আইন না মানার অভিযোগ আকিজ তাকাফুলের বিরুদ্ধে, প্রত্যাখান কোম্পানির এমডির
::বিশেষ প্রতিনিধি আপডেট: ২০২৩-০৬-২১ ২০:৪৭:৩৮
নতুন প্রজন্মের বিমা কোম্পানি আকিজ তাকাফুল ইসলামী লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসির বিরুদ্ধে অভিযোগের শেষ নেই। অভিযোগের ভিত্তিতে কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ সংস্থা (আইডিআরএ)। সেখানে কিছু প্রমাণও মিলেছে। তবে কোম্পানির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, অভিযোগগুলো সঠিক নয়। খোদ আইডিআরএ চেয়াম্যান তাদের কার্যক্রম দেখে অভিভূত হয়েছেন।
সম্প্রতি বিমাকর্মী ও সমাজ সেবক দাবী করে সোহেল হাসান নামের একজন কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করার জন্য আইডিআরএ চেয়ারম্যানের কাছে চিঠি দিয়েছে। এই চিঠির কপি দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, আইডিআরএ সকল সদস্য, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, দূর্নীতি দমন কমিশন, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্সে অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্সে ফোরাম ও আকিজ গ্রুপে। তবে এর কোন ভিত্তি নেই বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তারা।
আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে, কোম্পানিটির বিরুদ্ধে তদন্ত কমিটি করে কয়েকটি বিষয়ে তুলে ধরা হয়েছে। বিষয়গুলো হলো-বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বীমা পলিসি চালু না করা, নিয়োগপত্র ছাড়াই চিপ অপারেটিং অফিসারের চাকরি, একই সাথে আকিজ গ্রুপে চাকরির অভিযোগ, মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার শিক্ষা সনদের সত্যতা নিয়ে অভিযোগ, কোম্পানির প্রথম বছরে অতিরিক্ত ও অস্বাভাবিক ব্যবস্থাপনা ব্যয়সহ বিভিন্ন অভিযোগ।
জানা গেছে, বঙ্গবন্ধুর সপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণ এবং বিমা খাতের অগ্রগতি এবং দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়নে বিমা কোম্পানিগুলো “বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা” পলিসি চালু করার জন্য আইডিআরএ থেকে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। একই সাথে সকল জীবন বিমা কোম্পানি/করপোরেশনাকে প্রকল্পটি চালু করে ব্যাপকভাবে বাজারজাতকরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়। এমনকি বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমা পরিকল্পটির বিক্রির তথ্য নির্ধারিত ছকে প্রতিমাসের ৭ তারিখের মধ্যে কর্তৃপক্ষকে প্রেরণ করার নির্দেশ দেয়া হয়।
বিমাকর্মী ও সমাজ সেবক দাবী করে সোহেল হাসানের জমা দেওয়া অভিযোগ পত্রে দাবি করা হয়, দেশের সকল বিমা প্রতিষ্ঠান সেই প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী “বঙ্গবন্ধু শিক্ষা বিমার চালু করলেও একমাত্র আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স পিএলসি এটি চালু করেনি।
অন্যদিকে, প্রতিষ্ঠানের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর এন্ড চিপ অপারেটিং অফিসার মাসুদুজ্জামান খান রিপন) এখনো নিয়োগপত্র ছাড়াই অবৈধভাবে চাকুরী করছেন। পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যানসহ একাধিক প্রভাবশালী পরিচালকাদের সঙ্গে তার বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। ক্ষমতার এমন অনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে তিনি দীর্ঘসময় নিয়াগপত্র ছাড়াই চাকুরী করছেন, বেতন ভাতা গ্রহণ করছেন। এছাড়াও তিনি বিমা প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি আকিজ গ্রুপেও চাকুরী করছেন। একইসাথে দুই প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন ভাতা, গাড়ি ব্যবহারসহ নানা অনৈতিক সুবিধা গ্রহণ করছেন। যা বিমা আইনের সুম্পষ্ট লংঘন।
এদিকে ব্যবসা শুরুর প্রথম বছরই আকিজ তাকাফুল লাইফ ইন্স্যুরেন্স অস্বাভাবিক ব্যয় করেছে। বিমা আইন লংঘন করে এখনো প্রতিষ্ঠানটি অতিরিক্ত এবং অস্বাভাবিক ব্যয় করে চলছে। আয়ের তুলনায় আকিজ তাকাফুল লাইফের যে ব্যয় হয়েছে তা অনেক বেশি।
কোম্পানির বক্তব্য: সকল অভিযোগ নিয়ে কোম্পানির সাথে কথা বলেছে সানবিডি। শুরুতে আকিজ তাকাফুল লাইফের চেয়ারম্যান এস কে শামীম উদ্দিন এর সাথে কথা বলার চেষ্টা করে এই প্রতিবেদক। তিনি কল রিসিভ না করে ম্যাসেজ দেওয়ার কথা বলেন। তবে ম্যাসেজ দেওয়া হলে তিনি আর উত্তর দেননি।
অন্যদিকে, কোম্পানির ভারপ্রাপ্ত মূখ্য নির্বাহী কর্মকতা আলমগীর চৌধুরী সানবিডিকে বলেন, যে সব অভিযোগ আমাদের বিরুদ্ধে আনা হয়েছে, তা সব মিথ্যা। আমরা আইডিআরএ এর সকল নিয়ম মেনে ব্যবসা পরিচালনা করছি।
যেসব কারণে বিমার প্রতি মানুষয়ের আস্থা কমেছে সেই বিষয়গুলোতে আমরা বেশি জোর দিচ্ছি। ভালো কাজ করছি বলে আমাদের পেছনে মানুষ লেগে গেছে। কারণ আমরা যেভাবে বিমা খাতকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছি তা অন্যরা পারছে না।
অতিরিক্ত ব্যয়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ২০২২ সালে আমাদের ব্যবস্থাপনা ব্যয় অনেক কমে গেছে। চলতি বছরের অনুমোদিত সীমার মধ্যেই ব্যবস্থাপনা ব্যয় থাকবে।
আইডিআরএর তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়ে তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তবে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবীমা আমরা চালু করেছি। এটা আমরা অবহেলা করছি এ তথ্য ঠিক নয়।
ডিএমডি ও চিফ অপারেটিং অফিসার মাসুদুজ্জামান খান রিপনের বিষয়ে তিনি বলেন, নিয়োগ না পেলে তিনি কীভাবে কোম্পানিতে কাজ করছেন? আমাদের এই অফিসে বসার জায়গা না হওয়ায় তিনিসহ আরও কয়েকজন কর্মী গ্রুপের অফিসে বসেন। এটাকে অন্যভাবে প্রচার করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্চুক কোম্পানির একজন পরিচালক বলেন, যেই সব অভিযোগ আনা হয়েছে সব মিথ্যা। তবে বাড়তি ব্যয়ের বিষয়টি স্বীকার করেছেন তিনি।
তিনি বলেন, আমরা ইতোমধ্যে গাজীপুর ও মুন্সিগঞ্জে বঙ্গবন্ধু শিক্ষাবীমা নিয়ে ব্যপকভাবে কাজ করছি। এমডির শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে যেই প্রশ্ন তোলা হয়েছে তা সঠিক নয়।
এএ