সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে চলতি অর্থ বছরের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ৩৯ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। গত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৩৬ হাজার ৬৪৮ কোটি টাকা। তবে সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ কমে দাঁড়ায় ৩৫ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। সেই হিসাবে গত অর্থ বছরের তুলনায় বাজেটে এই খাতে বরাদ্দ বাড়ল চার হাজার ৪৬২ কোটি টাকা।
বৃহস্পতিবার (১ জুন) একাদশ জাতীয় সংসদের ২৩তম অধিবেশনে দেশের ৫২তম বাজেট পেশ করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল।
২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে তিনি সাত লাখ ৬১ হাজার কোটি টাকার বাজেট ঘোষণা করেন। তাঁর বাজেট বক্তৃতায় সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের বরাদ্দের তথ্য উঠে আসে।
এ ছাড়া একই মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সেতু বিভাগ আলাদা বরাদ্দ পেয়েছে।
বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, সেতুর জন্য চলতি অর্থ বছরে ৯ হাজার ৭৩ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। গত ২০২২-২০২৩ অর্থ বছরে বরাদ্দ ছিল ৯ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা। যদিও সংশোধিত বাজেটে বরাদ্দ ছিল সাত হাজার ৭২ কোটি টাকা। সেই হিসাবে, সেতুতে বরাদ্দ বাড়ছে দুই হাজার এক কোটি টাকা।
বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, যোগাযোগ খাতে আমরা সব মাধ্যম অর্থাৎ সড়ক, সেতু, রেল, নৌ ও আকাশপথের সমন্বিত উন্নয়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছি। আমাদের উদ্দেশ্য হলো- অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নিরাপদ, টেকসই, পরিবেশবান্ধব ও সাশ্রয়ী যোগযোগ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। বিশেষ করে, বর্তমানে চলমান কার্যক্রমগুলোর সময়ানুগ বাস্তবায়ন ও বাস্তবায়নোত্তর মান সংরক্ষণের ওপর আমরা বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছি।
আ হ ম মুস্তফা কামাল বলেন, ২০০৯ সালে আমরা ক্ষমতায় আসার পর থেকে সড়ক সেতু কালভার্ট ইত্যাদি নির্মাণ করার ফলে সারাদেশে ২২ হাজার ৪৭৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মহাসড়ক তৈরি হয়েছে। এতে নির্বিঘ্ন পণ্য ও যাত্রী পরিবহণ নিশ্চিত হয়েছে।
এ ছাড়া দেশজুড়ে প্রায় ৭১৮ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়ক চারলেনে উন্নীত করা হয়েছে। বিভিন্ন মহাসড়কে এক হাজার ৫৫৮টি সেতু ও সাত হাজার ৪৯৮টি কালভার্ট নির্মাণ ও পুনর্নির্মাণ করা হয়েছে। দেশের সড়ক নেটওয়ার্কে যুক্ত হয়েছে ১৫টি রেলওয়ে ওভারপাস ও ১৮টি ফ্লাইওভার।
তিনি বলেন, যাত্রাবাড়ী ইন্টারসেকশন থেকে মাওয়া হয়ে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মহাসড়ক নির্মাণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা এক্সপ্রেসওয়ের যুগে প্রবেশ করেছে। সামনের দিনগুলোতে সারা দেশে দুই হাজার ৩৪২ কিলোমিটার জাতীয় মহাসড়কের দুই পাশে সার্ভিস লেনসহ চারলেনে উন্নীত করার প্রক্রিয়া শুরু করেছি।
সড়ক ও মহাসড়ক প্রসঙ্গে অর্থমন্ত্রী আরো বলেন, বর্তমান সরকারের মেয়াদকালে বাস্তবায়িত দেশের আট বিভাগের ২৫ জেলায় মোট ১০০টি সেতু উদ্বোধন করা হয়েছে, যার মোট দৈর্ঘ্য পাঁচ হাজার ৪৯৪ মিটার। আমরা নিজস্ব অর্থায়নে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু নির্মাণ করে বিশ্বের দরবারে নিজেদের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছি।
কর্ণফুলী নদীর তলদেশে সড়ক টানেল নির্মাণ কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। শীঘ্রই এটিকে যানচলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে। এ ছাড়া, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালি পর্যন্ত র্যাম্পসহ ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নির্মাণ আগামী বছরের জুনের মধ্যে শেষ হবে বলে আশা করছি। যদিও আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে প্রকল্পের হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তেজগাঁও পর্যন্ত অংশ চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে।
যানজট নিরসন ও নিরাপদ সড়ক বিষয়ে বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরী ও আশপাশের এলাকা যানজট নিরসন ও দ্রুত যোগাযোগ নিশ্চিত করতে ৬টি মেট্রো রেল লাইনের একটি নেটওয়ার্ক গড়ে তোলা হচ্ছে। বাংলাদেশের প্রথম মেট্রো রেলের উত্তরা উত্তর থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত অংশ গত ২৮ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শুভ উদ্বোধন করেন। ২০২৫ সালের মধ্যে মেট্রো রেল কমলাপুর পর্যন্ত সম্প্রসারিত হবে।
এ ছাড়া ২০২৬ সালের মধ্যে কমলাপুর থেকে বিমানবন্দর পর্যন্ত ১৯ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার পাতাল এবং নতুন বাজার থেকে পিতলগঞ্জ ডিপো পর্যন্ত ১১ দশমিক ৩৭ কিলোমিটার উড়ালসহ মোট ৩১ দশমিক ২৪ কিলোমিটার দীর্ঘ ও ২১টি স্টেশন বিশিষ্ট মেট্রো রেলের আরেকটি লাইন নির্মাণের লক্ষ্যমাত্রা স্থির রাখা হয়েছে।
এম জি