ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন গতকাল বৃহস্পতিবার পবিত্র রমজানে প্রতি কেজি গরু ও খাসির মাংস কত দামে বিক্রি হবে তা নির্ধারণ করে দিয়েছে। মাংস ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে এই দাম ঠিক করা হয়েছে। অথচ ভোক্তাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা কোনো সংগঠন বা সাধারণ মানুষের কোনো প্রতিনিধিত্ব সেখানে ছিল না।
ভোক্তা অধিকার নিয়ে কাজ করা ব্যক্তিদের মতে এক মাস আগের দামের চেয়ে কেজিতে ৪০টাকা বাড়িয়ে গরুর মাংসের দাম নির্ধারণ করায় ব্যবসায়ীরা নানা অজুহাত তুলে দাম আরও বাড়িয়ে দেবে।
ভোক্তা স্বার্থ নিয়ে কাজ করা কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ‘এক মাস আগে ৩৮০ টাকা দামের গরুর মাংস ৪২০ টাকা নির্ধারণ করাটা অযৌক্তিক। এটা কোনোভাবেই ভোক্তার স্বার্থ সংরক্ষণ করে না। শুধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনা না করে এসব ক্ষেত্রে ক্রেতাদের বক্তব্য বিবেচনায় নেওয়া উচিত।’ তিনি বলেন, মাংসের যে দাম সিটি করপোরেশন নির্ধারণ করে দিয়েছে এটাও তারা ঠিক রাখতে পারবে কি না সেটাও সন্দেহ আছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান কার্যালয় নগর ভবনে মেয়র সাঈদ খোকনের সঙ্গে মাংস ব্যবসায়ীদের মতবিনিময় সভায় রমজানে মাংসের বিক্রয় মূল্য ঠিক করা হয়। তাতে প্রতি কেজি গরুর মাংস ৪২০ টাকা, মহিষ ৪০০ টাকা, খাসি ৫৭০ টাকা এবং ভেড়া ও বকরির মাংস ৪৭০ টাকায় বিক্রি হবে ঠিক করা হয় ।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা উত্তম কুমার বলেন, ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকে সর্বসম্মতিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রতি কেজি মাংসে ২০০ গ্রাম হাড় দেওয়া যাবে, তবে মাংস মানসম্পন্ন হতে হবে।
ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের খুচরা বাজারদরের প্রতিদিনের তালিকা করে। টিসিবির তালিকা অনুয়ায়ী, গত মাসের ২৬ তারিখে গরুর মাংসের দাম ছিল ৩৮০ টাকা। খাসির মাংসের দাম ছিল ৫০০টাকা। ২০১৫ সালের ২৬ মে গরুর মাংসের দাম ছিল ৩৫০টাকা। এক বছরের ব্যবধানে গরুর মাংসের দাম বেড়েছে ১৭ দশমিক ৮১ শতাংশ।
বাজার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজধানীর বাজারে গত এক বছর ধরেই ৩৮০ টাকা দামে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছিল। এপ্রিলের প্রথম দিন থেকে সরকার ঢাকার হাজারীবাগে কাঁচা চামড়া প্রবেশ করতে না দেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পরেই মূলত ব্যবসায়ীরা মাংসের দাম বাড়িয়ে দেন। মাংস ব্যবসায়ীরা দাবি করেন, প্রতিটি চামড়া দেড় থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হতো। ট্যানারিগুলোতে চামড়া বিক্রি করতে না পারায় তারা মাংসের দাম বাড়িয়েছেন।
বাংলাদেশ মাংস ব্যবসায়ী সমিতির মহাসচিব রবিউল আলম বলেন, ‘কয়েক দিন আগেও গরুর মাংস ৪০০-৪৫০টাকা আর খাসি ৬০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ভারতীয় গরুর সরবরাহ কম থাকায় এবং চামড়া বিক্রি করতে না পেরে ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন। এই অস্থিতিশীল বাজারকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য দাম ঠিক করে দেওয়া হয়েছে।’
যে কোনো নিত্যপণ্যের দাম বাড়লেই বিপাকে পড়েন সাধারণ ক্রেতারা। মাংসের লাগামহীন মূল্য বৃদ্ধিতে ক্ষুব্ধ কল্যাণপুর নতুন বাজারে বাজার করতে আসা । তিনি বলেন, ‘ব্যবসায়ীরা যে মূল্য ঠিক করতে বলল তাতেই ঠিক করে দিল। এর মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের অকারণে মূল্য বৃদ্ধিকে লাইসেন্স দেওয়া হল। সাধারণ মানুষের কথা কেউ চিন্তা করেন না।’
টিসিবির নিত্যপণ্যের তালিকা অনুযায়ী, ২০১৫ সালের ১ জানুয়ারি গরুর মাংসের দাম ছিল ২৮০টাকা। মাংস ব্যবসায়ীরা ভারতীয় গরুর সরবরাহ কম ও বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধের অজুহাতে সে সময় একলাফে মাংসের দাম কেজি প্রতি ১০০ টাকা বাড়িয়ে দেন। সে দাম আর কমেনি।