চুড়ান্ত হচ্ছে ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন্স

::বিশেষ প্রতিনিধি আপডেট: ২০২৩-০৬-২৫ ১০:০৩:৫৮


ব্যাংকের মাধ্যমে বিমাপণ্য বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। ফলে সারাদেশে ব্যাংকের শাখা নেটওয়ার্কের মাধ্যমে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের মানুষও বিমাপণ্য কিনে নিজেদের আর্থিকভাবে সুরক্ষিত রাখতে পারবেন। এ জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে বিমাপণ্য বিক্রির একটি বিকল্প বিক্রয় কৌশল প্রণয়নের নির্দেশিকা তৈরি করছে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। এই নির্দেশিকা চাড়ান্ত করতে বৈঠক করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ।

আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব শেখ মো. সলিম উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ছাড়াও ব্যাংক মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকস (বিএবি) এবং বেসরকারি ব্যাংক ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সংগঠন অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বিষয়ে খাত সংশ্লিষ্ট মনে করেন, ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন্স চুড়ান্ত হলে বিমার সম্ভানাকে কাজে লাগাতে পারবে সরকার। এর মধ্যমে দেশের অর্থনীতির ভিত্তি আরও মজবুত করা যাবে। এতে করে কোন মানুষ ক্ষতিগ্রস্থ হবে না।

ব্যাংকাসুরেন্স কি? ব্যাংকাসুরেন্স হলো জীবন-বীমা এবং আর্থিক সুরক্ষা পণ্য বিক্রয় করার জন্য ব্যাংক এবং জীবন বীমা সংস্থার মধ্যে একটি অংশীদারিত্ব। এর মাধ্যমে জীবন বীমা পণ্যগুলোর সাথে ব্যাংকিং পণ্যগুলোকে একত্র করার বিশাল সুযোগ রয়েছে যা ব্যাংকিং পণ্যগুলোকে আরও আকর্ষণীয় এবং প্রাসঙ্গিক করে তুলতে সাহায্য করে।

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপ সচিব ও বিমার দায়িত্বে থাকা জাহিদ হোসেন বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকাসুরেন্স ব্যবস্থায় ব্যাংক ও বিমা কোম্পানির মধ্যে সম্পাদিতব্য এমওইউ এর আওতায় ব্যাংক তাদের গ্রাহকদের মধ্যে বিমা কোম্পানির পক্ষে বীমাপণ্যসমূহ বিক্রয় করবে। ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ধারা ৭ (ল) এবং বিমা আইন, ২০১০ এর ধারা ১২৫ এর বিধান মোতাবেক ব্যাংকাসুরেন্স ব্যবস্থাকে ব্যাংকের একটি নতুন ব্যবসা হিসেবে প্রচলন করার সুযোগ রয়েছে। দেশে ব্যাংকাসুরেন্স ব্যবস্থা প্রবর্তনের ব্যবস্থা যাচাইয়ের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ‘কারিগরি প্রতিবেদন’ প্রস্তুতপূর্বক একটি সুপারিশমালা প্রণীত হয়েছে। কারিগরি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে ব্যাংকগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন্স এর খসড়া এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক বিমা কোম্পানিগুলোর জন্য ‘কর্পোরেট এজেন্ট ব্যাংকাসুরেন্স নির্দেশিকা’এর খসড়া প্রস্তুত করে তা অনুমোদনের জন্য এ বিভাগে প্রেরণ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের যুগ্ম পরিচালক আশফাকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তনের লক্ষ্যে গঠিত টেকনিক্যাল কমিটির প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করেই ব্যাংকসমূহের জন্য ‘ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন্স’ প্রস্তুত করা হয়েছে। তিনি বলেন, ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশে ব্যাংক এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ পৃথক পৃথক গাইডলাইন্স তৈরি করেছে। এটি দ্রুত বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণের জন্য বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ এবং বাংলাদেশে ব্যাংক একত্রিতভাবে স্ব স্ব বোর্ডের অনুমোদন গ্রহণের মাধ্যমে তা বাস্তবায়ন করার বিষয়ে মত ব্যক্ত করেন।

বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান বলেন, বাংলাদেশে ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন্সে ‘যৌথ নিয়ন্ত্রণ কমিটি’ গঠনের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে আইডিআরএ-এর প্রতিনিধিকে অন্তর্ভূক্ত রাখা হয়েছে। উক্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি আইডিআরএ-এর মাধ্যমে করা যেতে পারে। তবে বিমা আইন ২০১০ এর কোন ব্যতয় না ঘটে সেদিকে নজর রাখতে হবে। এজেন্ট নিয়োগ কার্যক্রম বিমা আইন ২০১০ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে থাকে।

বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স অ্যাসােসিয়েশনের প্রথম ভাইস প্রেসিডেন্ট বলেন, ব্যাংকাসুরেন্স পদ্ধতিটি ব্যাংকের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে বিমা কোম্পানিগুলোকেই করতে হবে। তিনি বলেন, যেকোন ব্যাংক বিমা কোম্পানির পণ্য বিক্রয় করতে পারবে। এজন্য গ্রাহকদের যথাসময়ে সার্ভস দেয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। কোন গ্রাহকের মৃত্যু হলে সেক্ষেত্রে প্রমাণক দাখিলের মাধ্যমে দাবিটি পরিশোধের ব্যবস্থা করতে হবে।

বৈঠকের সিদ্ধান্ত:

বিমা আইন ২০১০ এর ধারা ১২৫ এর পরিবর্তে ধারা ১২৪ প্রতিস্থাপিত হবে। ধারা ১২৫(২) বাদ যাবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন্স এর অনুচ্ছেদ ৩(চ) এ বর্ণিত আন্ডাররাইটিং ব্যবস্থাপনা অংশটুকু বাদ যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন্স এর অনুচ্ছেদ ৪(ঘ) এ উল্লেখিত মোট শব্দকে নেট শব্দ দ্বারা প্রতিস্থাপন করতে হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন্স এর অনুচ্ছেদ ২০ (যৌথ নিয়ন্ত্রণ কমিটি) বাদ দিতে হবে এবং সে মোতাবেক অনুচ্ছেদ ১৯ এ প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে হবে।

দেশে ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তনের লক্ষ্যে ব্যাংকগুলোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক প্রণীত ব্যাংকাসুরেন্স গাইডলাইন্স এবং বিমা কর্পোরেশন/কোম্পানিগুলোর জন্য বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত কর্পোরেট এজেন্ট (ব্যাংকাসুরেন্স) নির্দেশিকা আংশিক সংশোধনপূর্বক আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগে দাখিল করতে হবে।

দেশে ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তনের নিমিত্ত বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রণীত গাইডলাইন্স দুটি অনুমোদনের জন্য অর্থমন্ত্রীর সদয় সম্মতি গ্রহণ করতে হবে।

ব্যাংক ব্যবস্থার মাধ্যমে বিমা পণ্যসমূহ বাজারজাতকরণের লক্ষ্যে দেশে ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তনের নিমিত্ত বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃক ব্যাংক কোম্পানি আইন ১৯৯১ এর ধারা ৭(ল) এর বিধান মোতাবেক প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ব্যাংকাসুরেন্স প্রবর্তনের প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে।

পুঁজিবাজারের সব খবর পেতে জয়েন করুন 

Sunbd Newsক্যাপিটাল নিউজক্যাপিটাল ভিউজস্টক নিউজশেয়ারবাজারের খবরা-খবর