সিলেটে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের সংঘর্ষ, গোলাগুলিতে আহত ১০

প্রকাশ: ২০১৫-১০-১৯ ১০:২৩:৫২


Sylhet

সিলেট নগরীর টিলাগড়ে ছাত্রলীগের দু’পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরীসহ অন্তত ১০ জন আহত হয়েছেন। ঘটনায় দুজনকে আটক করেছে পুলিশ।

রোববার রাত ৯টা থেকে সোয়া ১১টা পর্যন্ত হামলা পাল্টা হামলার এক পর্যায়ে গুলিবিনিময়ের ঘটনাও ঘটেছে।

এদিকে, সংঘর্ষ চলাকালে যুবলীগ নেতার দোকানসহ অন্তত ৮টি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুট করেছে ছাত্রলীগ ক্যাডাররা। ভাঙচুর ও লুট হওয়া ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে সিলেট মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সুবেদুর রহমান মুন্নার মালিকানাধীন ফুড গ্যালারি; হোটেল আজমির, রুমি-নোমান রেস্টুরেন্ট। বাকি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম জানা যায়নি।

সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণাকে কেন্দ্র করে রাতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এম. রায়হান চৌধুরী ও যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম অনুসারি নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ভাঙচুর ও লুটের ঘটনাও ঘটে।

প্রত্যক্ষদর্শী ও ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ছাত্রলীগের ঘোষিত কমিটিকে কেন্দ্র করে এই সংঘর্ষের সূত্রপাত। পদবঞ্চিতদের পক্ষের সিলেট জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক কামরুল ইসলাম অনুসারি শতাধিক ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা টিলাগড় পয়েন্টে জড়ো হয়ে রাত ৯টার দিকে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদকের উপর হামলা চালায়। এসময় আজমির রেস্তোরা নামে একটি খাদ্যের দোকানে ব্যাপক ভাঙচুর চালায় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এসময় ক্যাশ লুটেরও অভিযোগ পাওয়া গেছে।

এর কিছুক্ষণের মধ্যে রায়হান চৌধুরীর অনুসারিরা জড়ো হয়ে পাল্টা হামলা চালায়। এসময় আরেকটি রেস্তোরায় হামলা চলায়। ধারালো অস্ত্র ব্যবহার ছাড়াও উভয় পক্ষের গুলি বিনিময় হয় বলে জানিয়েছেন স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।

ঘটনার এক পর্যায়ে রাত ১১টার দিকে এসএমপির উপ-কমিশনার বাসু দেব, অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) জেদান আল মুসা অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে টিলাগড়ে যান। ছাত্রলীগ নেতাদের একদিকে তাড়া করতে গেলে অন্যদিক থেকে একদল নেতাকর্মী এমসি কলেজের সামনের ফুড গ্যালারি লুট করে টিলাগড় পয়েন্ট এলাকায় ব্যাপক ভাংচুর চালায়। পরে উভয় দিক থেকে পুলিশ ধাওয়া করলে তারা ছত্রভঙ্গ হয়ে পালিয়ে যায়।

আশপাশ এলাকায় অভিযান চালিয়ে পুলিশ দুইজনকে আটক করতে সক্ষম হয়। তবে সোহেল আহমদ নামের একজন সিএনজি অটোরিকশা চালককে বাসার পাশ থেকে আটক করে নেওয়া হয়েছে দাবি করেছেন তার মা।

ফুড গ্যালারি’র মালিক আমিনুল ইসলাম সুহেল বাংলামেইলকে জানিয়েছেন, তিনি রাত সাড়ে ৮টায় দোকান বন্ধ করে বাসায় চলে যান। রাত সোয়া ১১টায় তার দোকানের তালা ভেঙ্গে ভেতরের ‘ক্যাশে’ থাকা ৭৫ হাজার টাকা লুট, ৫টি রেফ্রিজারেটর ও দোকানের অন্যান্য আসবাবপত্র ভাঙচুর করা হয়েছে। দোকানের চারটি সাঁটারে দায়ের কোপ রয়েছে। তার অন্তত ৫ লাখ টাকার টাকার ক্ষতি হয়েছে। তিনি এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

ছাত্রলীগ সূত্রে জানা গেছে, শনিবার নির্মলেন্দু পালকে সভাপতি ও মাহিন নুর ইসলামকে সাধারণ সম্পাদক করে ১ বছরের জন্য সিলেট ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি অনুমোদন করেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি শাহরিয়ার আলম সামাদ ও সাধারণ সম্পাদক এম রায়হান চৌধুরী।

এ কমিটি ঘোষণার পর থেকে পদবঞ্চিত নেতাকর্মীদের মধ্যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে। পদবঞ্চিতদের সঙ্গে যোগ দেয় টিলাগড় কেন্দ্রীক ছাত্রলীগের কামরুল অনুসারিরা। এই কমিটি গঠনের জের ধরেই রোববার রাতে টিলাগড় পয়েন্টে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরী গ্রুপের উপর হামলা চালায় প্রতিপক্ষরা।

ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানিয়েছেন, জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রায়হান চৌধুরী আওয়ামী লীগ নেতা আজাদুর রহমান আজাদ অনুসারী ও কামরুল ইসলাম আওয়ামী লীগ নেতা রনজিত সরকার অনুসারী।

এ ব্যাপারে ঘটনাস্থলে উপস্থিত মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক মুশফিক জায়গীরদারের জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কিছু বলতে রাজি হননি। তিনি বলেছেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা মারামারি করেছে। আমরা থামানোর চেষ্টা করেছি।

মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার জেদান আল মুসা বাংলামেইলকে জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের মধ্যে মারামারির খবরে শাহপরাণ থানার ওসিসহ তিনি অতিরিক্ত পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। পরিস্থিতি শান্ত করতে লাঠিচার্জ ও ১ রাউন্ড শর্টগানের গুলি ছোঁড়া হয়। ঘটনাস্থল থেকে ২ জনকে আটক করা হয়েছে। বর্তমানে টিলাগড়ের পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে।