবরাত নিয়ে মধ্যপন্থা অবলম্বনের আহবান জানাই।

হ্যাঁ, আমাদের সমাজে শবেবরাত সম্পর্কে কিছু ভ্রান্ত বিশ্বাস ও আমল রয়েছে যা থেকে বিরত থাকা কল্যাণকর। এর মধ্যে রয়েছে, রাতে গোসল করাকে সওয়াবের কাজ মনে করা। মৃতব্যক্তিদের রূহ এ রাতে দুনিয়ায় তাদের সাবেক ঘরে আসে বলে মনে করা। এ রাতে হালুয়া-রুটি তৈরি করে নিজেরা খাওয়া ও অন্যকে দেয়া জরুরি মনে করা। বাড়ি বাড়ি এমনকি মসজিদে মসজিদেও মিলাদ পড়ার রেওয়াজ বানানো। আতশবাজি করা, সরকারি-বেসরকারি ভবনে আলোকসজ্জা করা। কবরস্থানগুলো আগরবাতি ও মোমবাতি দিয়ে সজ্জিত করা। দলে দলে কবরস্থানে যাওয়া ইত্যাদি।

শবেবরাতের আমলগুলো ব্যক্তিগত, সম্মিলিত নয়। ফরজ নামাজ তো অবশ্যই মসজিদে আদায় করতে হবে। এরপর যা কিছু নফল তা নিজ নিজ ঘরে একাকী পড়বে। এসব নফল আমলের জন্য দলে দলে মসজিদে এসে সমবেত হওয়ার কোনো প্রমাণ হাদিসে নেই। আর সাহাবায়ে কেরামের যুগেও এর কোনো প্রচলন ছিল না।

হাদিসে বলা হয়েছে, আল্লাহতায়ালা এ রাতে দুনিয়ার আকাশে আসেন। এভাবে তিনি যদি তার বান্দাদের ক্ষমা করেন, যদি অসংখ্য পাপীতাপী লোক আল্লাহর কৃপা লাভ করেন, যদি তারা গ্লানি নিঃশেষে মুক্তচিত্তে পুণ্যপথে অগ্রসর হন- তবে কোন যুক্তিতে তাতে বাঁধা আসবে?

যেসব সাধারণ মানুষ এতকাল ধরে শবেবরাত পালন করে আসছে তাদের সামনে শবেবরাতের গুরুত্ব খাটো করে ব্যাখ্যা হাজির করা যাবে বটে; কিন্তু এতে দ্বীনের কোনো উপকার হবে না। শুধু এই একটি রাতে কত শত-সহস্র লোক আল্লাহর দিকে রুজু হয়ে ইবাদত-বন্দেগি করে, আল্লাহর নাম নেয়, নামাজ পড়ে, জিকির-আজকার করে, দান-খয়রাত করে। এই সুবাদে তাদের ছেলেমেয়েরাও ইবাদতের গুরুত্ব অনুভব করে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করে। এ রাতে মানুষ গান-বাজনা থেকে শুরু করে নানাবিধ পাপের কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখে- এ প্রাপ্তিটাই বা কম কিসে?

আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত কখন কোন বান্দার প্রতি খাস রহমতের দ্বার খুলে কবুল করে নেন, সেটা আমরা কী করে বলি? ওইসব লোক তো হাদিস শরিফে বর্ণিত অশেষ ফজিলতের প্রতি বিশ্বাস করেই এ রাতে কিছু হলেও ইবাদত করার চেষ্টা করে- এটাকে নিরুৎসাহিত করে লাভ কী?

শবেবরাতের ব্যাপারে দেশের শীর্ষ উলামা মাশায়েখ ও শতাধিক মুফতি বলেছেন-
১. শবেবরাত উপলক্ষে প্রচলিত সব বিদয়াত ঘৃণিত অপরাধ। এ রাতে কোনো বিদয়াতে নিজেকে জড়ানো যাবে না।

২. এ রাতকে কেন্দ্র করে যাবতীয় নফল ইবাদতকে ফরজ হিসেবে চিন্তা করার কোনো সুযোগ নেই।

৩. যারা দ্বীনি মহব্বতে নফল ইবাদতে মশগুল হন ও মসজিদপানে ছুটে চলেন, তাদেরকে থামিয়ে দেয়া সমীচীন নয়।

৪. মসজিদ বা বিভিন্ন মাহফিলে এ রাত উপলক্ষে যারা সমবেত হন সেসব আল্লাহর বান্দাদের নিরুৎসাহিত না করে কোরআন-সুন্নাহর মানদণ্ডে দ্বীনের আসল চেতনা ও দৃষ্টিভঙ্গিসমেত তাদের সামনে দ্বীনি আলোচনা করা। এটা দাওয়াতের অবিচ্ছেদ্য অংশও বটে।

হাদিসে আরও বলা হয়েছে এ রাতে কাদের আমল কবুল হয় আর কাদের আমল কবুল হয় না। প্রত্যেক মুসলমানের এ বিষয়টির প্রতি খেয়াল রাখতে হবে। বিভিন্ন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত যেসব লোকের আমল কবুল হয় না তাদের মধ্যে রয়েছেন-

এক. মুশরিক, অর্থাৎ যে ব্যক্তি আল্লাহর সঙ্গে যেকোনো ধরনের শিরকে লিপ্ত হয়।
দুই. যে ব্যক্তি কারো প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে।
তিন. আত্মহত্যাকারী ও ইচ্ছা পোষণকারী।
চার. যে ব্যক্তি অপরের ভালো দেখতে পারে না অর্থাৎ পরশ্রীকাতরতায় লিপ্ত।
পাঁচ. যে ব্যক্তি আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করে, চাই তা নিকটতম আত্মীয় হোক বা দূরবর্তী আত্মীয় হোক।
ছয়. যে ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত হয়।
সাত. যে ব্যক্তি মদপানকারী অর্থাৎ নেশাকারী।
আট. যে ব্যক্তি গণকগিরি করে বা গণকের কাছে গমন করে।
নয়. যে ব্যক্তি জুয়া খেলে।
দশ. যে ব্যক্তি মাতাপিতার অবাধ্য হয়।
এগারো. টাখনুর নিচে কাপড় পরিধানকারী পুরুষ। সূত্র। বাংলা নিউজ

সানবিডি/ঢাকা/এসএস