জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম ছিলেন দেশে দেশে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে অনমনীয় প্রতিবাদী। তিনিই উপমহাদেশের স্বাধীনতার প্রথম বলিষ্ঠ কণ্ঠস্বর। তাঁর সৃষ্টিকর্ম আমাদেরকে চিরদিন দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত করবে।
মঙ্গলবার (২৪ মে) দুপুরে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে গণমাধ্যমে দেয়া এক বাণীতে বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া এসব কথা বলেন।
বাণীতে তিনি বলেন, জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা সাহিত্যের এক অবিসংবাদিত প্রাণপুরুষ। শত জুলুম, অন্যায়-অত্যাচার ও অবিচারের বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লেখনি দিয়ে তিনি বাংলা সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন। নিজেও অত্যাচার সয়েছেন ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর। পারিবারিক সীমাহীন দুঃখ-কষ্টের মধ্যে থেকেও নির্বাক হওয়ার আগ পর্যন্ত সাহিত্যচর্চায় নিজেকে নিয়োজিত রেখেছিলেন। তিনি ছিলেন বিস্ময়কর বহুমুখি প্রতিভার অধিকারী। তাঁর ক্ষুরধার লেখনির মধ্যে অন্যায় ও অবিচারের বিরুদ্ধে বিপ্লবের মন্ত্রণা সুষ্পষ্ট।
নজরুল ইসলামকে ‘যুগান্তরের কবি’ আখ্যা দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, তাঁর সাহিত্যে উচ্ছ্বাস ও স্বতোস্ফূর্ততা এক অনন্য সৌন্দর্যময়তায় বিশিষ্ট শিল্পরুপ ধারণ করেছে। তিনি যুগান্তরের কবি। তিনি বাংলা সাহিত্যে নবযুগের সূচনা করেন। অন্তর্গত সুন্দরের প্রেরণাতেই তিনি অসুন্দরের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করেছেন।
বিএনপির চেয়ারপারসন বলেন, দেশের স্বাধীনতা ও মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ঔপনিবেশিক শাসকগোষ্ঠীর অন্যায়ের বিরুদ্ধে কলমকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে কারাগারে নির্যাতন সহ্য করতেও দ্বিধা করেননি নজরুল। তিনি দেশে দেশে স্বৈরাচারী শাসনের বিরুদ্ধে ছিলেন অনমনীয় প্রতিবাদী। তাঁর কবিতা ও গানে মানবতা ও সাম্যের বাণী উচ্চারিত হয়েছে। তিনি ছিলেন একাধারে শ্রমিক, সৈনিক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, গীতিকার, সুরকার ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী নির্ভীক কণ্ঠস্বর এবং একজন প্রকৃত দেশপ্রেমিক যোদ্ধা।
বেগম জিয়া তার বাণীতে আরো বলেন, কাজী নজরুলের কবিতা ও গান আমাদের মুক্তি সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছিল। এ ছাড়াও তাঁর প্রকৃতি, মানবপ্রেম ও ভক্তিমূলক গান অনন্য বৈচিত্র্যময় সুর ও বাণীর সংমিশ্রণে এক অনবদ্য স্বপ্নীল পরিবেশ সৃষ্টি করে, যে গানের আবেদন চিরকালীন ও চিরস্থায়ী। তাঁর সৃষ্টিকর্ম আমাদেরকে চিরদিন দেশপ্রেমে অনুপ্রাণিত করবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।
বাণীতে বিএনপি প্রধান কাজী নজরুল ইসলামের রুহের মাগফিরাত কামনা করে তাঁর স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান। জাতীয় কবির জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকল কর্মসূচির সর্বাত্মক সাফল্য কামনা করেন বেগম জিয়া।
এদিকে, মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর নয়াপল্টনের যাদু মিয়া মিলনায়তনে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ন্যাপ চেয়ারম্যান জেবেল রহমান গাণি বলেন, ‘কাজী নজরুল ইসলামের সাহিত্যের বজ্রবিদ্যুৎ উড়ে বাংলা সাহিত্যের আকাশ জুড়ে। কবির সৃজনশীল জীবনের সময়সীমা স্বল্পকালীন হলেও অনেক বেশি বিচিত্র তাঁর ব্যক্তি ও কর্মজীবন। একাধারে সাম্যের-মানবতার, প্রেমের-দ্রোহের ও বিদ্রোহের কবি কাজী নজরুল আমাদের জাতীয় চেতনার প্রতিচ্ছবি।’
কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বাংলাদেশ ন্যাপ ঢাকা মহানগর আয়োজিত সভায় সভাপতিত্ব করেন ন্যাপ নগর আহ্বায়ক সৈয়দ শাহজাহান সাজু। এতে ন্যাপ মহাসচিব এম গোলাম মোস্তফা ভুইয়াসহ দলের অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।
এদিকে বুধবার (২৫ মে) বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১১৭তম জন্মবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষে সারা দেশে বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়ে সামাজিক-রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো।
উল্লেখ্য, ১৯৯৯ সালের ২৫ মে (জ্যৈষ্ঠ ১১, ১৩০৬ বঙ্গাব্দ) ব্রিটিশশাসিত ভারতের অখণ্ড বঙ্গভূমির বর্ধমান জেলার চুরুলিয়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন বিশ্ব মানবতার দ্রোহের কবি কাজী নজরুল ইসলাম।