পলাশীর আম্রকাননে যেই স্বাধীনতার সূর্য অস্তমিত হয়েছিল, আওয়ামী লীগের হাতে সেটি ফের উদিত হয় বলে মন্তব্য করেছেন দলটির সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষের অধিকার আদায়ে কাজ করেছে। যখন সংগঠনটি হয়, তখনো আমাদের নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অংশ নেওয়ার দায়ে জেলে ছিলেন।
শুক্রবার (২৩ জুন) আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাই হয়েছিল এদেশের মানুষের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক মুক্তির জন্য। আওয়ামী লীগ এদেশের মানুষকে মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার এনে দিয়েছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, আমরা বাঙালি শিক্ষা-দীক্ষা সবদিক থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানিদের চেয়ে অগ্রগামী ছিলাম। সবসময় আমাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হতো। ৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে জয়লাভ করে। কিন্তু বেশিদিন প্রাদেশিক ক্ষমতায় থাকতে পারেনি। যে অল্প কয়েকদিন ক্ষমতায় ছিল সে সময়ের মধ্যে শেরা বাংলা যে সরকার গঠন করেছিলেন তার মন্ত্রিসভায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব একজন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, মিরপুর সিরামিকের কথা আপনারা জানেন, সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ করার পরামর্শ তখন কাবানি গ্রুপকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব দিয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ৫৭ সালে মন্ত্রী থাকা অবস্থায় সিনেমা শিল্প নিয়ে আইন পার্লামেন্টে তোলেন এবং সেটা পাস করান। ঢাকা বিদ্যুৎ বোর্ড, ঢাকা ওয়াসা এবং তেজগাঁও শিল্প নগর সবই কিন্তু আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় এসেছে তখন হয়েছে। তার বাদে কিছু হয়নি। শুধু তাই নয়, ২১ শে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস হিসেবে ঘোষণা দেওয়া এবং শহীদ মিনার নির্মাণ করার প্রকল্প আওয়ামী লীগই শুরু করেছিল। আমরা যখন ১৯৯৬ সালে সরকার গঠন করি তখন ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্ব স্বীকৃত অর্জন করে।
তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বাঙালির মুক্তির ছয় দফা দেন। ছয় দফার ভিত্তিতে ৭০ এর নির্বাচন হয়। গোটা পাকিস্তানে আওয়ামী লীগ জয়লাভ করে। বঙ্গবন্ধুর ডাকে এদেশের মানুষ অস্ত্র তুলে নেয়, যুদ্ধে আমরা বিজয় অর্জন করি। বাঙালি জাতির বিজয় জাতি হিসেবে বিশ্ব দরবারে মর্যাদা পায়। এই সংগঠন বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মর্যাদা এনে দেয়। একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশ তিনি গড়ে দিয়ে যান। অতি অল্প সময়ের মধ্যে বিধ্বস্ত বাংলাদেশ গড়া কঠিন কাজ ছিল।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একুশ বছর পর আওয়ামী লীগ যখন ক্ষমতায় আসে, তখন দেশের কী অবস্থা ছিলো? রোগে চিকিৎসা নেই, ঘরে খাবার নেই, থাকার জায়গা নেই। এই দেশ তো আমার বাবা চায়নি। কিন্তু ২১ বছর যারা অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে তারা জনগণের কথা চিন্তা না করে নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় এসে মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করেছে। জনগণের সেবক হতে এসেছি।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, দলের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মওলানা ভাসানী, সাধারণ সম্পাদক শামসুল হক, গণতন্ত্রের মানসপুত্র হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীসহ যারা বিভিন্ন সময়ে আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিয়েছেন, তাদের স্মরণ করেন শেখ হাসিনা।
আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী আলোচনা সভায় আরও বক্তব্য রাখেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের, উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য তোফায়েল আহমেদ, সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, অ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, সদস্য বেগম আক্তার জাহান, মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু আহমেদ মন্নাফী, ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ বজলুর রহমান প্রমুখ।
এএ