জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির বিজড়িত কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতের ঝাউবাগানটি ঘুর্ণিঝড় রোয়ানুর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। গত দুদিনের পূর্ণিমার জোয়ারে তিন শতাধিক ঝাউগাছ উপড়ে পড়েছে।
১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু কক্সবাজার সফরে এসে সৈকতের ঝাউবাগান সৃজনের নির্দেশ দিয়েছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখমুজিবুর রহমান। বঙ্গবন্ধুর সেই স্মৃতি বিজড়িত ঝাউবাগান পর্যটন নগরী কক্সবাজারেকে সামুদ্রিক ঝড়-ঝঞ্ঝার কবল থেকে রক্ষাকবচ কাজ করছে। পাশাপাশি পর্যটন শিল্প বিকাশের অন্যতম সহায়ক এবং সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও ভূমিকা রাখছে ঝাউবাগান। মাত্র দুদিনেই কয়েক শ’ঝাউগাছ সাগরে বিলীন হয়ে যাওয়ায় শহর রক্ষার ব্যাপারে উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন এলাকাবাসী।
বনবিভাগ সূত্র জানায়,‘জাতির জনকের স্মৃতি বিজড়িত সৈকতের এই ঝাউবাগান। ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু কক্সবাজার সফরে এসে সৈকতের এই ঝাউবাগান সৃজনের নির্দ্দেশ দিয়েছিলেন। জাতির জনকের একান্ত আগ্রহ ও তাঁর নির্দেশে কক্সবাজার সৈকতে কলাতলি থেকে উত্তরে নাজিরারটেক পর্যন্ত ৪ কিলোমিটার এলাকা জুড়ে ১০০ হেক্টর বালুচরে ঝাউবাগান সৃজন করা হয়।
সৈকতের মালিক হচ্ছেন জেলা প্রশাসন আর ঝাউবাগান সৃজন করেন বন বিভাগ। সামুদ্রিক ঝড়-ঝঞ্জার রক্ষাকবচ হিসাবে পরিচিত এই আকর্ষণীয় সৈকত ঝাউবিথী। একদিকে সাগর গ্রাস করছে অপরদিকে রাতে কাটা হয় পুরো গাছটি আর সকালে বালুচর থেকে তুলে ফেলা হয় গাছের গোড়ালিটিও। এভাবে গাছের গোড়ালি পর্যন্ত তুলে ফেলে নিশ্চিহ্ন করে ফেলা হয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, সৈকতের ডায়বেটিক পয়েন্ট, নাজিরারটেক, সুগন্ধা পয়েন্ট, শৈবাল, লাবণী, কলাতলী ও সী-ইন পয়েন্টসহ বিভিন্ন পয়েন্টে সাগরের বালিয়াড়িতে উপড়ে পড়ে আছে অসংখ্য ঝাউগাছ। রোয়ানুর তান্ডবে সাগরের পানির উচ্চতা বৃদ্ধি ও পূর্ণিমার প্রবল জোয়ারের পানির আঘাতে সৈকতের ঝাউগাছের গোড়া থেকে বালি সরে গিয়ে এসব গাছ উপড়ে গেছে বলে স্থানীয়দের ধারণা।
এছাড়া বর্ষা মওসুম আসার সাথে সাথেই সৈকতের ঝাউ বাগানের গাছ কাটা হচ্ছে ব্যাপকভাবে। এসময় গাছ কাটা গেলে ‘ঝড়ে পড়া’ বলে চালিয়ে দেওয়া যায়। এ সুযোগে গত ২/৩ দিনে কমপক্ষে শতাধিক ঝাউগাছ কেটে ফেলা হয়েছে। এ সময়ে বন কর্মীরা উদ্ধারও করেছে অর্ধ শতাধিক কাটা ঝাউ গাছ। প্রাকৃতিক দূর্যোগ আর মানব সৃষ্ট বিপর্যয় অব্যাহত থাকলে কক্সবাজার সৈকতে জাতির জনকের স্মৃতি বিজড়িত ঝাউ বাগানটির অস্তিত্ব নিয়েও আশংকা দেখা দিয়েছে।
একটি সূত্র জানিয়েছেন, সৈকতের এসব ঝাউবাগান এখন সী-বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটির আওতায় রয়েছে। পুরো ১২০কিলোমিটার অখন্ড বালিয়াড়ির নিয়ন্ত্রক কক্সবাজার বীচ ম্যানেজমেন্ট কমিটি। তাই এটি আজ দেশের পর্যটনের শ্রী বর্ধনে একটি অংশ হয়ে উঠেছে এই ঝাউবাগান। দৃশ্যত দু’টি অভিভাবক হয়ে উঠায় এসব ঝাউগাছের সঠিক পরিচর্যা হচ্ছে না। অযত্ন অবহেলায় অনেক গাছের গোড়া থেকে দুই-তিন ফুট পর্যন্ত বালি সরে গিয়ে শিকড় বেরিয়ে পড়েছে। তাই হালকা বাতাসেও উপড়ে পড়ছে অসহায় গাছগুলো।
কক্সবাজার রেঞ্জ কর্মকর্তা তাপস কুমার দেব বলেন, আমরা বন, পাহাড় ও ঝাউগাছ রক্ষায় কঠোর অবস্থানে আছি। বনকর্মীদের চেষ্টায় গাছগুলো এখনো টিকে আছে। কিন্তু স্থায়ী রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় প্রকৃতির কাছে (রোয়ানুর কাছে) শনিবার নতি স্বীকার করেছে শতাধিক গাছ। এরপরও আমাদের সিপিজি সদস্যরা গাছগুলো রক্ষার্থে চেষ্টা করেছে। কিন্তু সৈকতে উপড়ে পড়া কিছু ঝাউগাছ উদ্ধার করতে পারলেও বেশির ভাগ গাছ জোয়ারের পানিতে ভেসে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।
তিনি অত্যন্ত দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ঝাউবাগানের উত্তর প্রান্তের নাজিরারটেক ও সমিতিপাড়ার বির্স্তীর্ণ সৈকতের শতশত গাছ কেটে লোকজন জবরদখলপূর্বক কাঁচা ঘরবাড়ি নির্মাণ করছে। এসব দখলদারদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অনেক অবৈধ বসতি উচ্ছেদ করা হয়েছে।
সানবিডি/ঢাকা/শাহীন/আহো